বুধবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

এক পৌরসভায় এমপির চার প্রার্থী

লাকমিনা জেসমিন সোমা

এক পৌরসভায় এমপির চার প্রার্থী

নড়াইলের কালিয়া পৌর নির্বাচনে স্থানীয় আওয়ামী লীগ এমপির চার প্রার্থী মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। চূড়ান্ত জয়ের লক্ষ্যে একাধিক বিকল্প প্রার্থী সমর্থন দিয়ে রেখেছেন এই আওয়ামী লীগ নেতা। তিনি নড়াইল-২ আসনের এমপি কবিরুল হক মুক্তি। কেবল কালিয়া পৌরসভা নয়, নড়াইল সদর পৌরসভায়ও তিনি নিজ দলের মনোনীত প্রার্থীকে বাদ দিয়ে ব্যক্তিগত পছন্দের একাধিক প্রার্থীকে সমর্থন দিয়েছেন। কাজ করছেন তাদের হয়েই। মূলত দুই পৌরসভায় নিজ দলের বিদ্রোহী প্রার্থীদের জন্য জোরেশোরে কাজ করছেন তিনি। গতকাল দুই পৌরসভা ঘুরে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।জানা যায়, এবার পৌর নির্বাচনে প্রথম পর্যায়ে নড়াইলের দুই পৌরসভায় নির্বাচন হচ্ছে। একটি নড়াইল সদর এবং অপরটি কালিয়া। নড়াইলের দুই সংসদীয় আসনের একটিতে (সদর) ওয়ার্কার্স পার্টির এমপি হওয়ায় মূলত দুই পৌরসভায় নির্বাচনী হালচাল নিয়ন্ত্রণ করছেন আওয়ামী লীগ দলীয় এমপি মুক্তি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, কালিয়া পৌরসভায় আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন অহিদুজ্জামান হিরা। দলের এ প্রার্থীর জন্য কাজ করছেন না এমপি মুক্তি। যা করছেন সবটুকুই লোক দেখানো। বরং লোকচক্ষুর আড়ালে সক্রিয়ভাবে কাজ করছেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মুশফিকুর রহমান লিটনের পক্ষে। অভিযোগ রয়েছে, তার ব্যক্তিগত পছন্দের এ প্রার্থীর জন্য নির্বাচনী নীতিমালা ভঙ্গ করে গোপনে ভোট চাওয়া থেকে শুরু করে বিভিন্ন ঘরোয়া সভা-সমাবেশ করছেন তিনি। এ নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা ভ্রাম্যমাণ আদালতে অভিযোগ করলেও আমলে নেননি কেউ। কিন্তু গতকাল বিষয়টির সত্যতা পেয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রবিউল ইসলামকে প্রত্যাহার করেছেন রিটার্নিং অফিসার। সংশ্লিষ্ট পৌরসভায় এমপি মুক্তির আরও দুজন প্রার্থী রয়েছেন। তারা আত্মীয়। এদের একজনের নাম বি এম এমদাদুল হক টুলু। তিনি চাচাতো ভাই। তিনিও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন। অন্যজন হলেন সোহেলী পারভীন নিরি। তিনিও সম্পর্কে ভাগ্নি। এভাবে চারজন প্রার্থীকে সমর্থন দিয়ে রেখেছেন আওয়ামী লীগ নেতা মুক্তি। এদিকে, বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে প্রার্থী হয়েছেন অহিদুজ্জামান মিলু। এখানে বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন ইকরাম রেজা। অভিযোগ রয়েছে, এমপি মুক্তির মদদেই বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন ইকরাম। মূলত বিএনপির দলীয় প্রার্থীর ভোট নষ্ট করতেই এ প্রার্থীকে ম্যানেজ করেছেন তিনি। তবে ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে এ পৌরসভায় আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী অহিদুজ্জামান এবং বিদ্রোহী প্রার্থী মুশফিকুর রহমানের শক্ত অবস্থানের কথা জানা গেছে। বিএনপি মনোনীত অহিদুজ্জামান মিলুরও নাম শোনা যাচ্ছে।

সদর পৌরসভার হালচাল : এদিকে নড়াইল সদর পৌরসভায় আওয়ামী লীগের সমর্থন নিয়ে মাঠে রয়েছেন জাহাঙ্গীর বিশ্বাস। আর আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে শক্ত অবস্থানে রয়েছেন চারবারের নির্বাচিত মেয়র জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সোহরাব হোসেন। এ পৌরসভায় পৌর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক সরদার আলমগীর হোসেনের অবস্থানও ভালো। জানা গেছে, সদরে অ্যাডভোকেট হাফিজুর রহমান ওয়ার্কার্স পার্টির এমপি হওয়ায় তিনি খুব একটা সক্রিয় নন। ফলে নির্বাচনের ক্ষেত্রে এ পৌরসভাও নিয়ন্ত্রণ করছেন এমপি মুক্তি। এখানে তার সমর্থিত দুজন প্রার্থী রয়েছেন। অভিযোগ রয়েছে, এ পৌরসভায়ও আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী জাহাঙ্গীর বিশ্বাসের জন্য কাজ করছেন না এমপি মুক্তি। বরং এখানে বিদ্রোহী প্রার্থী যুবলীগ নেতা সরদার আলমগীর হোসেন এবং সাবেক মেয়র ও আওয়ামী লীগ নেতা সোহরাব হোসেনের জন্য কাজ করছেন তিনি। আর দল মনোনীত জাহাঙ্গীর বিশ্বাসের জন্য কাজ করছেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সেক্রেটারি। এ পৌরসভায় বিএনপি মনোনীত প্রার্থী সদ্য সাবেক পৌর মেয়র জুলফিকার আলী মণ্ডলের অবস্থান বেশ ভালো। বিএনপির এ প্রার্থীকে নিয়ে দলীয় সমন্বয় না থাকলেও ব্যক্তিগত ইমেজের কারণে অনেকটা এগিয়ে আছেন তিনি। গতকালও স্থানীয় একটি ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে জুলফিকারের বিরুদ্ধে দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে সমন্বয় না করার অভিযোগ করেছে জেলা বিএনপির একাংশ। একই সঙ্গে তারা জেলা সভাপতি বিশ্বাস জাহাঙ্গীর আলম এবং সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদের শিকদারের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ প্রীতির অভিযোগ এনেছেন। এদিকে এসব অভিযোগের বিষয়ে মুঠোফোনে ও খুদে বার্তা পাঠিয়েও এমপি মুক্তির সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

সর্বশেষ খবর