শিরোনাম
রবিবার, ১৮ অক্টোবর, ২০১৫ ০০:০০ টা

বিশ্ববাজারে ঝুঁকিতে তৈরি পোশাক

সংকট উত্তরণের পথ খুঁজছি : বিজিএমইএ

জিন্নাতুন নূর

বিশ্ববাজারে ঝুঁকিতে তৈরি পোশাক

বিশ্ববাজারে ঝুঁকির মধ্যে পড়তে যাচ্ছে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাত। দুই বিদেশি নাগরিক হত্যার ঘটনায় এরই মধ্যে বিভিন্ন বিদেশি ক্রেতাপ্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা বাংলাদেশে তাদের পূর্বনির্ধারিত সফর বাতিল করে দিয়েছেন। অনেক ক্রেতাপ্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা কারখানা সফরও বন্ধ রেখেছেন। এমনকি ক্রেতাপ্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষ থেকে তাদের প্রতিনিধিদের খুব প্রয়োজন না থাকলে বাংলাদেশে সফর স্থগিত করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এরই মধ্যে নিরাপত্তার কারণে ঢাকা সফর বাতিল করেছে উল্লেখযোগ্য দুই আন্তর্জাতিক তৈরি পোশাক ক্রেতাপ্রতিষ্ঠান। এগুলো হচ্ছে এইচঅ্যান্ডএম ও গ্যাপ। ১৫ অক্টোবর বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এমনটিই উল্লেখ করা হয়। যদিও পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ সূত্রে জানা যায়, প্রতিষ্ঠান দুটির মধ্যে এইচঅ্যান্ডএমের ম্যানেজিং ডিরেক্টর গ্লোবাল প্রোডাকশন সম্প্রতি বাংলাদেশ সফরে এসেছেন, তবে গ্যাপের ব্যাপারে তারা কোনো তথ্য দেয়নি। কিন্তু এইচঅ্যান্ডএম ও গ্যাপ ছাড়াও অন্যান্য আন্তর্জাতিক ক্রেতাপ্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরাও নিরাপত্তার কারণে বিগত কয়েক  দিন বাংলাদেশে তাদের সফর বাতিল করছেন বলে জানান বিজিএমইএর সদস্যভুক্ত কারখানার মালিকরা। এরই মধ্যে বিজিএমইএর পক্ষ থেকে দেশের পোশাক কারখানাগুলোতে বিদেশি কর্মচারীদের নিরাপত্তার জন্য তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। পাশাপাশি কারখানার মালিকরা সরকারের কাছে এ খাতে কর্মরত বিদেশিদের নিরাপত্তা দিতে সাহায্য চেয়েছেন। অথচ কারখানার মালিকরা জানিয়েছেন, আসছে হেমন্ত মৌসুমের ক্রয় আদেশ দেওয়ার জন্য এখন ‘পিক আওয়ার’। আর এই সময় ক্রেতাদের সফর স্থগিত হওয়ার অর্থ হচ্ছে এ খাতে বিপুল পরিমাণ ক্ষতি। এ ছাড়া তারা বলছেন, আর দুই মাস বাদেই বড়দিনের মৌসুম। এই সময় হঠাৎ এ ধরনের ঘটনা অনাকাক্সিক্ষত। সাম্প্রতিক ঘটনায় কম করে হলেও অর্ধশতাধিক ক্রেতাপ্রতিষ্ঠান উদ্বেগ জানিয়েছে। এর মধ্যে সুইডিশ ক্রেতাপ্রতিষ্ঠান এইচঅ্যান্ডএমের কর্মিসংখ্যা ৬০০, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যকই বিদেশি। বিজিএমইএর সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সম্প্রতি এইচঅ্যান্ডএমের ম্যানেজিং ডিরেক্টর গ্লোবাল প্রোডাকশন বাংলাদেশে সফর করে গিয়েছেন। তবে গ্যাপের প্রতিনিধিদের ব্যাপারে তিনি কিছু জানাতে পারেননি। তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশ যেহেতু একটি ‘মডারেট মুসলিম কান্ট্রি’, এ জন্য এখানে পরপর দুজন বিদেশি হত্যার ঘটনায় ‘ওভার রিঅ্যাকশন’ তৈরি হয়েছে। অথচ অস্ট্রেলিয়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও এ ধরনের ঘটনা প্রায়ই ঘটছে। আমি মনে করি না যে এ ঘটনায় আমাদের পোশাকশিল্প ঝুঁকির মধ্যে আছে। কারণ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আমাদের চার ধাপের সতর্কতার কথা জানানো হলেও আমরা দ্বিতীয় ধাপে আছি। সে ক্ষেত্রে চিন্তার কারণ নেই।’ তবে তিনি এ কথা স্বীকার করেন যে, সম্প্রতি কয়েকজন ক্রেতা সফর বাতিল না করলেও কারখানা সফরে যেতে চাননি। আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড সিয়ার্স, লবলোস এবং পেরি এলিসের কাছে পোশাক রপ্তানিকারী বিজিএমইএর সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট ও ক্ল্যাসিক গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শহিদুল্লাহ আজিম বলেন, ‘১২ অক্টোবর যুক্তরাষ্ট্রের এক ক্রেতার আরও ১০ জন কারখানা মালিকের সঙ্গে বাংলাদেশে বৈঠকে বসার কথা ছিল। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতির কারণে সেই ক্রেতা তার সফর স্থগিত করেছেন। এ ধরনের ঘটনা বহির্বিশ্বে বাংলাদেশ বিষয়ে ভুল বার্তা নিয়ে যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের এক ক্রেতা আমাদের জন্য বড় অর্ডার নিয়ে আসছিলেন। কিন্তু এ পরিস্থিতিতে তিনি তার সফর স্থগিত করেছেন। আমাদের তিনি দুবাই যেতে বলেছিলেন। কিন্তু আমরা আপাতত বৈঠকটি স্থগিত করেছি।’

