শনিবার, ২৪ অক্টোবর, ২০১৫ ০০:০০ টা

পবিত্র আশুরা আজ

নিজস্ব প্রতিবেদক

পবিত্র আশুরা আজ

আজ ১০ মহররম পবিত্র আশুরা। সারা বিশ্বের ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের কাছে আজকের দিনটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যময় এক দিন। এই দিনেই ঐতিহাসিক কারবালা প্রান্তরে প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর দৌহিত্র ইমাম হোসাইন (রা.) সপরিবারে মর্মান্তিকভাবে শাহাদাত বরণ করেন। এ ঘটনা দিনটিকে দিয়েছে শোকাবহ বেদনার বিশেষ মাত্রা। এ উপলক্ষে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা দুই দিন রোজা পালনসহ নফল ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে দিনটি পালন করে থাকেন। বিশ্বের অন্যান্য মুসলিম দেশের মতো বাংলাদেশেও যথাযোগ্য মর্যাদা ও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের সঙ্গে দিনটি পালনে নানা কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। আশুরা উপলক্ষে বাংলাদেশে আজ সরকারি ছুটি। বিভিন্ন ধর্মীয় ঘটনার কারণে সব আসমানি কিতাবের অনুসারীদের কাছে ১০ মহররম বিশেষভাবে মহিমান্বিত। তবে মুসলমানরা বিশেষ করে শিয়া সম্প্রদায় দিনটিকে শোক ও মার্সিয়া দিবস হিসেবে পালন করে আসছে। হিজরি ৬১ সালের ১০ মহররম কারবালা প্রান্তরে ইসলামের সুমহান আদর্শের পতাকা সমুন্নত রাখতে শাহাদাত বরণ করেন হজরত ইমাম হোসাইন (রা.)। কোনো ধরনের জুলুম ও অত্যাচারের কাছে নতি স্বীকার না করে তিনি উম্মতে মোহাম্মাদির জন্য দৃষ্টান্ত প্রতিষ্ঠা করে যান। ইতিহাসের বর্ণনা অনুযায়ী, বর্তমান ইরাকের কুফা নগরের কাছে ফোরাত নদীর তীরে কারবালা প্রান্তরে অবরুদ্ধ ইমাম হোসাইনকে (রা.) নিজ শিশুপুত্রের মুখে এক আজলা পানি তুলে দেওয়ার জন্য লড়াই করতে হয়। কিন্তু পানি নিয়ে তিনি সন্তানের কাছে পৌঁছার আগেই এজিদ বাহিনী পেছন থেকে তীর ও বর্শা ছুড়ে তাকে নির্মমভাবে হত্যা করে। এর আগে কুফাবাসীর দাওয়াতে ইমাম হোসাইন (রা.)-এর কাফেলা পথ ভুল করে কারবালায় পৌঁছলে স্ত্রী-পুত্র-পরিজনসহ এজিদ বাহিনীর হাতে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন। ১০ দিন ধরে অবরোধ করে রাখার পর তারা ইমাম হোসাইনকে এজিদের হাতে বাইয়্যাত গ্রহণের জন্য চাপ দেয়। কিন্তু তিনি বেনামাজি, মদ্যপ ও ধর্ম-কর্মের বিষয়ে উদাসীন এজিদের ইমামত স্বীকার করে বাইয়্যাত গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানান। এদিকে পানির অভাবে কাফেলার নারী ও শিশুরা কাতরাতে থাকলে তিনি পানি সংগ্রহের জন্য বের হন এবং শত্র“ বাহিনীর সঙ্গে লড়াই করে ফোরাত তীরে পৌঁছান। কিন্তু পানি নিয়ে তিনি আর তাঁবুতে ফিরে আসতে পারেননি। শিশুপুত্রের জন্য পানি সংগ্রহ করে ফেরার পথে তিনি প্রথমে আহত হন। পরে এজিদের সেনাপতি সিমার গলায় ছুড়ি চালিয়ে নিষ্ঠুরভাবে প্রিয় নবীর দৌহিত্রকে হত্যা করে। আর এভাবেই ইমাম হোসাইন (রা.) মুসলিম জাতির সামনে জুলুম ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে ইসলামের সুমহান আদর্শের পতাকা সমুন্নত রাখার দৃষ্টান্ত প্রতিষ্ঠা করে যান। এই শোকাবহ ঘটনার বাইরে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা বিশ্বাস করেন, ১০ মহররম আল্লাহ রাব্বুল আলামিন পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন এবং এই দিনেই কেয়ামত বা পৃথিবী ধ্বংস হবে। এই দিনে মানব জাতির আদি পিতা হজরত আদম (আ.) ও মা হাওয়ার (আ.) পৃথকভাবে পৃথিবীতে আগমনের ঘটনা ঘটে এবং শত শত বছর পর এই দিনই আরাফার ময়দানে তাদের পুনরায় সাক্ষাৎ লাভ ঘটে। আরও বর্ণিত আছে, এই দিনেই তারা মহান আল্লাহর ক্ষমা লাভ করেন। পবিত্র আশুরা উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া পৃথক বাণী দিয়েছেন। এ উপলক্ষে আজ সকালে শিয়া সম্প্রদায় রাজধানীতে হুসেনি দালান ও মোহাম্মদপুর শিয়া মসজিদ থেকে তাজিয়া মিছিল বের করবে। বিকালে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে ওয়াজ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর