বুধবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

এশিয়ান হাইওয়েতে যুক্ত হবে কর্ণফুলী টানেল

আজ উঠছে মন্ত্রিসভা ক্রয় কমিটিতে

নিজামুল হক বিপুল ও মানিক মুনতাসির

এশিয়ান হাইওয়েতে যুক্ত হবে কর্ণফুলী টানেল

কর্ণফুলী টানেল নির্মাণের আনুষ্ঠানিক কাজ শুরু হচ্ছে শিগগিরই। আজই এই প্রকল্পের আর্থিক বিষয়টি উঠছে ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে। ৮ হাজার ৪৪৬ কোটি ৬৪ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিতব্য এই প্রকল্প যুক্ত হবে এশিয়ান হাইওয়ের সঙ্গে। এর বাইরে আরও চারটি বিষয়কে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে এই প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে। যার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে সাগরকন্যা কক্সবাজারের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য নতুন সড়ক নির্মাণ ও চট্টগ্রাম শহরকে আরও আধুনিক করে তোলা। ইতিমধ্যে এ প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাইসহ আনুষঙ্গিক কাজ শেষ হয়েছে। চীনের রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হবে। সেতু বিভাগ সূত্র জানায়, কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বহু লেনবিশিষ্ট কর্ণফুলী টানেলের আনুষ্ঠানিক নির্মাণ কাজ শিগগিরই শুরু হবে। চট্টগ্রাম বিমানবন্দর থেকে কর্ণফুলী নদীর প্রায় দুই কিলোমিটার ভাটির দিকে নির্মাণ করা হবে বাংলাদেশের প্রথম টানেল। টানেলের মোট দৈর্ঘ্য ৯ কিলোমিটার। এর মধ্যে একাধিক লেনবিশিষ্ট মূল টানেলের দৈর্ঘ্য হবে ৩ দশমিক ৪ কিলোমিটার। এই টানেলের প্রবেশমুখ হবে চট্টগ্রাম নেভি কলেজের কাছে। এটির বাহির পথ হবে সার কারখানার কাছে। এই প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে চট্টগ্রাম শহরে নিরবচ্ছিন্ন ও যুগোপযুগী সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলা এবং বিদ্যমান সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার আধুনিকায়ন, এশিয়ান হাইওয়ের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন, প্রকল্পের আওতায় কর্ণফুলী নদীর পূর্ব তীর ঘেঁঁষে গড়ে ওঠা শহরের সঙ্গে ডাউন-টাউনকে যুক্ত করা এবং উন্নয়ন কাজ ত্বরান্বিত করা, চট্টগ্রাম বন্দরের বিদ্যমান সুযোগ সুবিধা বাড়ানোর পাশাপাশি প্রস্তাবিত গভীর সমুদ্রবন্দরের নির্মাণ ত্বরান্বিত করা। ইতিমধ্যে এই প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ শেষ হয়েছে। নির্মাণ প্রতিষ্ঠান চীনের চায়না কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন কোম্পানি লিমিটেডের (সিসিসিসি) সঙ্গে সরকারের চুক্তিও হয়ে গেছে। চুক্তির আওতায় সিসিসিসি গত ২৮ ফেব্রুয়ারি কমার্শিয়াল প্রস্তাবও দাখিল করেছে। গত ২৪ জুন সিসিসিসির কমার্শিয়াল প্রস্তাবটি সরকারি অর্থনৈতিক সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতেও অনুমোদন করা হয়। এর এক সপ্তাহ পর ৩০ জুন সিসিসিসির সঙ্গে সরকার কমার্শিয়াল চুক্তি স্বাক্ষর করে। সিসিসিসি ইতিমধ্যে ভূ-তাত্ত্বিক সার্ভে ও সাব-সয়েল ইনভেস্টিগেশন কাজ শুরু করেছে। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ভূমি অধিগ্রহণ পরিকল্পনা (এলএপি), রিসেটেলমেন্ট অ্যাকশন প্ল্যান (আরএফপি) এবং পরিবেশ ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা (ইএলএ) প্রণয়ন করতে ইতিমধ্যে সরকার পরামর্শক নিয়োগ দিয়েছে। এই তিনটি প্রতিবেদনই ইতিমধ্যে জমা দিয়েছে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান। নকশা রিভিউ ও কনস্ট্রাকশনস সুপারভিশন কাজের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগের কাজ চলছে। প্রসঙ্গত, বিগত মহাজোট সরকারের অগ্রাধিকার প্রকল্পগুলোর মধ্যে অন্যতম চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীতে টানেল নির্মাণ। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর এই টানেল নির্মাণের বিষয়ে একাধিকবার কথা বলেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তারপর কর্ণফুলী নদীর নিচ দিয়ে বহুল প্রত্যাশিত এই টানেল নির্মাণের প্রাথমিক কাজ শুরু হয়েছিল গত বছর। কর্ণফুলী নদীতে টানেল নির্মাণের চূড়ান্ত চুক্তি করতে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের গত জুন মাসের শেষ দিকে চীনে যান। সেখানেই চীন সরকারের সঙ্গে টানেল নির্মাণের চুক্তি হয়। ২০১৮ সালের মধ্যে এই টানেল নির্মাণের কাজ শেষ করার কথা রয়েছে।

সর্বশেষ খবর