পোশাক মালিকদের আরেক সংগঠন বিকেএমইএর সহ-সভাপতি আসলাম সানি বলেন, তার কারখানায়ও ফ্রান্স থেকে এক বিদেশি ক্রেতার ক্রয় আদেশ নিয়ে আসার কথা ছিল। কিন্তু নিরাপত্তার কারণে সেই ক্রেতা তার সফর স্থগিত করেছেন। পোশাক মালিকরা জানান, এ অবস্থা অন্য মালিকদেরও। নিরাপত্তার কারণে তাদের সঙ্গে পূর্বনির্ধারিত বৈঠকগুলোও বাতিল করা হচ্ছে। রয়টার্সের প্রতিবেদনে এইচঅ্যান্ডএমের মুখপাত্র অ্যানা এরিকসন জানান, বাংলাদেশের পরিস্থিতি তারা যথাযথভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন। এ জন্য যথাযথ নিরাপত্তাও গ্রহণ করছেন। আর মার্কস অ্যান্ড স্পেনসার জানায়, কয়েক সপ্তাহ আগে তাদের প্রতিষ্ঠানও সাত দিনের জন্য বাংলাদেশ সফর বন্ধ করে দেয়।

এ ছাড়া টেসকো জানায়, তারা সফর বন্ধ না করলেও তাদের কর্মীদের সতর্ক থাকতে এবং সাবধানে চলাফেরা করতে বলেছে। ইউনিকলো ব্র্যান্ডের মালিক প্রতিষ্ঠান জাপানের ফাস্ট রিটেইলিং জানিয়েছে, তারা এ মাসে জাপানিজ কর্মীদের বাংলাদেশ সফর বাতিল করেছেন। একই সঙ্গে প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের না হতে পরামর্শ দিয়েছেন।

এদিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নির্দেশে বিজিএমইএর উদ্যোগে দেশের পোশাকশিল্প খাতে কর্মরত বিদেশিদের তালিকা তৈরির কাজ চলছে। দেশের বিভিন্ন শিল্পাঞ্চলে কর্মরত বিদেশিদের নিরাপত্তা জোরদারের লক্ষ্যে এ তালিকা তৈরি হচ্ছে। এ বিষয়ে এরই মধ্যে বিজিএমইএর সদস্য কারখানাগুলোকে জানানো হয়েছে। বিভিন্ন তথ্যের মধ্যে কারখানাগুলো বিদেশি কর্মকর্তাদের নাম-ঠিকানা, পাসপোর্ট নম্বর, মোবাইল নম্বর, আবাসিক ঠিকানা, কর্মরত প্রতিষ্ঠানের নাম, বাংলাদেশে আগমনের তারিখ ইত্যাদি তথ্য আকারে জানতে চাওয়া হয়েছে। পোশাক খাতে কর্মরত বিদেশিদের বেশির ভাগই টেকনিশিয়ান হিসেবে কর্মরত আছেন। জায়ান্ট অ্যাপারেলস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বিজিএমইএর সহ-সভাপতি ফারুক হাসান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বেশ কয়েকজন ক্রেতা বর্তমান ঘটনার কারণে নিজেদের সফর পিছিয়ে দিয়েছেন। আর দুটি ক্রেতাপ্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের বাইরে বৈঠক করার জন্য পোশাক মালিকদের অনুরোধ করেছেন। বিজিএমইএর আরেক সহ-সভাপতি এস এম মান্নান কচি বলেন, ‘আমরা ক্রেতাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য সরকারের সাহায্য চাইব। এ ছাড়া এ ধরনের ঘটনা যেহেতু আগে ঘটেনি এ জন্য ক্রেতারা যাতে এখনই কোনো সিদ্ধান্ত না নেন এ নিয়ে তাদের সঙ্গে আলোচনা করব।’

 

 

সর্বশেষ খবর