রবিবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

মোদি-নওয়াজের কী কথা হলো

কলকাতা প্রতিনিধি

মোদি-নওয়াজের কী কথা হলো

লাহোর বিমানবন্দরে নওয়াজকে জড়িয়ে ধরেন মোদি —এএফপি

ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির হঠাৎ লাহোর সফরকে ঘিরে এখনো রাজনৈতিক চমকের রেশ। সবাইকে চমকে দিয়ে শুক্রবার সন্ধ্যায় পাক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের বাসায় হাজির হন মোদি। পাক প্রধানমন্ত্রীকে জন্মদিনের শুভেচ্ছাও জানান তিনি। কাবুল সফর শেষ করে সোজা দিল্লিতে ফেরার কথা থাকলেও শুক্রবার সন্ধ্যায় হঠাৎই টুইট করে লাহোরে নামার কথা ঘোষণা করেন। এরপরই রাজনৈতিক মহলে শুরু হয় শোরগোল। লাহোর বিমানবন্দরে তিনি দুই ঘণ্টা কাটাবেন বলে প্রথমে ঠিক থাকলেও বিমানবন্দর থেকে হেলিকপ্টারে চলে যান পাক প্রধানমন্ত্রীর বাসায়। বিকাল ৫টা নাগাদ লাহোর বিমানবন্দরের রানওয়ে ছোঁয় ভারতীয় সেনার বিমান। বিমান থেকে একে একে নামেন ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালসহ প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী অন্য শীর্ষ কর্মকর্তারা। এরপর বিমান থেকে নামেন প্রধানমন্ত্রী মোদি। এগিয়ে আসেন নওয়াজ শরিফ। প্রথমে হাত মেলান, পরে একে অন্যকে আলিঙ্গন করেন। পাক প্রধানমন্ত্রীকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানান ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী। এরপর কাছে রাখা হেলিকপ্টারে উঠে পড়েন মোদি, রওনা দেন নওয়াজের বাসার উদ্দেশে। নওয়াজ শরিফের বাসায় প্রায় দেড় ঘণ্টা কথা বলেন দুই সরকারপ্রধান। পাক প্রধানমন্ত্রীর মাকে হাত দিয়ে প্রণামও করেন মোদি। দেড় ঘণ্টা নওয়াজের বাসায় কাটিয়ে ফের লাহোর বিমানবন্দরের উদ্দেশে রওনা দেন প্রধানমন্ত্রী, সেখান থেকে নয়া দিল্লি।

তবে মোদির পাকিস্তান সফর নিয়ে তোপ দেগেছে কংগ্রেসসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো। গতকাল সারা দিনই দেশজুড়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা গেছে। কংগ্রেসের অভিযোগ, পুরো বিষয়টি ‘গটআপ’। কংগ্রেস নেতা মনীশ তিওয়ারি টুইট করে জানান, ‘লাহোরে প্রধানমন্ত্রীর এ অ-দুঃসাহসিক অভিযান কূটনীতির সবচেয়ে জঘন্যতম নিদর্শন। শেষবার কার্গিল যুদ্ধের পর অটল বিহারি বাজপেয়ি লাহোরে গিয়েছিলেন... হচ্ছেটা কী?’ মোদির পাকিস্তান সফর নিয়ে বিরোধিতা করতে ছাড়েনি সিপিআইএমও। দলের সাংসদ মোহাম্মদ সেলিম বলেছেন, ‘আগে পাকিস্তান নিয়ে নীতি ঠিক করুক কেন্দ্রীয় সরকার।’ সিপিআইএমের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি বলেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর পাকিস্তান সফরকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। এ সফরকে ‘ভিআইপি কূটনীতি’র মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে দুই দেশের মানুষের মধ্যে সম্পর্ক আরও বাড়ানোর ওপর জোর দিয়েছেন তিনি। তার মতে ‘মোদি এখন পাকিস্তান সফর করছেন...’ এ কথাটা আরও আগে আলোচনা করা উচিত ছিল। মোদির পাকিস্তান সফর নিয়ে কটাক্ষ করেছে জনতা দল ইউনাইটেড (জেডিইউ)। তবে বিরোধীরা নানাভাবে এ ঘটনা নিয়ে মুখ বাঁকালেও মোদির সফরের প্রশংসা করে ভারতের বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ টুইটে লিখেছেন, ‘একজন রাষ্ট্রনায়কের মতো কাজ করেছেন। প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে এমন সম্পর্কই হওয়া উচিত।’ মোদির এ সফরের প্রশংসা করেছেন বিজেপির সিনিয়র নেতা লালকৃষ্ণ আদবানিও। মোদির সফরকে সাধুবাদ জানিয়ে আদবানি বলেন, ‘আমি ও বাজপেয়িজি পাকিস্তানে গিয়েছিলাম। পাকিস্তানের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ার চেষ্টা করেছি। মোদির পাকিস্তান সফর সুসম্পর্ক গড়ে তুলবে বলেই আমি বিশ্বাস করি।’

মোদির এ সফরের পর ভারত-পাক সম্পর্কের রসায়ন বদলাতে পারে বলে মনে করছেন অনেকেই। কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, পাক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্কের পক্ষেই। কিন্তু অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন কারণে তাকে বার বার নিজের ইচ্ছাকে মনের মধ্যেই রেখে দিতে হচ্ছে। এদিকে মোদির আচমকা পাক সফরের পরই আগামী মাসের মাঝামাঝি দুই দেশের পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠক শুরু হতে চলেছে। সূত্রে খবর, ১৫ জানুয়ারি ইসলামাবাদে বসতে চলেছে এ বৈঠক। বৈঠকে পাক পররাষ্ট্র সচিব সারতাজ আজিজের সঙ্গে এ বৈঠকে যোগ দিতে পাকিস্তানে যাবেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব এস জয়শঙ্কর।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর