বুধবার, ২৮ অক্টোবর, ২০১৫ ০০:০০ টা

শিগগিরই আস্থা ফেরানো জরুরি

জুলকার নাইন

শিগগিরই আস্থা ফেরানো জরুরি

আকরামুল কাদের

দুই বিদেশি খুনের পরিপ্রেক্ষিতে পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলোর একের পর এক ভ্রমণ  সতর্কতা অযৌক্তিক বলে মনে করেন সাবেক রাষ্ট্রদূত আকরামুল কাদের। তবে তিনি মনে করেন, বিদেশিদের এ ধরনের অবস্থানের পরিপ্রেক্ষিতে উদ্ভূত পরিস্থিতিও দেশের ভাবমূর্তির জন্য খুব একটা সুখকর নয়। তাই পরিস্থিতির উত্তরণে যথাশিগগিরই তাদের আস্থার ভাব ফিরিয়ে আনতে হবে এবং তা আমাদেরকেই করতে হবে। এ জন্য কারও মুখাপেক্ষী হওয়ার সুযোগ নেই। গতকাল সন্ধ্যায় বাংলাদেশ প্রতিদিনকে দেওয়া টেলিফোন সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন। যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত আকরামুল কাদের বলেন, সম্প্রতি বিদেশিরা যেভাবে ভ্রমণ সতর্কতা দিচ্ছে এবং দিয়ে চলেছে তা মোটেও যৌক্তিক নয়। ঘটনা ঘটতে পারে। আমাদের দেশে যেটা হওয়ার কথা নয়, সেটাও হচ্ছে। চারশ বছরের ইতিহাসে যা হয়নি, তাও হয়েছে। এসব যে দেশকে অস্থিতিশীল করার চক্রান্ত, এতে কোনো সন্দেহ নেই। তিনি বলেন, দুই বিদেশি নাগরিক হত্যা ও ব্লগারদের হত্যার মধ্যে কোনো যোগসূত্র আছে বলে আমার মনে হয় না। কারণ দুই ক্ষেত্রে হত্যার ধরন ও আনুষঙ্গিক বিষয়গুলোতে যথেষ্ট পার্থক্য আছে। তবে দুই বিদেশি হত্যা ও হোসনি দালানে শিয়া সম্প্রদায়ের সমাবেশে বোমা হামলা একসূত্রে গাঁথা হতে পারে। বিদেশিরা এসব দেখে যদি এত বেশি ভ্রমণ সতর্কতা ইস্যু করতে থাকে তাহলে তা সাধারণের চোখে পড়ার মতো বিষয়ই হয়ে ওঠে। দীর্ঘ কূটনৈতিক জীবনে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে সদ্য অবসর নেওয়া আকরামুল কাদের বলেন, বাংলাদেশে এর আগেও মারাÍক ঘটনা ঘটেছে। এর আগে শেখ হাসিনার সমাবেশে গ্রেনেড হামলা হয়েছিল, রমনা বটমূলে ছায়ানটের অনুষ্ঠানে বোমা বিস্ফোরণ হয়েছিল। সেসময় কি বিদেশিরা বলেছিল, বাংলাদেশের অবস্থা খুব খারাপ, সেখানে কেউ যাবে না। তা বলা হয়নি। তাহলে এখন সতর্কতার নামে যা করা হচ্ছে তা মোটেও যৌক্তিক নয়। তিনি বলেন, বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা কর্তৃপক্ষের নিরাপত্তার নামে আবাসিক এলাকায় সাঁজোয়া যান চালানো এবং বাড়াবাড়ি রকম চেকপোস্ট বসানো আসলে সবাইকে কতটা আশ্বস্ত করছে তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। বরং এ ধরনের অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা মনের মধ্যে ভীতির সঞ্চার করতে পারে। সাবেক এই রাষ্ট্রদূতের মতে, সাম্প্রতিক ঘটনাগুলো নিঃসন্দেহে দেশের ভাবমূর্তিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। ইতিমধ্যেই বেশ কিছু নির্ধারিত বৈঠক, সফর ও অনুষ্ঠান বাতিল হয়েছে। তারা আসছেন না, এটা খুব একটা ভালো কথা নয়। আমাদের ব্যবসার ওপর এর একটা প্রভাব পড়তে পারে। তাই এখন করণীয় হলো, আস্থার ভাব যথাশিগগিরই ফিরিয়ে আনতে হবে। এটার জন্য কারও মুখাপেক্ষী হওয়ার সুযোগ নেই। এটা আমাদের কাজ, আমাদেরকেই করতে হবে। তিনি বলেন, বিদেশিদের খুনের  ঘটনায় যাদের ইতিমধ্যেই গ্রেফতার করা হয়েছে তারা কোথায় কীভাবে জড়িত তা পরিষ্কারভাবে বলতে হবে। পত্রিকায় দেখলাম বড় ভাইয়ের কথা বলা হয়েছে। কে এই বড় ভাই, তাকে ধরা সম্ভব হলে ধরতে হবে, না হলে তার পরিচয় প্রকাশ করতে হবে। জনপ্রকাশ্যে পুরো ষড়যন্ত্রের কথা তথ্যপ্রমাণসহ তুলে ধরতে হবে। প্রকাশ্যে দেখাতে হবে, পুরো বিষয়টি সরকারের নিয়ন্ত্রণে আছে। যতক্ষণ পর্যন্ত তা না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত পুরো আস্থা অর্জন সম্ভব নয়। পূর্ব ধারণার মতো মনে হতে পারে, অন্যান্য মামলার মতোই এগুলোও ঝুলে যাচ্ছে। বছরের পর বছর এটা চলতে থাকবে। জজমিয়ার মতো কোনো নাটক সাজানোর শঙ্কাও মনে উঁকি দেবে। তাই দ্রুততম সময়ের মধ্যে প্রকৃত অপরাধীদের সবাইকে আইনের আওতায় আনতে হবে। এটা খুবই জরুরি, না হলে পরিস্থিতির উত্তরণ সহজসাধ্য হবে না।

 

সর্বশেষ খবর