রবিবার, ৩ জানুয়ারি, ২০১৬ ০০:০০ টা
সাক্ষাৎকার - হোসেন জিল্লুর রহমান

গণতন্ত্র আর সুশাসনকে একই সঙ্গে ছুটি দিলে চলবে না

গণতন্ত্র আর সুশাসনকে একই সঙ্গে ছুটি দিলে চলবে না

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ হোসেন জিল্লুর রহমান। তিনি বলেছেন, ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য সবচেয়ে বড় সংকট হয়ে দাঁড়াবে শিক্ষিত বেকার। বুধবার তার নিজ কার্যালয় পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টারে (পিপিআরসি) একান্ত সাক্ষাত্কারে তিনি বলেন, একই সঙ্গে গণতন্ত্র আর সুশাসনকে ছুটি দিলে চলবে না। সুষম উন্নয়ন চাইলে সুশাসনের বিকল্প নেই। দীর্ঘ এই সাক্ষাত্কারে তিনি দেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষা-স্বাস্থ্য, বাজেট বাস্তবায়ন, উন্নয়ন, রাজনৈতিক পরিবেশসহ সার্বিক বিষয় নিয়ে কথা বলেন। সাক্ষাত্কারটি  নিয়েছেন নিজস্ব প্রতিবেদক মানিক মুনতাসির।

বাংলাদেশ প্রতিদিন : বিদায়ী বছরে দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি কেমন ছিল। আর নতুন বছরের অর্থনীতি কেমন যাবে বলে আপনি মনে করেন?

হোসেন জিল্লুর রহমান : বিদায়ী ২০১৫ বছরের পুরোটা সময় দেশের অর্থনীতি স্থিতিশীল ছিল। ফলে সরকার কোনো ধরনের চাপে পড়েনি। এ জন্য সরকারের মধ্যে বছর জুড়েই স্বস্তি ছিল। কিন্তু জীবনযাত্রার ব্যয় অস্বাভাবিক হারে বাড়ায় মানুষের জীবন ধারণের ব্যয় বেড়েছে অনেক গুণ। সে হারে মানুষের আয় বাড়েনি। শুধু তা-ই নয়, আয়ের চেয়ে ব্যয়ের গতি অনেক দ্রুত হারে বেড়েছে। ফলে সরকার স্বস্তিতে থাকলেও সাধারণ মানুষ সারা বছরই অস্বস্তিতে ভুগেছে। আসছে বছরও এর কোনো পরিবর্তন হবে বলে মনে হয় না। আর নতুন বছরে অর্থনীতির জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিতে পারে শিক্ষিত বেকারদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা।

বা. প্র. : দেশের বিনিয়োগ পরিস্থিতির বিষয়ে কিছু বলুন।

হোসেন জিল্লুর : বিনিয়োগ পরিস্থিতি সারা বছরই ছিল স্থবির। বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। সরকার বলছে পাবলিক খাতে বিনিয়োগ বাড়ছে। বলা হচ্ছে, পাবলিক খাতের বিনিয়োগ এখন মোট জিডিপির প্রায় ২৯ শতাংশ। কিন্তু সে অনুপাতে আমাদের প্রবৃদ্ধির হার বাড়ছে না। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে, প্রকল্প ব্যয় বাড়িয়ে দেখানো হচ্ছে। এটি অর্থনীতির জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। যখন ১০০ টাকার প্রকল্প এক হাজার টাকার প্রকল্প হিসেবে উপস্থাপন করা হচ্ছে। খোদ পরিকল্পনা কমিশনও এসব বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছে। অযৌক্তিক প্রকল্পব্যয় কমিয়ে আনতে হবে। কেননা এর মাধ্যমে বৈধভাবে দুর্নীতি হচ্ছে। এটি বন্ধ করতে হবে।

বা. প্র. : অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সুশাসন এবং দেশের গণতন্ত্রের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে কিছু বলুন।

হোসেন জিল্লুর : সুষম উন্নয়ন চাইলে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। বর্তমান সরকার তো গণতন্ত্র ও সুশাসনকে একই সঙ্গে ছুটি দিয়েছে। এভাবে চললে কিন্তু অদূরভবিষ্যতে বাংলাদেশ বড় ধরনের সমস্যায় পড়তে পারে। গণতন্ত্র ও সুশাসনকে একই সঙ্গে ছুটি দিলে চলবে না। অনেক দেশই গণতন্ত্রকে ছুটি দিয়ে উন্নতি করেছে, করছে। কিন্তু সে ক্ষেত্রে তারা সুশাসন আঁকড়ে ধরে কাজ করেছে, যেটি আমাদের দেশে হচ্ছে না। বলা হচ্ছে দেশ এখন নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে। কিন্তু এর সুফল পেতে হলে এবং উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশ গড়তে হলে সুশাসন প্রতিষ্ঠার বিকল্প নেই।

বা. প্র. : সামগ্রিকভাবে দেশের অর্থনীতি মূল্যায়ন করবেন কীভাবে?

