রবিবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

জঙ্গি প্রশিক্ষণ হতো মিরপুরের আস্তানায়

নিজস্ব প্রতিবেদক

বড়দিন কিংবা কোনো উৎসবে ভয়ঙ্কর নাশকতার পরিকল্পনায় জামা’আতুল মুযাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) সদস্যরা মিরপুরে জঙ্গি আস্তানায় গ্রেনেড ও বিস্ফোরক মজুদ করেছিল। ওই আস্তানাটি গ্রেনেড তৈরি ও জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহূত হতো বলে জানিয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। মিরপুরের জঙ্গি আস্তানা থেকে সাতজনকে গ্রেফতারের ঘটনায় শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর শাহআলী থানায় পাঁচজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও পাঁচ-ছয়জনকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে। গ্রেফতার হওয়া আসামিদের মধ্যে তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ছয় দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার মিরপুর ১ নম্বর সেকশনের ৯ নম্বর সড়কের ৩ নম্বর বাড়িতে টানা ১৩ ঘণ্টা অভিযান চালিয়ে জেএমবির তিন সদস্যসহ সাতজনকে গ্রেফতার করে ডিবি পুলিশ। ওই আস্তানা থেকে ১৬টি তাজা গ্রেনেড ও বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক উদ্ধার করা হয়। ডিবি পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) ছানোয়ার হোসেন জানান, সাধারণত কোনো হামলার কয়েক ঘণ্টা আগে জঙ্গি সদস্যদের হামলার স্থান জানানো হয়। এর আগে হামলার প্রস্তুতি নিতে বলা হয়। গ্রেফতারকৃতদের প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে বলা হয়েছিল। বড় ধরনের কোনো হামলার পরিকল্পনায় তারা একত্রিত হয়েছিল। তাদের গ্রেফতারের ফলে বড় ধরনের হামলা ঠেকানো গেছে। তিনি আরও জানান, বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক ও গ্রেনেড উদ্ধারের ফলে জেএমবির এই অংশটি দুর্বল হয়ে গেছে। তাদের মজুদ করা সব গ্রেনেড ও বিস্ফোরক জব্দ করা হয়েছে। এই ধরনের বিস্ফোরক ও গ্রেনেড তাদের আর কোথাও মজুদ নেই। ফলে তারা আর সহসাই কোনো ধরনের গ্রেনেড হামলা চালাতে পারবে না। শাহআলী থানার এসআই আবদুল্লাহ রাজ জানান, ডিবির পরিদর্শক মো. শফিউদ্দিন শুক্রবার দুপুরে গ্রেনেড ও বিস্ফোরক উদ্ধারের ঘটনায় পাঁচজনের নাম উল্লেখ করে শাহ আলী থানায় মামলা করেন। বাকি পাঁচ থেকে ছয়জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে। আসামিদের মধ্যে রয়েছে— জেএমবির সমন্বয়ক ইস্টওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আবু সাইদ ওরফে রাসেল ওরফে ওমর ফারুক, সাভারের আল-আরাফাহ ব্যাংক শাখার পিয়ন মোহাম্মদ ইলিয়াস, বোমা বিশেষজ্ঞ জয়পুরহাটের মহসিন আলী ওরফে রুবেল, মুস্তাফিজুর রহমান মুস্তাক ও সোহেল রানা। ঘটনার সময় জেএমবির অপারেশনাল চিফ এবং আরও এক নেতা সাংগঠনিক কাজে বাইরে থাকায় তাদের গ্রেফতার করা যায়নি। তবে শনিবার পর্যন্ত মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নির্ধারণ করা হয়নি। ডিবির ডিসি পশ্চিম মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ঠিক করবেন বলে তিনি জানান। পুলিশ জানিয়েছে, গ্রেফতার হওয়া তিন জঙ্গিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ছয় দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। তারা হলো আবু সাইদ, মোহাম্মদ ইলিয়াস ও মহসীন। ঢাকার মহানগর হাকিম মুহাম্মদ মাজহারুল ইসলাম শুক্রবার তাদের রিমান্ড মঞ্জুর করেন বলে আদালত পুলিশের এসআই শহীদুল ইসলাম জানিয়েছেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের এসআই মোমিন খান আসামিদের আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। পরে বিচারক তাদের ছয় দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। তদন্ত কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মিরপুরের ওই জঙ্গি আস্তানাটি বোমা-গ্রেনেড তৈরি ও জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহূত হতো। গত চার মাসে ওই আস্তানায় এক ডজন জঙ্গি প্রশিক্ষণ নিয়েছে। এর আগে গত সেপ্টেম্বর মাসে চট্টগ্রামের একটি মাজারে বোমা হামলার পর গ্রেফতার হওয়া জঙ্গিরা জানিয়েছিলেন মিরপুরের একটি ছয়তলা বাসায় তাদের বোমা তৈরির প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। চট্টগ্রামে গ্রেফতার হওয়া জঙ্গিদের বর্ণনার সেই বাড়িটিই বৃহস্পতিবার ডিবির অভিযানের ছয়তলা বাড়ি বলে ধারণা করা হচ্ছে। ওই আস্তানায় প্রশিক্ষণ নেওয়া আরও জঙ্গি এখনো বাইরে রয়েছে। গ্রেফতারকৃতদের কাছ থেকে তথ্য নিয়ে পালিয়ে থাকা জঙ্গিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

সর্বশেষ খবর