সোমবার, ২৩ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা
ছিটবাসীর ভারত যাত্রা

অশ্রুসিক্ত বিদায়

পঞ্চগড় প্রতিনিধি

পঞ্চগড়ের ১৩টি পরিবারের ৪৮ জন ছিটবাসীকে চোখের জলে বিদায় জানালেন স্বজনরা। গতকাল কালিয়াগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদ মাঠে হাজার হাজার মানুষ তাদের বিদায় জানাতে উপস্থিত হন। ঐতিহাসিক এই মুহূর্তটিকে নিজের চোখে দেখার জন্য চিলাহাটি-হলদিবাড়ি সীমান্তেও জড়ো হন হাজার হাজার মানুষ। লেপ, তোশক আর ট্রাংকের সঙ্গে তারা নিয়ে গেলেন অসংখ্য স্মৃতি।

২৩ শতক জমির মধ্যে ৯ শতক জমি বিক্রি করে এক ছেলে ও এক মেয়ে রেখে দুই ছেলেকে নিয়ে চলে যাচ্ছেন গীরিশ চন্দ্র ও ঝরনা রানী। ঝরনা রানীর মেরুদণ্ডের হার ভাঙা। সোজা হয়ে হাঁটতে পারেন না। তাদের বিদায় জানাতে এসেছে ছেলেমেয়ে। গীরিশ চন্দ্র জানান, ‘সাত বছর ধরে স্ত্রীর চিকিৎসা করছি। ভালো হয় না। স্ত্রীকে চিকিৎসা করে সুস্থ করব এই আশায় ভারতে চলে যাচ্ছি।’ রুক্সিনি রায় ও মায়া রায় চিৎকার করে কান্না করতে করতে বিদায় জানালেন দুই ছেলেকে। স্বামীসহ তারা থেকে গেলেন বাংলাদেশে। বড় ভাই আর বৌদিকে বিদায় জানালেন তেপুকুরিয়ার জোসনা রানী, গারাতীর নিরলা রায়। নাজিরগঞ্জের রেখা রানী বিদায় জানালেন মাকে। এ বিদায় বেলায় এক মর্মান্তিক দৃশ্যের অবতারণা হয়। সবাই সবাইকে জড়িয়ে ধরেন। যেন কেউ কাউকে যেতে দেবে না। ঘড়ির কাঁটায় তখন সাড়ে ১০টা। মালপত্র ওঠানো হয়ে গেছে ট্রাকে। কেউ নিয়েছেন খাট, লেপ, তোশক আবার অনেকে বাদামের বস্তা, মুড়ির বস্তা। কাগজপত্র পরীক্ষা-নিরীক্ষার আনুষ্ঠানিকতা শেষ হয়ে গেছে তখন। বাসে ওঠার পালা। বাংলাদেশের পক্ষে পঞ্চগড় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এবং ভারতীয় দূতাবাসের প্রথম সচিব রমাকান্ত গুপ্তা বিদায়ীদের হাতে শুভেচ্ছাস্বরূপ রজনীগন্ধার স্টিক তুলে দেন। বাস ছেড়ে দেয়। কালিয়াগঞ্জ মাঠে কান্নার রোল শুরু হয়। গতকাল ৫৫ জন ভারতে চলে যাওয়ার কথা থাকলেও সাবেক ছিটমহল নাজিরগঞ্জ দইখাতা থেকে চারজন একবারেই যাবেন না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তিনজনের জমিজমা বিক্রি হলে পরের ধাপেই চলে যাবেন। বিকাল ৪টায় সীমান্তের ৭৮২ নম্বর পিলারের পাশ দিয়ে ভারতে প্রবেশ করে তারা। এ সময় বিজিবির ৫৮ ব্যাটালিয়নের সিও লে. কর্নেল এস এম সারোয়ার, নীলফামারী জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মুজিবুর রহমান, ডোমার উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাবিহা সুলতানা উপস্থিত ছিলেন। পঞ্চগড়ের ৩৬টি ছিটমহল থেকে ৯৮ পরিবারের ৪৮৯ জন স্থায়ীভাবে ভারতে চলে যাচ্ছেন। ২২ নভেম্বর থেকে ২৬ নভেম্বর পর্যন্ত চার দফায় এসব ভারতীয় নাগরিক স্থায়ীভাবে ভারতে চলে যাবেন।

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি জানান, ভারতের নাগরিকত্ব নিতে সে দেশে চলে গেলেন কুড়িগ্রাম সীমান্তের ছিটমহল দাশিয়ারছড়া ও গাড়লঝোড়ার ৭২ অধিবাসী। গতকাল সকালে ভুরুঙ্গামারী উপজেলার বাগভাণ্ডার সীমান্ত দিয়ে প্রথম দফায় ভারতের ট্রাভেল পাসধারী ৭২ জন নাগরিক ভারতে প্রবেশ করেন। অশ্র“সিক্ত অব্যক্ত উচ্চারণ ‘গুড বাই বাংলাদেশ, জানিয়ে তাদের বহন করা দুটি বাস এবং ১০টি পিকআপভ্যান সরাসরি ভারতের অভ্যন্তরে চলে যায়। বাকিরা দ্বিতীয় দফায় আগামী ২৭ নভেম্বর ভারতে যাবেন। সেখানে তাদের জন্য তৈরি করা হয়েছে অস্থায়ী ক্যাম্প। কুড়িগ্রামের বিলুপ্ত ছিটমহল দাশিয়ারছড়ার ১০ পরিবারের ৪৯ জন নারী-পুরুষ ও শিশু, ভুরুঙ্গামারীর ছোট গাড়লঝোড়ার ৫ পরিবারের ২৩ জনসহ মোট ৭২ জন মালামাল নিয়ে বাগভাণ্ডার সীমান্ত পারি দিয়ে  ভারতে পৌঁছে। এ সময় তাদের তদারকি করেন ভারতীয় দূতাবাসের কর্মকর্তা অভিজিত রায়, ফারুক আজম ও অরূপ চক্রবর্তী। কুড়িগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রফিকুল ইসলাম ও ৪৫ বিজিবির অধিনায়ক জাকির হোসেন তাদের বিদায়ী অভ্যর্থনা জানান।

সর্বশেষ খবর