শুক্রবার, ১৩ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা
বগুড়ায় বিশাল জনসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

বিদেশে বসে কোনো ষড়যন্ত্র সফল হতে দেব না

আব্দুর রহমান টুলু, বগুড়া

বিদেশে বসে কোনো ষড়যন্ত্র সফল হতে দেব না

বগুড়ার জনসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আওয়ামী লীগের সময় বগুড়ায় উন্নয়ন হয়েছে। আর বিএনপির সময়ে খুন, লুটপাট ও সন্ত্রাস হয়েছে। বগুড়া থেকে সিরাজগঞ্জের বঙ্গবন্ধু সেতু পর্যন্ত সরাসরি রেলপথ নির্মাণ করা হবে। জেলায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন ও অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা হবে। এ ছাড়া জেলার প্রতিটি উপজেলায় একটি করে ছোট স্টেডিয়াম নির্মাণ করা হবে। গতকাল বিকালে জেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে স্থানীয় আলতাফুন্নেছা খেলার মাঠে এক বিশাল জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বগুড়ার উন্নয়নের বিরাট ফিরিস্তি দিয়ে প্রধানমন্ত্রী এসব প্রকল্পের কথা ঘোষণা দেন। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও তার ছেলে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে ইঙ্গিত করে বলেন, বিদেশের মাটিতে বসে কোনো ষড়যন্ত্র সফল হতে দেবেন না। তিনি বলেন, ’৯৬ সালে সরকার গঠন করে আমরা ঘোষণা দিয়েছিলাম, বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে গড়ে তুলব। ইতিমধ্যে আমরা সেই সিঁড়িতে উঠে গেছি। খালেদা জিয়া যদি ষড়যন্ত্র ও ধ্বংসের রাজনীতি না করেন, তবে ২০২১ সালের আগেই আমরা মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে উন্নীত হতে পারব। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিকাল পৌনে ৩টায় জনসভাস্থলে উপস্থিত হয়ে বেশ কিছু উন্নয়নমূলক প্রকল্পের উদ্বোধন করেন। এ জনসভাকে কেন্দ্র করে বগুড়ায় উৎসবের আমেজ বয়ে যায়। জনসভাস্থল ও তার আশপাশ এলাকায় জনতার ঢল নেমে যায়। সকাল ১০টা থেকে মিছিলসহ দলীয় নেতা-কর্মীরা জনসভা মঞ্চে হাজির হতে থাকেন। জনসভার আশপাশে প্রায় ১ কিলোমিটার জুড়ে মাইক লাগানো হয়। সভাস্থলে স্থান না পেয়ে হাজার হাজার মানুষ দূরে রাস্তায় দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য শোনেন। জনসভায় সভাপতিত্ব করেন বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ মমতাজ উদ্দিন। সভা পরিচালনা করেন দলের জেলা সাধারণ সম্পাদক মজিবর রহমান মজনু।

 

জনসভায় বক্তব্য রাখেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, ভ‚মিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ইসমত আরা সাদেক, বগুড়া-১ আসনের এমপি আবদুল মান্নান, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন এমপি, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এমপি, পঙ্কজ দেব নাথ এমপি, হাবিবর রহমান এমপি, কেন্দ্রীয় নেতা খায়রুজ্জামান লিটন, ডা. সিদ্দিকুর রহমান, সিরাজুল ইসলাম, অ্যাড. সামছুল হক রেজা, নাজমা আক্তার, অপু উকিল, মাহমুদ হাসান রিপন, মাহফুজ হায়দার রোটন, ছাত্রনেতা সাইফুর রহমান সোহাগ, সাবেক এমপি খাদিজা খাতুন শেফালী, রাগেবুল আহসান রিপু, টি জামান নিকেতা, রফি নেওয়াজ খান রবিন, ডা. রেজাউল আলম জুয়েল, আসাদুর রহমান দুলু, অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম, শুভাশীষ পোদ্দার লিটন, ডালিয়া নাসরিন রিক্তা, নাইমুর রাজ্জাক তিতাস, অসিম কুমার রায় প্রমুখ। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় আসে তখন জনগণ পায়। আর বিএনপি ক্ষমতায় এলে মানুষ হত্যা ছাড়া আর কিছু পায় না। ৫ জানুয়ারি নির্বাচনে না এসে খালেদা জিয়া ভুল করেছেন। সেই ভুলের খেসারত দিচ্ছেন দলের নেতা-কর্মীরা। নির্বাচনে না এসে খালেদা জিয়া তখন নির্দেশ দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করেছেন। খালেদা জিয়া ও তার ছেলে খুনি হিসেবে দেশের মানুষের কাছে পরিচিত হয়েছেন। তিনি আন্দোলনে ব্যর্থ হয়ে এখন বিদেশে বসে ষড়যন্ত্র করে বিদেশি নাগরিক হত্যার মাধ্যমে দেশকে অস্থীতিশীল করতে চান। শেখ হাসিনা অভিযোগ করেন, বিএনপি দেশকে সন্ত্রাসী রাষ্ট্রে পরিণত করতে চায়। কিন্তু স্বাধীনতার সপক্ষের জনগণ তা হতে দেবে না। দক্ষিণ এশিয়ার শান্তিপূর্ণ দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাবে বাংলাদেশ। ইসলাম শান্তির ধর্ম তাই এই ধর্মের মানুষ সন্ত্রাস করতে পারে না। তিনি ষড়যন্ত্রকারীদের বিষয়ে সজাগ থাকার আহ্বান জানান।

