রবিবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

রায় প্রদানে অহেতুক বিলম্ব কাম্য নয়

নিজস্ব প্রতিবেদক

রায় প্রদানে অহেতুক বিলম্ব কাম্য নয়

রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ

বিচারে বিলম্ব ও মামলা জট কমাতে বিচারকদের তাগিদ দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। তিনি বলেন, একটি দরখাস্তের শুনানি সমাপ্ত হওয়ার পর বা মোকদ্দমার যুক্তিতর্ক শুনানির পর আদেশ লাভে বা রায় প্রকাশিত হতে যাতে বিলম্ব না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। রায় বা আদেশ প্রদানের ক্ষেত্রে অহেতুক বিলম্ব কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। গতকাল রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতীয় বিচার বিভাগীয় সম্মেলন-২০১৫ এ প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। দ্রুত মামলার রায় হলে বিচারকদের ওপর জনগণের আস্থা বৃদ্ধি পাবে উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, এতে বিচার বিভাগের প্রতি যেমন জনগণের আস্থা বৃদ্ধি পাবে, তেমনি আপনারাও বিবেকের নিকট স্বচ্ছ থাকবেন। তিনি বলেন, বিচার কার্যে কাঙ্ক্ষিত গতি আনয়নের জন্য পর্যাপ্ত বিচার কক্ষ, বিচারকের শূন্যপদে নিয়োগ এবং বিচারক ও মোকদ্দমার সংখ্যায় যুক্তিসঙ্গত ভারসাম্য রক্ষা করা আবশ্যক।

তিনি বলেন, মানুষের শেষ ভরসার স্থল আদালত। ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য সব ধরনের ভীতি ও প্রীতির ঊর্ধ্বে থেকে এবং সর্বোচ্চ নিষ্ঠা ও সততা বজায় রেখে বিচারকরা পক্ষপাতহীনভাবে বিচারকার্য পরিচালনা করবেন, এটাই সবার কাছে প্রত্যাশিত। সহজ ও স্বল্প ব্যয়ে বিচার নিশ্চিত করতে বিচারক ও আইনজীবীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, ন্যায়বিচার প্রাপ্তি মানুষের মৌলিক অধিকার। আমাদের দেশের সাধারণ মানুষ দরিদ্রতা, অশিক্ষা ও অসচেতনতার কারণে অনেক সময় মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়। মানুষের মৌলিক অধিকার তথা সহজ ও স্বল্পব্যয়ে বিচার প্রাপ্তি নিশ্চিত করা সরকারের সাংবিধানিক দায়িত্ব। এ লক্ষ্যে যুগোপযোগী আইন প্রণয়ন ও বিচার অবকাঠামো উন্নয়নে সরকারের পাশাপাশি সহায়ক শক্তি হিসেবে বিচারক ও আইনজীবীদের তিনি বলেন, মামলা পরিচালনায় সম্মানিত আইনজীবীদের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। তাই অহেতুক বিলম্ব বা অত্যধিক আর্থিক চাপের কারণে বিচার কার্যক্রম যাতে বাধাগ্রস্ত না হয় এবং বিচারপ্রার্থীরা যাতে ন্যায় বিচার পায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। প্রধান বিচারপতির প্রশংসা করে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেন, বিচার বিভাগকে ডিজিটালাইজড ও বিচার বিভাগের সামগ্রিক উন্নতির লক্ষ্যে প্রধান বিচারপতির গৃহীত সিদ্ধান্তগুলো প্রশংসার দাবি রাখে। প্রধান বিচারপতির গতিশীল নেতৃত্বে সুপ্রিমকোর্টসহ অধস্তন আদালতে বিচার নিষ্পতির ক্রমাগত বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে বিচার বিভাগের প্রতি বিচার প্রার্থী জনগণের আস্থা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

অনুষ্ঠানে আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেন, সরকারি কর্মচারীদের নতুন বেতন কাঠামোর সঙ্গে সমন্বয় করে বিচারকদের নতুন বেতন-ভাতাও শিগগিরই ঘোষণা করা হবে। এর ফলে বিচারকরা আর্থিকভাবে যেরকম লাভবান হবেন, পাশাপাশি মর্যাদাও বাড়বে।

অনুষ্ঠানে ২০০৫ সালের ১৪ নভেম্বর বোমা হামলায় নিহত ঝালকাঠি জেলা জজ ও দায়রা আদালতের সিনিয়র সহকারী জজ জগন্নাথ পাড়ে এবং মো. সোহেল আহমেদের পরিবারকে সুপ্রিমকোর্টের পক্ষ থেকে অনুদান হিসেবে দুই লাখ টাকার পারিবারিক সঞ্চয়পত্র তুলে দেন রাষ্ট্রপতি। প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, তথ্য ও যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, সুপ্রিমকোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল সৈয়দ আমিনুল ইসলাম, প্রশাসনিক আপিল ট্রাইব্যুনালের সদস্য জ্যেষ্ঠ জেলা জজ মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদার। সম্মেলনে সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি, দেশের নিম্ন আদালতের সর্বস্তরের বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

এক্স-ক্যাডেটদের প্রতি আহ্বান :দেশ ও মানুষের কল্যাণে এক্স-ক্যাডেটদের কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিল দেশকে সোনার বাংলায় পরিণত করা। সে লক্ষ্যে সরকার ‘ভিশন-২০২১’ ও ‘ভিশন-২০৪১’ গ্রহণ করেছে। এই ভিশন বাস্তবায়নে এক্স-ক্যাডেটরা অবদান রাখতে পারেন। গতকাল বিকাল ৩টায় সিলেট ক্যাডেট কলেজ মাঠে ওল্ড ক্যাডেট অ্যাসোসিয়েশন অব সিলেট (ওকাস)-এর ৭ম পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান। তিনি আরও বলেন, দেশের ক্যাডেট কলেজগুলো গুণগত শিক্ষা প্রদানের আদর্শকেন্দ্র। প্রচলিত কারিকুলামের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের সুপ্ত প্রতিভা বিকাশের বিভিন্ন কার্যক্রম এখনো গ্রহণ করা হয়। শরীরচর্চা, খেলাধুলা, বিতর্ক, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতাসহ জ্ঞান-বিজ্ঞানের সর্বশেষ আলোচনা শিক্ষার্থীদের চৌকস করে গড়ে তুলে। তথ্যপ্রযুক্তির সুবিধা থাকায় শিক্ষার্থীরা বিশ্বের সঙ্গে তালমিলিয়ে গড়ে ওঠে। তারা পাবলিক পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করে এবং কর্মজীবনে সাফল্যের স্বাক্ষর রাখে। তাই যারা ক্যাডেট কলেজে পড়ালেখার সুযোগ পেয়েছেন তারা ভাগ্যবান।

অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ওকাস সভাপতি শাহনূর আলম, সিলেট ক্যাডেট কলেজের অধ্যক্ষ কমান্ডার সাইফুর রহমান।

সর্বশেষ খবর