কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে বাস থেকে নামিয়ে এক হেলপারকে পিটিয়ে ও গাড়িচাপা দিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় সন্দেহভাজন তিন ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে পুলিশ। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার চিওড়া এলাকায় গতকাল এ ঘটনা ঘটে।
পুলিশ, ওই বাসের চালক শরিফুল ইসলাম, সুপারভাইজার শাহিন মিয়া ও স্থানীয় সূত্র জানায়, নেত্রকোনার কাওড়াকান্দি থেকে ৪২ জন যাত্রী নিয়ে ছেড়ে আসা বিশাল পরিবহনের নৈশকোচ (কিশোরগঞ্জ-ব-১১-০০৪৩) বাসটি গতকাল ভোরে মহাসড়কের চৌদ্দগ্রাম উপজেলার চিওড়া এলাকায় পৌঁছে কাউন্টারে যাত্রী নামাচ্ছিল। এ সময় স্থানীয় হালদারমুড়া গ্রামের আবু সাঈদের ছেলে সবুজের নেতৃত্বে একটি দল রড ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে ওই বাসটির চারপাশ ঘিরে চালক, সুপারভাইজার ও হেলপারকে বেদম পেটাতে থাকে। এক পর্যায়ে হামলাকারীরা ওই পরিবহনের হেলপার ময়মনসিংহ সদর উপজেলার ভাটিবাররা শিকারিকান্দা গ্রামের মুকবুল হোসেনের ছেলে আজহারুল ইসলামকে (২৫) বাস থেকে নামিয়ে পার্শ্ববর্তী সায়মন হোটেলের সামনে নিয়ে যায়। ওই স্থানে হামলাকারীদের পিটুনিতে হেলপার আজহার জ্ঞান হারিয়ে ফেললে তার মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য সিএনজিচালিত আটোরিকশা দিয়ে তার শরীরের ওপর কয়েক দফা চাপা দেওয়া হয়। হামলাকারীরা আজহারের অচেতন দেহ পার্শ্ববর্তী সুজাতপুর এলাকায় সানমুন নামের অপর একটি হোটেলের সামনে ফেলে রাখে। পরে চালক ও সুপারভাইজার সানমুন হোটেলের সামনে থেকে আজহারকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় উদ্ধার করে ফেনীর একটি হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানকার চিকিৎসকরা তাকে ঢাকা প্রেরণ করে। ঢাকা নেওয়ার পথে মহাসড়কের চৌদ্দগ্রাম এলাকায় তার মৃত্যু হয়। এদিকে এ ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ আজহারুলের লাশ থানায় নিয়ে আসে। পরে জড়িত সন্দেহে জিয়া, ইমাম হোসেন ওরফে নয়ন ও ভুট্টু নামের তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে পুলিশ। ওই বাসের চালক শরিফুল ইসলাম জানান, কিছুদিন আগে সবুজ নামের স্থানীয় এক যুবক মহাসড়কে সাইকেল ফেলে ব্যারিকেড দিয়ে বিশাল পরিবহনের অপর একটি বাস আটক করার চেষ্টা করে। তখন ওই বাসের চালক সাইকেলটি চাপা দিয়ে চলে যায়। এ ঘটনার জের ধরে সবুজের নেতৃত্বে কয়েক যুবক চিওড়া রাস্তার মাথার ওই পরিবহনের কাউন্টারে হামলা চালায়। পরে স্থানীয় লোকজন সাইকেলের ক্ষতিপূরণ হিসেবে পাঁচ হাজার টাকা পরিশোধের শর্তে এ ঘটনার মীমাংসা করে দেন। টাকা পরিশোধের নির্ধারিত সময়ের দুদিন আগেই তারা সাইকেলচাপা দেওয়া বাস সন্দেহে এ হামলা করে হেলপার আজহারকে হত্যা করেছে। অন্যদিকে স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, সবুজ বিশাল পরিবহনের একটি বাসে ঢাকা থেকে আসার পথে ভাড়া নিয়ে কথাকাটাকাটি হয়। এর জের ধরে সে বিশাল পরিবহনের বাসে হামলা চালায়। এ ব্যাপারে চৌদ্দগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ ফরহাদ জানান, নৈশকোচের হেলপারকে হত্যার রহস্য উদ্ঘাটনের জন্য তিন যুবককে আটক করা হয়েছে। মামলার প্রস্তুতি চলছে। এ ছাড়া হত্যাকারীদের আটকের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।