শেখ হাসিনা বলেন, প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখেও দ্বিপক্ষীয় সমস্যার সমাধান করা যায় তা আমরা প্রমাণ করেছি। সমুদ্রসীমা জয়, স্থল সীমানা চুক্তি, গঙ্গার পানির ন্যায্য হিস্যা আদায় করেছি। উত্তারাঞ্চলের অনেক এলাকার একসময় মঙ্গাপীড়িত ছিল। আমাদের সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপে এখন আর মঙ্গা নেই। আমরা দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করেছি। দেশ এগিয়েছে তাই মাথা পিছু আয় বেড়েছে। ৫ কোটি মানুষ নিæবিত্ত থেকে মধ্যবিত্তের আয়ে উন্নীত হয়েছে। তিনি বলেন, দেশের মানুষকে অর্থনৈতিকভাবে মুক্তি দিতে হবে। স্বাধীনতার সুফল মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়া হবে। আওয়ামী লীগের একটাই চাওয়া এদেশের মানুষের উন্নয়ন। বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত কাজ আমরা করে যেতে চাই। জাতির পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করবই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরও বলেন, আমরা ক্ষমতায় এসে বগুড়ার উন্নয়ন করেছি। উন্নয়নের ধারায় ছিল বগুড়া রাডার স্টেশন, মসলা গবেষণা কেন্দ্র, যমুনা নদী তীর সংরক্ষণে হার্ড পয়েন্ট নির্মাণ করা। বিএনপির সময়ে উন্নয়ন হয় না। মানুষ খুন হয়। নৌকা মানুষকে বঞ্চিত করে না, নৌকা মানুষকে দেয়। বগুড়াসহ সারা দেশে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত আছে। তাই আপনাদের উপহার দিয়ে গেলাম বগুড়া থেকে সিরাজগঞ্জ রেলপথ, বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন, যমুনা নদী ড্রেজিং, দেশের মেডিকেল কলেজ হাসপাতালগুলোতে বার্ন ইউনিট স্থাপন করা, অর্থনৈতিক অঞ্চল গঠন, রাস্তাঘাট উন্নয়ন এবং প্রতিটি উপজেলায় একটি করে মিনি স্টেডিয়াম করে দেওয়া, বগুড়া মোহাম্মদ আলী হাসপাতাল থেকে মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পর্যন্ত খুব সহজে চলাচলের জন্য সড়ক নির্মাণ করা। শুধু বগুড়ায় উন্নয়ন না। বগুড়াসহ সারা দেশের উন্নয়নই আমাদের কাজ। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ দেশের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। দেশের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি আমাদের লক্ষ্য। দেশে অর্থনৈতিক অঞ্চল হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছে। পুরনো শিল্প নগরী হিসেবে বগুড়া ফিরে পাবে তার ঐতিহ্য। বগুড়ায় উৎপাদিত সবজি তাজা রাখতে শিল্পকারখানা গড়ে তোলা হবে।

সর্বশেষ খবর