শিরোনাম
বুধবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

অটিজম কোনো রোগ নয়

নিজস্ব প্রতিবেদক

অটিজম কোনো রোগ নয়

অটিজমবিষয়ক জাতীয় উপদেষ্টা কমিটির চেয়ারপারসন ও প্রধানমন্ত্রী কন্যা সায়মা ওয়াজেদ হোসেন পুতুল বলেছেন, অটিজম কোনো রোগ নয়। তবে এতে স্বাভাবিক হাঁটাচলা, কথাবার্তা, আচরণ, বুদ্ধিমত্তা প্রকাশে সমস্যার সৃষ্টি হয়। যদিও তাদের মেধার কোনো সংকট নেই। ধৈর্য ধরে তাদের শেখালে তারা শিখতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে প্রতি ৬০ জনে একজন অটিজম আক্রান্ত শিশু রয়েছে। আমাদের দেশেও এ নিয়ে গবেষণা চলছে। এসব শিশুকে সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করে মানবসম্পদে পরিণত করতে তিনি সংসদ সদস্যসহ সবার প্রতি আহ্বান জানান। জাতীয় সংসদের শপথকক্ষে গতকাল ‘স্নায়ু বিকাশজনিত সমস্যাবিষয়ক কর্মশালা’য় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে তিনি এ আহ্বান জানান। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে কর্মশালায় বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ, চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজসহ শতাধিক সংসদ সদস্য উপস্থিত ছিলেন। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির উদ্যোগে জাতীয় সংসদ সচিবালয় এ কর্মশালার আয়োজন করে।

সায়মা ওয়াজেদ হোসেন বলেন, অটিজম বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানোর আগে আমাদেরকে মানুষের মধ্যে যে ভুল ধারণাগুলো রয়েছে সেগুলো বদলাতে হবে। ভুল ধারণার উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, আমাদের অনেক মায়েরাই তার বাচ্চা তিন বছরে কথা বলতে না পারলে শঙ্কিত বোধ করেন। এটাই স্বাভাবিক। তবে এ সময় অনেকে বলে থাকেন, ও কিছু না, আমার চাচাতো বোনের মেয়েও তো পাঁচ বছর বয়সে কথা বলতে শিখেছে। এটাই ভুল। এ ভুল ধারণা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। আধুনিক গবেষণায় দেখা গেছে শিশুরা ১৮ মাস থেকেই কথা বলতে শুরু করে। শিশুরা সাধারণত ৭ মাস থেকে বুঝতে শেখে, ১৮ মাস থেকে তাদের ব্রেন বিভিন্ন বিষয়ে ফোকাস করে কাজ করতে শুরু করে। এ জন্য কানে শোনা বা কথা বলার ক্ষেত্রে দেরি হলে যথাসম্ভব তাড়াতাড়ি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। এ জন্য কোনো ওষুধ নেই। এ ধরনের শিশুদের পিতা-মাতার কাউন্সেলিং শিশুর জন্য থেরাপি জরুরি। এ জন্য মাঠ পর্যায়ে কাজ করতে হবে। ভুল ধারণা বদলাতে সংসদ সদস্যরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন। সায়মা ওয়াজেদ আরও বলেন, প্রতিবন্ধিতা দূরীকরণে যথাসম্ভব কম বয়স থেকেই তার যত্ন নেওয়া প্রয়োজন। আগে মনে করা হতো শিশু যেমন ব্রেন নিয়ে জন্মেছে তেমনই থাকে। আধুনিক গবেষণায় দেখা গেছে, একটি শিশুর ৭ বছর পর্যন্ত মস্তিষ্কের বৃদ্ধি হয়। মস্তিষ্কের স্বাভাবিক বৃদ্ধিতে কোনো সমস্যা হলে প্রতিবন্ধিতা সৃষ্টি হয়। সময়মতো প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পেলে প্রতিবন্ধিতা অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব। এ বিষয়ে বাবা-মাকে সচেতন থাকতে হবে। তিনি প্রতিবন্ধী শিশুদেরকে সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করে মানবসম্পদে পরিণত করতে সংসদ সদস্যসহ সবার প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, অটিজম আক্রান্ত শিশুরা স্বাভাবিকভাবে শিখতে পারে না। ওদের ধৈর্য ধরে শেখাতে হয়। অনেকে সহজে পড়ালেখা করতে পারে না। কিন্তু তাদের মেধা আছে। আগে অটিজমকে মেধার সমস্যা মনে করা হতো। আসলে তা নয়। তাদের শেখালে তারা শেখে। তবে ওরা অনেক সময় প্রকাশ করতে পারে না। অনেকে শত চেষ্টা করেও হাতের লেখা সুন্দর করতে পারে না, কেউ কেউ আবার পড়তে পারে না, ভারতে এর ওপর ছবি হয়েছে ‘তারে জমিন পর’ আপনারা হয়তো অনেকে দেখেছেন বা শুনেছেন। আবার অনেকে পড়েও মনে রাখতে পারেন না। অনেকের মধ্যে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে এক ধরনের অনীহা কাজ করে। আবার অনেকে মাঝপথে কাজ ছেড়ে দেন। এটিও এক ধরনের অটিজম। অনেকের চেহারা চাইনিজদের মতো হয়। এটিও একটি অটিজম। কিন্তু অনেকেই এ জন্য এসব শিশুর মা অন্যের সঙ্গে মিশেছে বলে দোষারোপ করেন। এটি একটি ভুল ধারণা।

তিনি আরও বলেন, আমাদের সমাজে বিভিন্ন ধরনের প্রতিবন্ধী ব্যক্তি রয়েছে। এদের একেকজনের ধরন একেকরকম। কেউ দীর্ঘ সময় পর কথা বলতে শেখে, কেউ বা বুঝতে পারলেও বলতে পারে না। অনেক অটিজম আক্রান্ত শিশুর অতিরিক্ত শব্দ, আলো ভালো লাগে না। এতে তারা আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। এসবই নিউরোলজিক্যাল সমস্যা বলে চিকিৎসা বিজ্ঞানে এর নতুন নামকরণ হয়েছে নিউরো ডেভেলপমেন্ট ডিজঅর্ডার। যার একটি রূপ হচ্ছে অটিজম। কর্মশালায় আরও বক্তব্য দেন ডেপুটি স্পিকার মো. ফজলে রাব্বি মিয়া, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি মো. মোজাম্মেল হোসেন, বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত, নিউরো ডেভেলপমেন্ট ডিজঅ্যাবিলিটি প্রোটেকশন ট্রাস্ট অব বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ডা. মো. গোলাম রাব্বানী, সংসদ সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব মো. আশরাফুল মকবুল। পরে ১০ জনের ১০টি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে এমপিরা দিনব্যাপী কর্মশালায় অংশ নেন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর