রবিবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

আচরণবিধি তদারকে মাঠে নামছেন ম্যাজিস্ট্রেট

গোলাম রাব্বানী

আচরণবিধি তদারকে মাঠে নামছেন ম্যাজিস্ট্রেট

আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনে আচরণবিধি তদারকিতে আজ থেকে মাঠে নামছেন ম্যাজিস্ট্রেটরা। নির্বাচন কমিশন (ইসি) প্রতিটি নির্বাচনী এলাকায় একজন করে এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট (নির্বাহী হাকিম) নিয়োজিত করছে। সেই সঙ্গে ভোটের আগে-পরে চার দিন আরও এক হাজার নির্বাহী ও জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (বিচারিক হাকিম) নিয়োজিত করা হবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আচরণবিধি তদারকিতে মাঠে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভ্রাম্যমাণ ও স্ট্রাইকিং ফোর্সের নেতৃত্ব দেবেন নির্বাহী হাকিম এবং নির্বাচনী বিধি লঙ্ঘনে ব্যবস্থা নেবেন বিচারিক হাকিমরা। ইসি কর্মকর্তারা জানান, পৌর ভোটে মোট নির্বাহী হাকিম থাকবেন প্রায় ৯৭০ জন ও বিচারিক হাকিম ২৩৪ জন। গত বুধবার নির্বাচন কমিশনের সভায় ২৩৪ পৌরসভার হাকিম নিয়োগের এ বিষয়টি অনুমোদন করা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার প্রায় ১ হাজার ২০০ নির্বাহী ও বিচারিক হাকিম নিয়োগের বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে এবং হাইকোর্ট বিভাগের পরামর্শ নিয়ে আইন মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছেন ইসির আইন শাখার উপ-সচিব মহসিনুল হক। এ বিষয়ে ইসি সচিব সিরাজুল ইসলাম বলেন, ১৩ ডিসেম্বর থেকে প্রতি পৌরসভায় একজন করে এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট থাকবেন। ১৪ ডিসেম্বর থেকে প্রতীকসহ নির্বাচন প্রার্থীদের আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরু হবে। তখন আচরণবিধি লঙ্ঘন হলে তাত্ক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা নেবেন এসব হাকিমরা। প্রসঙ্গত, এ নির্বাচনে মেয়র পদে সহস্রাধিক ও কাউন্সিলর পদে প্রায় ১২ হাজার প্রার্থী বৈধতা পেয়েছেন। ১৩ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের পর প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী চূড়ান্ত হবে। তারা প্রচারণায় যাবেন সোমবার থেকে।

১৯ দিন থাকবেন ২৩৪ নির্বাহী হাকিম : নির্বাচন ব্যবস্থাপনা শাখার উপ-সচিব সামসুল আলম জানান, পৌরসভা নির্বাচনে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও অপরাধ প্রতিরোধ কার্যক্রম পরিচালনায় প্রতিটি পৌরসভার জন্য ২৩৪ জন ম্যাজিস্ট্রেট প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ১৩ ডিসেম্বর থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত নির্বাচনী মাঠে অবস্থান করবেন।

