মঙ্গলবার, ১৭ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা
গুলশান এসিল্যান্ড অফিস

সেই নাজির মিজান বরখাস্ত

নিজস্ব প্রতিবেদক

সেই নাজির মিজান বরখাস্ত

ঢাকার জেলা প্রশাসক মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়ার নির্দেশে গুলশান এসিল্যান্ড অফিসের নাজির-

কাম-ক্যাশিয়ার পদে কর্মরত মিজানুর রহমানকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত  করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগগুলো তদন্তের জন্য একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাকে চাকরিচ্যুত করা হবে। একই সঙ্গে ঢাকা জেলার সব ভূমি অফিসে তিনি শুদ্ধি অভিযান চালানোর নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি নিজেও ভূমি প্রশাসনের মাঠপর্যায়ে ঘুষ-দুর্নীতি নির্মূলের জন্য আকস্মিক পরিদর্শনে অংশ নিচ্ছেন। অভিযোগ রয়েছে, গুলশান এসিল্যান্ড অফিসের নাজির পদে কর্মরত মিজান বিভিন্ন কৌশলে সেবাপ্রার্থীদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের ঘুষ আদায় করতেন। ঘুষ না দিলেই শুরু হতো তার নানা হয়রানি। নামজারি কিংবা মিস কেস করে ভূমি-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বছরের পর বছর ঘুরতে হতো। কাক্সিক্ষত ঘুষ পেলেই ফাইল নিষ্পত্তি হতো। তার বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ হলো, তিনি ফাইল গুনে ঘুষ আদায় করতেন। এ-সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন বাংলাদেশ প্রতিদিনে ৯ নভেম্বর প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদন প্রকাশের পরদিনই ঢাকার জেলা প্রশাসক তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগসমূহ তদন্তের জন্য কমিটি গঠন করেন। কমিটি ইতিমধ্যে কাজ শুরু করেছে। তদন্ত কমিটির প্রধান ঢাকার আরডিসি খন্দকার মুশফিকুর রহমান বলেন, ‘নাজিরের বিভিন্ন অভিযোগ তদন্তের কাজ শুরু করা হয়েছে। কয়েক দিনের মধ্যে ভুক্তভোগীদের নোটিস করা হবে। অচিরেই তদন্ত শেষ করে প্রতিবেদন পেশ করা হবে।’ ঢাকা জেলার ভূমি অফিসগুলোতে স্বচ্ছতা ফিরিয়ে আনতে বিভিন্ন ভূমি অফিস আকস্মিক পরিদর্শন কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। জেলা প্রশাসক ১২ নভেম্বর তেজগাঁও ও রমনা এসিল্যান্ড অফিস পরিদর্শনে যান। এ খবর কেউ জানতেন না। তিনি প্রায় আড়াই ঘণ্টা সেখানে অবস্থান করে বিভিন্ন নথিপত্র যাচাই করেন। তিনি অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দুর্নীতিমুক্ত পরিবেশে কাজ করার জন্য নির্দেশ দিয়ে বলেন, ‘দোষী প্রমাণিত হলে কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না।’ তদন্ত কমিটির প্রধান ঢাকার আরডিসি খন্দকার মুশফিকুর রহমান জানান, গুলশান এসিল্যান্ড অফিসে গিয়ে বিভিন্ন ফাইল যাচাই-বাছাইয়ের কাজ করা হচ্ছে। এরপর ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে দুর্নীতি ও হয়রানির প্রমাণপত্র নেওয়া হবে। যে-কেউ অভিযুক্ত নাজির মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে সাক্ষী দিতে পারবেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে অচিরেই তদন্ত প্রতিবেদন জেলা প্রশাসকের কাছে হস্তান্তর করা হবে। জেলা প্রশাসনের একটি সূত্র জানায়, নাজির মিজানকে নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়ার পরদিনই ডিসি ঢাকা জেলায় কর্মরত এসিল্যান্ডদের ডেকে জরুরি সভায় বসেন। সভায় তিনি জেলার সব এসিল্যান্ড ও তহশিল দুর্নীতি ও ঘুষমুক্ত করার নির্দেশ দিয়ে বলেন, ‘এরপর কেউ দুর্নীতি করলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। মানুষ যাতে সহজে ভূমিসেবা পায় সে জন্য এসিল্যান্ডরা মাঠপর্যায়ে তদারক করবেন। কেউ কোনো অনৈতিক কর্মকাণ্ড করলে তাকে ছাড় দেওয়া হবে না।’ এ শুদ্ধি অভিযানে ঢাকা শহরে অবস্থিত ভূমি অফিসগুলোর চিত্র অনেকটা পাল্টে গেছে। ভূমি মালিকরা আগের চেয়ে অনেক বেশি সেবা পাচ্ছেন। সরেজমিন ডেমরা এসিল্যান্ড অফিসে গিয়ে দেখা গেছে, সেখানে নামজারি ও মিস কেস সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা ক্রমান্বয়ে সেবা গ্রহণ করছেন। তাদের বসার জন্য চেয়ার দেওয়া হয়েছে। অনেক দিনের পুরনো জরাজীর্ণ ভবনটি সংস্কার করে রং করা হয়েছে। নামজারি করতে আসা হোসনে আরা বেগম বলেন, ‘বিনা হয়রানিতেই আমি ওই অফিসে পারিবারিক জমি নামজারি করতে পেরেছি, যা আগে কল্পনা করা যেত না।’ এর উল্টো চিত্র পাওয়া গেছে ঢাকা শহরের বাইরে সাভার ও আশুলিয়া এসিল্যান্ড অফিসে। সেখানে নামজারি ও মিস কেস নিয়ে এখনো অনেক দুর্নীতি ও হয়রানির অভিযোগ রয়েছে। অনুসন্ধানে জানা যায়, ঢাকা জেলার সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত এসিল্যান্ড অফিস হলো সাভার এলাকা। সেখানে নামজারি ও মিস কেস নিয়ে ব্যাপক দুর্নীতি হয়ে থাকে। বেশ কয়েকটি জালিয়াত চক্র এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট রয়েছে, যারা এসিল্যান্ড ও তহশিল অফিসের কতিপয় কর্মচারী ও উমেদারের যোগসাজশে জাল দলিল-পর্চার মাধ্যমে একজনের জমি অন্যজনের নামে নামজারি করিয়ে নিচ্ছে বলে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ রয়েছে। ঢাকার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. আবুল ফজল মীর বলেন, ‘মাঠপর্যায়ে ভূমি ব্যবস্থাপনায় কিছু সমস্যা রয়েছে। কোনো কোনো কর্মচারী অনিয়ম ও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত নয় এ কথা বলা যাবে না। এর মধ্যে সাভার, আশুলিয়া ও কেরানীগঞ্জ অন্যতম। এসব অফিসে দুর্নীতি ও ঘুষের সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করা হয়েছে। অচিরেই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ইতিমধ্যে জেলা প্রশাসক ও আমি ব্যক্তিগতভাবে বিভিন্ন এসিল্যান্ড ও তহশিল অফিসে শুদ্ধি অভিযান শুরু করেছি। প্রয়োজনে ঘুষ-দুর্নীতি নির্মূলে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে গণশুমারি করা হবে।’

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর