রবিবার, ১৮ অক্টোবর, ২০১৫ ০০:০০ টা

যে ধর্ম মানে না দেশটা তারও

যে ধর্ম মানে না দেশটা তারও

আইন কমিশনের চেয়ারম্যান এবং সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক বলেছেন, ‘যে উদ্দেশ্য নিয়ে আমাদের ৩০ লাখ শহীদ জীবন দিয়েছেন, চার লাখ মা-বোন তাদের সম্ভ্রম হারিয়েছেন, সেই শোষণমুক্ত বাংলাদেশ গঠনের জন্য আমাদের কাজ করতে হবে। আমাদের ধর্মান্ধতায় থাকলে হবে না। এ দেশ সবার। সবার কথা শুনতে হবে। এখানে সবাই যার যার ধর্ম পালন করতে পারবে। এমনকি  যিনি ধর্ম মানেন না, দেশটি কিন্তু তারও। মহান আল্লাহ কিন্তু তাকেও খাওয়াচ্ছেন, পড়াচ্ছেন সে কথাগুলো আমাদের মনে রাখতে হবে।’ গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) মিলনায়তনে সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম-মুক্তিযুদ্ধ ’৭১-এর চতুর্থ জাতীয় সম্মেলনে বিচারপতি খায়রুল হক এসব কথা বলেন। এর আগে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে সম্মেলনের উদ্বোধন করা হয়। পরে জাতীয় সংগীত, পবিত্র ধর্মগ্রন্থ থেকে পাঠ, উদ্বোধনী সংগীত ও শহীদদের স্মরণে শোক প্রস্তাবের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়। সম্মেলনে দেশের ৫৮টি জেলা, বিভাগ ও প্রতিষ্ঠানের ৬৮টি কমিটির ৭০০ প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করেন। সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন সংগঠনের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) কে এম সফিউল্লাহ বীর উত্তম, মহাসচিব সাংবাদিক হারুন হাবিব, পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদের সভাপতি বিচারপতি এ এফ এম মেজবাহ উদ্দীন, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ, ইসলামী চিন্তাবিদ ও ইক্বরা সভাপতি মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ, সংগঠনের ভাইস চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল আবু ওসমান চৌধুরী, ঢাবির উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক নাসরিন আহমাদ প্রমুখ।

এ বি এম খায়রুল হক বলেন, ‘শুধু যুদ্ধাপরাধী নয়, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে যে কোনো অপরাধীরই শাস্তি হওয়া বাঞ্ছনীয়। আইনের ছাত্র হিসেবে আমি বৈশ্বিক পরিস্থিতিতেই এটি বিবেচনা করি। আমাদের মুক্তিযুদ্ধ এখনো চলমান। যে উদ্দেশ্য নিয়ে আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম, তা শুধু বই বা সংবিধানেই রয়ে গেছে। এর বাস্তবায়ন আমাদের করতেই হবে।’ সাবেক এই প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘হাইকোর্টের একটা রায় ছিল, ১৬ ডিসেম্বর যে জায়গায় পাকিস্তানি সেনারা আত্মসমর্পণ করেছিল, সেই জায়গাটি সংরক্ষণের জন্য। সেখানে স্বাধীনতা চত্বর তৈরি করার নির্দেশনা ছিল। কিন্তু হাইকোর্টের সে রায়টি এখনো বাস্তবায়ন করা হয়নি। আপনারা যারা মুক্তিযোদ্ধা আছেন, এ কাজ বাস্তবায়ন করতে একসঙ্গে কাজ করবেন।’ খায়রুল হক বলেন, ‘যে যখন পারে তখনই বাঙালি জাতিকে ছোট করার চেষ্টা করে। কিন্তু বাঙালিরাই দুটি রাষ্ট্র সৃষ্টি করেছে। ১৯৪৭ সালের পাকিস্তান কিন্তু বাঙালিরাই সৃষ্টি করেছিল, যা আমরা অনেকেই ভুলে গেছি। এ ছাড়া পরবর্তীকালে এ জাতি তৈরি করেছে বাংলাদেশ। ১৯৬৯ সালের ৫ ডিসেম্বর বঙ্গবন্ধু একটি অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, পূর্ব পাকিস্তানের নতুন নাম হবে বাংলাদেশ। তখনো কিন্তু আমরা বুঝতে পারিনি তার মনে কী কাজ করছিল। তিনি তখন থেকেই দেশকে স্বাধীন করার জন্য কাজ শুরু করেছিলেন। এখানেই একজন রাজনীতিবিদ ও স্টেটসম্যানের মধ্যে পার্থক্য। একজন রাজনীতিবিদ জনগণের বক্তব্যকে তুলে ধরেন, আর একজন স্টেটসম্যান তার মতকে জনগণের মধ্য দিয়ে তুলে ধরেন। নিজের মতাদর্শকে জনগণের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে পারেন। সমগ্র বাংলাদেশের স্বাধীনতায় বাঙালি জাতির আলাদা কৃষ্টি-সংস্কৃতি থাকার বিষয়টি বঙ্গবন্ধুই আমাদের শিখিয়েছেন। এ কারণেই তিনি সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি।’ সম্মেলনের দ্বিতীয় পর্বে সংগঠনটির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এতে সেক্টর কমান্ডার মেজর জেনারেল (অব.) কে এম সফিউল্লাহ আবারও চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। কমিটির সভাপতিমণ্ডলীতে রয়েছেন সেক্টর কমান্ডার মেজর জেনারেল (অব.) সি আর দত্ত বীর উত্তম, লে. কর্নেল (অব.) আবু ওসমান চৌধুরী ও মেজর (অব.) রফিকুল ইসলাম বীর উত্তম। এ ছাড়া লেখক ও সাংবাদিক মুক্তিযোদ্ধা হারুন হাবিব আবারও মহাসচিব নির্বাচিত হন।-বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর