বুধবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

বিদ্রোহীর দাপট ও নেতৃত্বে ‘ব্যর্থতা’ বিএনপির

নিজস্ব প্রতিবেদক, বগুড়া ও ফেনী প্রতিনিধি

নিজ দুর্গেই দুর্বল হয়ে পড়েছে ধানের শীষ। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের জন্মভূমি বগুড়ায় ক্রমেই দুর্বল হয়ে পড়ছে দলটি। একইভাবে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নিজ জেলা ফেনী বিএনপিতে চরম নাজুক অবস্থা। জনসমর্থনে এগিয়ে থাকলেও এ দুই জেলায় নেতৃত্বে চরম ব্যর্থতা দেখা দিয়েছে। এর প্রভাব পড়েছে আসন্ন পৌর নির্বাচনেও। বগুড়া : বগুড়ায়       বিএনপির দুর্গে আঘাত হানতে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীরা। বিএনপির একাধিক বিদ্রোহী প্রার্থী থাকায় আওয়ামী লীগ ক্রমেই শক্তিশালী হয়ে উঠছে। অবশ্য মামলায় কাবু বিএনপির নেতা-কর্মীরা আত্মগোপনেও রয়েছেন। আবার বগুড়ায় জামায়াতও শক্ত ঘাঁটি গেড়ে বসেছে। স্থানীয় ভোটাররা বলছেন, বিএনপির দুর্গে এবার বিএনপিই দুর্বল হয়ে পড়ল। বিগত নির্বাচনে সাতটি সংসদীয় আসনের মধ্যে দুটি এবং নয় পৌরসভার মধ্যে দুটিতে জয় পায় আওয়ামী লীগ। এ জয়ের ধারা অব্যাহত রাখতে আওয়ামী লীগ রাত-দিন চেষ্টা করছে। জেলায় পৌর নির্বাচন হবে নয়টি পৌরসভায়। মেয়াদ থাকায় দুপচাঁচিয়া, জটিলতার কারণে তালোড়া এবং সীমানা নিয়ে জটিলতার কারণে নির্বাচন হচ্ছে না সোনাতলা পৌরসভায়। গত পৌর নির্বাচনে ধুনট পৌরসভায় আওয়ামী লীগ নেতা এ জি এম বাদশা ও কাহালু পৌরসভায় হেলাল উদ্দিন কবিরাজ মেয়র হন। বিএনপির দুর্গে দুটি পৌরসভায় মেয়র প্রার্থী জয়ী হওয়ায় এবার আওয়ামী লীগ স্বপ্ন দেখছে সব কটি পৌরসভায় জয় পেতে। এ জন্য আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা বিভিন্ন এলাকায় দলীয় প্রার্থীদের পক্ষে ভোট প্রার্থনা করে যাচ্ছেন। এলাকায় গণসংযোগ করছেন আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ। তবে আওয়ামী লীগ মাঠে নামলেও বসে নেই বিএনপির সমর্থক ও নেতা-কর্মীরা। জেলা বিএনপির সভাপতি ভিপি সাইফুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদিন চানসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ পৌরসভার বর্ধিত এলাকায় গণসংযোগ করছেন ধানের শীষের পক্ষে। বগুড়া পৌরসভার মেয়র পদে প্রার্থী হয়েছেন বর্তমান মেয়র ও বিএনপি মনোনীত অ্যাডভোকেট এ কে এম মাহবুবর রহমান, সাবেক চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ মনোনীত অ্যাডভোকেট রেজাউল করিম মন্টু এবং ইসলামী ঐক্যজোট মনোনীত প্রকৌশলী এস এম শামছুল হক। ২১টি ওয়ার্ডে সাধারণ ও সংরক্ষিত ওয়ার্ডে প্রার্থী রয়েছেন শতাধিক। বগুড়ার কাহালু পৌরসভায় আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী হেলাল উদ্দিন কবিরাজ। আর বিএনপির প্রার্থী আবদুল মান্নান ওরফে ভাটা মান্নান। এ পৌরসভা থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন জামায়াত নেতা কারাবন্দী জহুরুল ইসলাম বাদশা। শিবগঞ্জে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের তৌহিদুর রহমান মানিক এবং বিএনপি থেকে মতিয়ার রহমান মতিনকে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করার পরও আরেক বিএনপি নেতা এস এম তাজুল ইসলাম মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। নন্দীগ্রামে মেয়র পদে লড়ছেন বিএনপি মনোনীত বর্তমান মেয়র সুশান্তকুমার শান্ত এবং বিএনপির বিদ্রোহী পৌর বিএনপির সহ-সভাপতি আবুল কাসেম, সাবেক মেয়র বিএনপি নেতা কামরুল হাসান সিদ্দিকী জুয়েল। আওয়ামী লীগের মনোনীত রয়েছেন রফিকুল ইসলাম পিংকু। এ ছাড়া অন্যান্য পৌরসভায় বিএনপির নেতা-কর্মীদের নামে নাশকতার মামলা রয়েছে। মামলায় গা বাঁচিয়ে চলার কারণে নির্বাচনে সামনে নামছেন না। নেপথ্যে কাজ করে যাচ্ছেন।

ফেনী : বিএনপি অধ্যুষিত বেগম খালেদা জিয়ার নিজ জেলা ফেনীতে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে বিএনপি। ১০ বছর ধরে এ জেলায় নেই বিএনপির কোনো কার্যালয়। উপজেলা নির্বাচনে ফেনীতে ভরাডুবির পর প্রথম দফার পৌরসভা নির্বাচনে দেখা দিয়েছে তার চেয়েও বেশি ভয়ানক সংকট। প্রথম দফার পৌর নির্বাচনে ফেনীর পাঁচটি পৌরসভার মধ্যে তিনটিতে নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা ছিল। কিন্তু নির্বাচন হবে শুধু ফেনীর দাগনভূঞায় মেয়র ও তিন কাউন্সিলর এবং ফেনী পৌরসভায় এক কাউন্সিলর পদে। পরশুরামে অনুষ্ঠিত হবে না কোনো নির্বাচন। তিন পৌরসভায় তিন মেয়র ও ৪৮ কাউন্সিলর পদে নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও ফেনী ও পরশুরামে দুই মেয়রসহ তিন পৌরসভায় ৪৬ প্রার্থী একক প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হয়ে গেছেন। দাগনভূঞায় আওয়ামী লীগের টিকিটে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন বর্তমান মেয়র ও পৌর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক খান। বিএনপির টিকিটে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করছেন পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কাজী সাইফুর রহমান স্বপন। সাইফুর রহমান স্বপন শারীরিকভাবে অসুস্থ এবং বিএনপির তৃতীয় সারির নেতা। এ ব্যাপারে জেলা যুবদল সভাপতি গাজী হাবিব উল্যাহ মানিক জানান, অকেজো ব্যক্তিদের হাতে জেলা বিএনপির দায়িত্ব থাকায় ফেনীতে আজ বিএনপির করুণ দশা। সরকার দলের সঙ্গে লিয়াজোঁ করে চলতে চলতে তারা মেরুদণ্ডহীন হয়ে পড়েছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক বিএনপি নেতা জানান, ফেনী সদর আসনের বিএনপি মনোনীত প্রার্থী ফজলুল হক বকুলের মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইকালে যে বাতিল হবে তা স্বয়ং বকুল ও জেলা বিএনপির শীর্ষ নেতৃবৃন্দ জানতেন। বকুল ইচ্ছাকৃত হলফনামায় সাজাপ্রাপ্তির তথ্য গোপন ও পৌরসভার ইজারার টাকা পরিশোধ না করার তথ্য গোপন করেছেন। পরশুরামের বিএনপির প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীর বাল্যবন্ধু। যোগসাজশেই তার নমিনেশনে পেপারে সমস্যা রাখা হয়েছিল। ১৫ হাজার টাকা জামানতের পরিবর্তে ১০ হাজার টাকা জামানত দেওয়া হয়েছিল এবং ইচ্ছাকৃতভাবেই প্রস্তাবকারী ও সমর্থনকারীদের স্বাক্ষর জালিয়াতি করা হয়েছিল। জেলা আওয়ামী লীগের এক নেতাকে খুশি রাখতেই তার পরামর্শে বিএনপির শীর্ষ নেতৃবৃন্দ তাদের মনোনয়ন দিয়েছেন বলে জেলাব্যাপী ব্যাপক প্রচারণা আছে। বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করতে আগ্রহী এমন অনেকে জানান, দলের পক্ষ থেকে কোনোরকম সহযোগিতা না পাওয়ায় তারা নির্বাচন করার সাহস পাননি। বিএনপির স্থানীয় নেতৃবৃন্দ জানান, জেলা বিএনপির শীর্ষ নেতৃবৃন্দের ব্যর্থতায় তারা প্রার্থী দিতে পারেননি, আওয়ামী লীগকে দোষ দিয়ে লাভ নেই। এদিকে ফেনী ও পরশুরামে বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র বাতিলের প্রতিবাদে জেলা বিএনপি নামকাওয়াস্তে একটি সংবাদ সম্মেলন করে। সেখানে গণমাধ্যমকর্মীরা বিএনপি জেলা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে বার বার প্রশ্ন করেন তারা পুনরায় নির্বাচনী তফসিল দাবি করেন কিনা? কিন্তু একটিবারের জন্যও তারা এ প্রশ্নের উত্তর দেননি। দ্বিতীয় ও তৃতীয় সারির নেতৃবৃন্দকে কেন তিন পৌরসভায় মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে? সে ব্যাপারে জানান, প্রথম সারির নেতারা নির্বাচন করতে আগ্রহী না থাকায় বাধ্য হয়ে দ্বিতীয় ও তৃতীয় সারির নেতাদের মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। বিএনপিকে মনোনয়নপত্র জমা দিতে আওয়ামী লীগ কর্মীরা বাধা দিয়েছেন এমন কোনো অভিযোগ নির্বাচন কমিশনকে করা হয়েছে কিনা— এ ব্যাপারে জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অ্যাডভোকেট আবু তাহের জানান, নির্বাচন কমিশনে আমরা লিখিত কোনো অভিযোগ দিইনি। তবে কেন্দ্রীয় বিএনপিকে জানিয়েছি।

সর্বশেষ খবর