হোসেন জিল্লুর : বাংলাদেশের অর্থনীতির মূল্যায়ন করতে হলে তা কমপক্ষে তিনটি দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে হবে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে, যারা অর্থনীতির পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন বা আছেন তারা কতটা স্বস্তিতে ছিলেন। আরেকটি হচ্ছে, জনমানুষ কতটা স্বস্তির মধ্যে ছিল সে বিষয়। তিন নম্বর হচ্ছে, যেটি বলতে পারি, বাংলাদেশের যে মধ্যমেয়াদি আকাঙ্ক্ষা রয়েছে সেগুলো অর্জনে আমরা কত দূর এগিয়েছি। বিদায়ী বছরটা সরকার এক ধরনের স্বস্তিতে ছিল। কেননা এ সময় বাংলাদেশে বড় ধরনের কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ হয়নি। এ ছাড়া আমাদের কৃষি খাতের বাম্পার উত্পাদন অব্যাহত ছিল এবং এখনো আছে। এ জন্য অর্থনীতিতে ওই ধরনের কোনো নেতিবাচক চাপ সৃষ্টি হয়নি। অনেক দেশেই অর্থনৈতিক মন্দা বিরাজ করেছিল। কিন্তু বাংলাদেশে এর কোনো প্রভাব সেভাবে পড়েনি। বিদায়ী বছর অনেকগুলো বড় প্রকল্পের কাজ শুরু করেছে সরকার। এটি একটি ভালো দিক। তবে এর চেয়েও বেশি, এর প্রচারকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।

বা. প্র. : নিম্ন মধ্যম আয়ের পথে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। এ বিষয়ে আপনার মূল্যায়ন কী?

হোসেন জিল্লুর : দেখুন, বর্তমানে সাধারণ মানুষের আকাঙ্ক্ষা বেড়েছে। এখন শুধু পেটেভাতে খেয়ে-পরে বাঁচবে, মানুষ এমনটা আর ভাবছে না। মানুষের চাহিদার ধরন পাল্টে গেছে। এটি প্রমাণ করে যে আমরা উন্নতি করছি। কিন্তু সেসব চাহিদা পূরণ করতে না পারায় অস্বস্তি বাড়ছে। এর মাধ্যমে ধনী-গরিবের বৈষম্যটাও আরও প্রকট আকার ধারণ করছে। মধ্যবিত্তদের মধ্যেই এখন আবার শ্রেণিবিন্যাস তৈরি হচ্ছে। মানুষের আয়ের গতিটা অক্ষুণ্ন রয়েছে। কিন্তু মানুষের আকাঙ্ক্ষা আর ব্যয় অনেক গুণ বেড়েছে। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে কৃষকদের অবস্থা খুবই খারাপ। তারা ধান-চালের দাম পাচ্ছেন না। সরকারও কিন্তু এ ক্ষেত্রে কার্যকর বা ব্যতিক্রমী কোনো উদ্যোগ নেয়নি। এ ক্ষেত্রে কৃষকদের আয় খুব একটা বাড়েনি। আয়ের চেয়ে ব্যয়ের গতি বাড়ছে দ্রুত। শুধু গ্রামে নয়, শহরের মানুষের ব্যয় আরও বেশি বেড়েছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পরিবহন, খাদ্য, বাড়িভাড়াসহ অন্য সবগুলো খাতেই ব্যয় বাড়ছে হু হু করে। এখন বস্তির ছেলে-মেয়েরাও কোচিং সেন্টারে ভর্তি হচ্ছে। এটিও একটি উন্নতির লক্ষণ। বাংলাদেশ ইতিমধ্যে মাথাপিছু আয়ের ভিত্তিতে নিম্ন মধ্যম আয়ের স্বীকৃতি পেয়েছে এটি ভালো খবর। কিন্তু শিক্ষা, স্বাস্থ্য, স্যানিটেশন, সুশাসন, মানব উন্নয়ন, সুশাসনসহ অন্য সূচকগুলোতে বাংলাদেশ পিছিয়ে রয়েছে। এসব নিশ্চিত করতে না পারলে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জনে কতটা সফলতা আসবে সে বিষয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়।

বা. প্র. : অর্থনীতির লক্ষ্য অর্জনে সরকারের নেওয়া কৌশলগুলো কতটা সময়োপযোগী বলে আপনার মনে হয়।

