বৃহস্পতিবার, ৩ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

বিএনপি-জামায়াত সমঝোতা হয়নি

মাহমুদ আজহার

জোটগতভাবে পৌরসভা নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা দিলেও জামায়াত ছাড়াই মেয়র পদে প্রার্থী ঘোষণা করল বিএনপি। জামায়াতের সঙ্গে এখনো সমঝোতা হয়নি দলটির। ৩০ ডিসেম্বর পৌরসভা নির্বাচনে বিএনপি  দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে। গত দুই দিনে নিজ দলীয় সব প্রার্থীর মধ্যে মনোনয়নপত্র বিতরণও শেষ করেছে দলটি। তবে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় জাতীয় পার্টিকে (জাফর) একটিতে এবং চট্টগ্রামের চন্দনাইশে এলডিপির প্রার্থীকে একটি ছাড় দিয়েছে বিএনপি। জামায়াতকে আপাতত কোথাও ছাড় দেওয়া হয়নি। শেষ পর্যন্ত সমঝোতা হলে বিএনপি সর্বোচ্চ ১৫টি পৌরসভায় ছাড় দিতে পারে বলে দলীয় সূত্রে আভাস পাওয়া গেছে। জানা যায়, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার হাতে জামায়াত একটি তালিকা পাঠিয়েছে। কিন্তু বিএনপি-প্রধান এটি এখনো প্রকাশ করেননি। বেগম জিয়া দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের দলীয় প্রার্থী ঘোষণার নির্দেশনা দিয়েছেন। এরপর গত দুই দিনে বিএনপি দলীয় প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র বিতরণ শেষ করে। অন্যদিকে জামায়াতও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করছে বলে জানা গেছে। বিএনপির সঙ্গে সমঝোতা হলে ৬ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ মুহূর্তে একটি সমঝোতায় আসার সম্ভাবনা রয়েছে। অর্ধশত পৌরসভায় লড়তে বিএনপি-প্রধানের কাছে জামায়াত তালিকা পাঠিয়েছে। আরেকটি সূত্রে জানা যায়, বিএনপি-প্রধানের কাছে এখনো কোনো তালিকা প্রদান করেনি জামায়াত। তারা কোন প্রক্রিয়ায় নির্বাচনে যাবে, তা-ও এখনো স্পষ্ট নয়। এ জন্যই বিএনপি দুটি বাদে সব পৌরসভায় নিজেদের মনোনয়ন চূড়ান্ত করেছে। জোটের বৈঠকে জামায়াত স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার কথা জানিয়েছে বলে সূত্র জানায়। জামায়াত প্রসঙ্গে বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব মো. শাহজাহান সাংবাদিকদের বলেন, ‘এ জন্য ৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। জামায়াতে ইসলামীর নিজস্ব রাজনীতি আছে। তাদের কী কৌশল হবে, কী প্রক্রিয়ায় তারা নির্বাচনে অংশ নেবে, তা তাদেরই ভাবতে দেওয়া উচিত।’ জোটের শরিকদের ছাড় দেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এ মুহূর্তে আমরা বলতে চাই না। এ নির্বাচনে বিএনপি তার শরিকদের নিয়ে অংশ নেবে। শরিকরা কেউ চাইলে তাদের বিমুখ করবে না। প্রত্যাহার পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।’ বিএনপির নীতিনির্ধারকদের অভিযোগ, বিগত তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপিকে কোনো ধরনের সহযোগিতা করেনি জামায়াত। তারা পৃথকভাবে কাউন্সিলর প্রার্থী ঘোষণা করেছিল। অনেক এলাকায় সমঝোতার ভিত্তিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থীকেও সমর্থন দেয় জামায়াত। এ নিয়ে বিএনপির নীতিনির্ধারকরা চরম ক্ষুব্ধ হন। জানা যায়, ২০-দলীয় জোটের সর্বশেষ বৈঠকে উপস্থিত জামায়াত নেতাকে উদ্দেশ করে বিএনপি-প্রধান বেগম জিয়া বলেন, এবার আপনারা কী করবেন? এ সময় জামায়াত নেতা জোটগতভাবে নির্বাচনে যাওয়ার কথা জানান। জোটের অন্য শরিকরাও বেগম জিয়াকে অনুরোধ করেন, যে কোনো মূল্যে জোটের একক প্রার্থী দিতে হবে। এ জন্য সব ধরনের ত্যাগ করতে জোট নেতারা প্রস্তুত। জোটের ‘নামসর্বস্ব’ দলগুলো বিএনপির কাছে লম্বা তালিকা দিলেও শেষ পর্যন্ত তারা বিএনপির প্রার্থীকেই সমর্থন দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। জানা যায়, মঙ্গলবার রাতেও বিএনপি দুই নেতা জামায়াতের প্রার্থিতা নিয়ে কথা বলেন। এ সময় তাদের মধ্যে ক্ষুব্ধ মনোভাব লক্ষ্য করা যায়। এ সময় তারা বিগত সময়ের নির্বাচনে জামায়াতের আচরণের সমালোচনা করেন। বিএনপির সহ-প্রচার সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স গতকাল রাতে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, তারা এখনো পর্যন্ত জামায়াতের কোনো তালিকা পাননি। ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) কাছে জামায়াত কোনো তালিকা দিয়েছে কিনা আমি জানি না। তবে যতদূর জানতে পেরেছি, জামায়াত নিজেদের মতো করে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করছে। শেষ পর্যন্ত সমঝোতা হলে বিএনপি কয়েকটি পৌরসভায় ছাড়ও দিতে পারে।

সর্বশেষ খবর