ভোটের আগে-পরে ৪ দিন : ইসি কর্মকর্তারা জানান, আগামী ১৯ ডিসেম্বর আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক বৈঠকের পরই নিরাপত্তা সদস্যের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে। আচরণবিধি তদারকিতে মাঠে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভ্রাম্যমাণ ও স্ট্রাইকিং ফোর্সের নেতৃত্ব দেবেন নির্বাহী হাকিম। নির্বাচনী বিধি লঙ্ঘনে ব্যবস্থা নেবেন বিচারিক হাকিমরা। ২৮ থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত চার দিনের জন্য তাদের নিয়োগ করা হবে। পৌর নির্বাচনী এলাকায় নির্বাচনী অপরাধ আমলে নিতে প্রতি পৌরসভায় একজন করে ও আঠারোর বেশি সংখ্যক ওয়ার্ডের পৌরসভায় দুজন করে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করা হবে। এতে করে ২৩৪টি পৌরসভায় ২৩৯ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ পাবেন। এ সময় প্রতিটি পৌরসভার তিনটি ওয়ার্ডের জন্য একজন করে ৭৩০ জন নির্বাহী হাকিম আচরণ বিধি সংক্রান্ত মোবাইল কোর্ট পরিচালনার জন্য থাকবেন। ইসির আইন শাখার একাধিক কর্মকর্তা জানান, নির্বাচনী বিধি লঙ্ঘনের অপরাধে ছয় মাস থেকে সর্বোচ্চ সাত বছর পর্যন্ত এবং আচরণবিধি লঙ্ঘনের ঘটনায় অনধিক ছয় মাসের কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে। বিচারিক হাকিম নির্বাচনী অপরাধ ও আচরণবিধি লঙ্ঘনের ঘটনায় সর্বোচ্চ সাত বছর পর্যন্ত সাজা দেওয়ার এখতিয়ার রাখেন। অন্যদিকে নির্বাহী হাকিম ছয় মাস থেকে সর্বোচ্চ দুই বছর পর্যন্ত সাজা দিতে পারেন। এর সঙ্গে অর্থদণ্ডের বিধানও রাখা হয়েছে। বিধি লঙ্ঘনের দায়ে সংশ্লিষ্ট প্রার্থীর বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে প্রার্থিতা বাতিলের ক্ষমতাও রয়েছে ইসির। প্রসঙ্গত, পৌরসভা নির্বাচনে সাড়ে তিন হাজার ভোটকেন্দ্রে ভোট হবে। এবার পুরুষ ভোটার রয়েছেন ৩৫ লাখ ৮৬ হাজার ৩৫৬ জন এবং নারী ভোটার ৩৫ লাখ ৭৬ হাজার ৪০ জন। মেয়র পদের সংখ্যা ২৩৪, সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদের সংখ্যা ৭৩৮, সাধারণ কাউন্সিলর পদের সংখ্যা ২ হাজার ৯৫২টি। ভোটগ্রহণ করবেন মোট ৬১ হাজার ১৪৩ জন কর্মকর্তা।

প্রার্থিতা প্রত্যাহারের আজ শেষ দিন : আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন আজ। কাল ১৪ ডিসেম্বর চূড়ান্ত প্রার্থীদের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ করবেন সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং অফিসাররা। এরপর দলীয় প্রতীক নিয়ে নির্বাচনী মাঠে নামবেন মেয়র প্রার্থীরা। এবার প্রথমবারের মতো ২৩৪ পৌরসভায় মেয়র পদে দলীয়ভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের প্রতীক বরাদ্দ পাবেন সংশ্লিষ্ট দল মনোনীত মেয়র প্রার্থীরা। আর স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থীরা পাবেন ইসির সংরক্ষিত প্রতীক। এ ছাড়া নির্দলীয়ভাবে আগের মতোই সাধারণ ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর প্রার্থীদেরও প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হবে। জানা গেছে, মেয়র পদে রাজনৈতিক দল মনোনীত প্রার্থীর জন্য ৪০টি, মেয়র পদে স্বতন্ত্র প্রার্থীর জন্য ১২টি, সাধারণ কাউন্সিলর ১২টি ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদের জন্য ১০টি প্রতীক রয়েছে। এ ছাড়া প্রার্থিতা প্রত্যাহারের পরে মেয়র পদে স্বতন্ত্র প্রার্থীর সংখ্যা ১২ জনের অধিক, সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থীর সংখ্যা ১২ জনের অধিক ও সংরক্ষিত কাউন্সিল প্রার্থীর সংখ্যা ১০ জনের অধিক হলেও ইসির সংরক্ষিত অতিরিক্ত প্রতীক বরাদ্দ দেবেন সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং অফিসাররা।

সর্বশেষ খবর