জিল্লুর রহমান : এখানে মধ্য মেয়াদে অর্থনীতির কাঙ্ক্ষিত সাফল্য অর্জনের জন্য সরকারের কৌশলগত ব্যাপার কতটা কার্যকর সেটি দেখতে হবে। বাংলাদেশের মধ্য বা দীর্ঘমেয়াদি যেসব উন্নয়ন পরিকল্পনা রয়েছে, সেগুলো বাস্তবায়ন করাটা বেশ কঠিন। বাংলাদেশ এক দশক ধরে ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরে রেখেছে। এটি একদিকে অর্জন। অন্যদিকে আমরা এখান থেকে আর ওপরেও উঠতে পারছি না। এর জন্য সব বড় বাধা হচ্ছে বিনিয়োগে স্থবিরতা। কেননা প্রায় এক দশক ধরে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় ওঠানামা করছে। আর সরকারি-বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ ২৯ শতাংশ। এটিকে ৩৪ শতাংশে নিতে হবে। বিনিয়োগের কার্যকারিতা দেখাতে হলে জিডিপি প্রবৃদ্ধি বাড়াতে হবে। সেটি হচ্ছে না।

বা. প্র. : বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য ভবিষ্যতে সবচেয়ে সমস্যা কী বলে আপনি মনে করেন?

হোসেন জিল্লুর : বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য দীর্ঘ মেয়াদে তিনটি বড় সমস্যা প্রতীয়মান হচ্ছে। এর একটি বিনিয়োগে স্থবিরতা। আরেকটি ২০১৬ সালের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ, সেটি হচ্ছে শিক্ষিত বেকার। অন্যটি হচ্ছে, অবাসযোগ্য শহর। বাংলাদেশের দরিদ্রতম জনগোষ্ঠী না-খেয়ে থাকবে, এটি আজকের অর্থনৈতিক সংকটের চেহারা নয়। কারণ ওই জায়গায় আমরা অনেক শক্ত অবস্থানে চলে এসেছি। আজ সংকটটা অন্য রকম। যেমন এমএ পাস করে পিয়নের চাকরি করছে। এর মানে কী। আমরা শিক্ষার মূল্যায়ন করছি না। আবার কর্মসংস্থানও সৃষ্টি করতে পারছি না। এতে প্রতিবছর যে ২০ লাখ শিক্ষিত যুবক-যুবতী শ্রম ও কর্মবাজারে ঢুকছে, এর একটা অংশ পাঁচ বা সাত লাখ বাইরে গিয়ে রেমিট্যান্স পাঠাত। সেটিও কিন্তু সংকুচিত হচ্ছে। এই যে আন্দামান হয়ে যারা বিদেশে যাওয়ার চেষ্টা করছিল, তাদের বেশির ভাগই কিন্তু শিক্ষিত। এদের মধ্যে উচ্চশিক্ষিতও রয়েছে। তারা দেশে কাজ পাচ্ছে না। ফলে বিদেশে গিয়ে নিম্নমানের কাজ করতেও প্রস্তুত। শুধু তা-ই নয়, জীবন বাজি রেখে তারা কাজের সন্ধানে বিদেশে যাচ্ছিল। তাদের বেশির ভাগই কিন্তু কাজ পাচ্ছে না। এখানে একটি বিষয় খুব উদ্বেগজনক, ভারত বিশ্বের যে দেশগুলো থেকে রেমিট্যান্স আয় করে থাকে, এর মধ্যে বাংলাদেশ হচ্ছে চতুর্থ। অর্থাৎ বাংলাদেশ থেকে তারা বিপুল পরিমাণ রেমিট্যান্স আয় করে থাকে, যা বাংলাদেশ ভারত থেকে আয় করতে পারে না। ভারতের লোকজন কোথায় কোথায় গিয়ে কাজ করছে। আয় করছে। আবার সেটি দেশে পাঠাচ্ছে। অথচ বাংলাদেশের অর্থকড়ি কর্মসংস্থানের একটা বড় অংশ বাংলাদেশিরা পাচ্ছে না। এটি ভারতসহ অন্য দেশে চলে যাচ্ছে। এর মানে আমরা দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলতে পারছি না। আবার শিক্ষিত মানুষ উত্পাদন করছি।

বা. প্র. : আমাদের সামগ্রিক শিক্ষা খাতের অবস্থা সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন কী?

