মঙ্গলবার, ১৭ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

প্যারিসে মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে এলেন তারেক

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

প্যারিসে মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে  এলেন তারেক

তারেক

ইতিহাসের বর্বর জঙ্গি হামলায় শিল্প সংস্কৃতির শহর হিসেবে পরিচিত প্যারিসে প্রাণ হারিয়েছেন শতাধিক মানুষ। এই ঘটনায় শোকাহত গোটা বিশ্ব। গত ১৩ নভেম্বর প্যারিসের যে ছয়টি স্থানে নৃশংস এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে তার মধ্যে অন্যতম বাতাক্লুঁ কনসার্ট হল। ওই কনসার্ট হলে জঙ্গিরা বর্বরতা চালিয়ে ৮৯ জনকে  করে। এই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী কনসার্ট হল কফি হাউসের তারেক আহমদ। তিনি তখন কফি হাউসে কর্মরত ছিলেন। তারেক সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার গোলাপনগর গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা তোতা মিয়া ও ফাতেমা বেগমের ছেলে। হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি জানান, সাত বছর ধরে তিনি বাতাক্লুঁ কনসার্ট হলের কফিবারে কাজ করছেন। শুক্রবার বিকালের শিফটে তিনি কনসার্ট হলের কফিবারে কাজ করতে যান। রাত ৯টা ৪৯ মিনিটের দিকে ছিলেন কফিবারের পেছনে। সঙ্গে কাজ করছিল শেফ ক্রিস্তফো, সার্ভিসম্যান মাকু, ইবন ও বারের পরিচালক বেখতন। তখন হলের ভিতর চলছিল মনোমুগ্ধকর ব্যান্ডশো। হঠাৎ গুলির শব্দ শুনে তিনি উঁকি মারেন হলের ভিতর। দেখতে পান এলোপাতাড়ি গুলিতে হলের ভিতর রক্তাক্ত লোকজন ঢলে পড়ছেন মাটিতে। বেখতন তখন তারেক, মাকু, ইবন ও ক্রিস্তফোকে বারের স্টোররুমে আÍগোপন করতে বলেন। পরিচালক বেখতনও স্টোররুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেন। তারেক বলেন, ‘স্টোররুমের ভিতর আÍগোপন করলেও মনে মনে মৃত্যুর প্রস্তুতি নেই। আল­াহকে ডাকতে থাকি। সন্ত্রাসীদের হাত থেকে নিজেদেরকে রক্ষা করা সম্ভব হবে না- এটা সবাই মোটামুটি ধরেই নিয়েছিলাম। হলের ভিতর থেকে মানুষের গগনবিধারী চিৎকার ভেসে আসছিল। আমরা একে অপরকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকি। তখন আমাদের সাহস জোগান বেখতন। তিনি মোবাইল ফোনে আমাদের অবস্থান জানান পুলিশকে। একসময় নিস্তব্ধতা নেমে আসে পুরো হলে। আমরা বুঝতে পারি তাণ্ডব শেষ হয়ে গেছে। বন্ধ হয়ে গেছে হলের ভিতরের প্রাণস্পন্দন। এরপরও স্টোর রুম থেকে বের হওয়ার সাহস হচ্ছিল না। প্রায় দেড় ঘণ্টা পর পুলিশ এসে আমাদের বের করে।’ তিনি আরও জানান, সাত বছর ধরে একই প্রতিষ্ঠানে কাজ করায় অনেক কাস্টমার ও সহকর্মীর সঙ্গে তার ভালো সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল। বাতাক্লুঁতে অনেক দেশের লোকজন কাজ করেন। তবে একমাত্র বাংলাদেশি ছিলেন তিনিই। তারেক বলেন, ‘কফিবার থেকে আমি যখন উঁকি মেরে হলের ভিতর দেখার চেষ্টা করছিলাম, তখন দেখতে পাই- থিয়েটার কর্মী নাতালিকে গুলি করছে এক সন্ত্রাসী। মুহূর্তের মধ্যেই নাতালির শরীর ঝাঁজরা হয়ে যায়। লুটিয়ে পড়ে সে। এ সময় সার্ভিসম্যান লুইকেও গুলি খেতে দেখি। তবে ভাগ্যক্রমে বেঁচে যায় লুই। নাতালির মৃত্যুর দৃশ্য চোখ থেকে সরাতে পারছিলাম না।’ উলে­খ্য, তারেক ১৯৯৩ সালে এমসি একাডেমি থেকে এসএসসি পাস করেন। এরপর মদন মোহন কলেজ থেকে এইচএসসি ও øাতক পাস করেন। ২০০৩ সালে তিনি ফ্রান্স পাড়ি জমান। ২০০৭ সাল থেকে তিনি প্যারিসে স্থায়ীভাবে বসবাসের সুযোগ পান।

সর্বশেষ খবর