হোসেন জিল্লুর : আমাদের মাধ্যমিক শিক্ষায় ভয়ঙ্কর রকমের ফাঁকি রয়েছে। শুধু সার্টিফিকেট-নির্ভর একটি ব্যবস্থা আমরা চালু করতে পেরেছি। এটিই কিন্তু একসময় আমাদের জন্য কাল হয়ে দাঁড়াবে। এই সার্টিফিকেট-নির্ভর শিক্ষাব্যবস্থার অবধারিত পরিণতি হচ্ছে এমএ পাস পিয়ন। শিক্ষায় সুশাসনের ঘাটতিটা ভয়ঙ্কর জায়গায় চলে গেছে। এ অবস্থানের উন্নয়নে বড় ধরনের চিন্তাভাবনা করছে না সরকার। যেমন পদ্মা সেতু, টানেল, মেট্রোরেলের মতো অনেক বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। কিন্তু শিক্ষা খাতের মান উন্নয়নে বড় কোনো বরাদ্দ বা বড় কোনো প্রকল্প লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। শিক্ষা খাতটা টেক্সট বই বিতরণের মধ্যেই সীমাবদ্ধ হয়ে গেছে।

বা. প্র. : ভবিষ্যতে মধ্যমেয়াদি অর্থনীতির উত্তরণের সম্ভাবনায় বাংলাদেশ কোথায় দাঁড়িয়ে আছে বলে আপনি মনে করেন?

হোসেন জিল্লুর : ভবিষ্যতে অর্থনীতির বড় সংকট হিসেবে দেখা দেবে শিক্ষিত বেকার। এখানে সবচেয়ে সব বিষয় হচ্ছে কর্মসংস্থান। বিশেষ করে শিক্ষিত যুবকদের কর্মসংস্থান বাড়াতে হবে। কেননা এখানে দক্ষতার অভাব। কর্মসংস্থানের ঘাটতি রয়েছে। এখানেই বাংলাদেশের আগামী দিনের অর্থনীতির মূল চ্যালেঞ্জ। এটিকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে উদ্যোগ নিতে হবে। পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সরকারকে আরও মনোযোগী হতে হবে। নিম্ন মধ্যম আয় থেকে মধ্যম আয়ের দেশে যেতে হলে শুধু অর্থনীতি নয়, পাশাপাশি শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সামাজিক সূচক, মানব উন্নয়নসহ অন্য সূচকগুলোতে ভালো করতে হবে।

বা. প্র. : আপনি অবাসযোগ্য নগরায়ণের কথা বলছিলেন। এ বিষয়ে ব্যাখ্যা করুন।

হোসেন জিল্লুর : বাংলাদেশে নগরায়ণ হচ্ছে দ্রুতগতিতে। কিন্তু সেটি অবাসযোগ্য। কেননা কোনো ধরনের পরিকল্পনা ছাড়াই উঁচু উঁচু ভবন হচ্ছে। এখানে দেখুন, ঢাকা শহর গত ৩০ বছরে অনেকটা বেড়েছে। আর চট্টগ্রাম কিন্তু ১৫ বছরে এর চেয়েও বেশি বেড়েছে। এতে কোনো পরিকল্পনার বালাই নেই। সবই অপরিকল্পিত। যে যে পারছে ভবন তৈরি করছে। রাস্তাঘাট, অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা, পরিবেশ, পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা, মাঠ-ঘাট, এসব বিষয় আমলে নেওয়া হয় না। ঢাকার সব সমস্যাই এখন চট্টগ্রামেও চলে গেছে। এমনকি জেলা শহরেও ঢাকার মতো সমস্যাগুলো চোখে পড়ছে। এ ক্ষেত্রে সরকার স্বল্পমেয়াদি অনেকগুলো কাজ করতে পেরেছে। কিন্তু মধ্য মেয়াদে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছে না। বাংলাদেশ কিন্তু ভূ-রাজনৈতিক অবস্থান থেকে অত্যন্ত শক্তিশালী। এটি একটি বিশাল শক্তি। কিন্তু সেটি আমরা কাজে লাগাতে পারছি না। যারা দেশ পরিচালনায় আসছেন, আবার যারা পরিচালনায় আসতে চান, তাদের এসব বিষয় নিয়ে ভাবতে হবে। নিত্যনতুন চিন্তাভাবনা করতে হবে। পেশাজীবীদেরও এ বিষয় নিয়ে অনেক কিছু করণীয় রয়েছে। সবাইকে এ বিষয়গুলো উপলদ্ধি করতে হবে।

বা. প্র. : দেশের সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে কিছু বলুন।

হোসেন জিল্লুর : দেখুন, এখানে রাজনৈতিক পরিবেশ খুব একটা সহনীয় থাকে না। বছরের বেশির ভাগ সময়ই উত্তপ্ত থাকে। এর কারণ হচ্ছে সহনশীলতা নেই। রাজনীতিতে সুশাসন ও জবাবদিহি নেই। যেমন দেখুন বিরোধী দল (বিএনপি) প্রচণ্ড রকম বিপর্যয়ের মুখে রয়েছে। মোটামুটি সব ক্ষেত্রেই সরকারের নিয়ন্ত্রণ পুরোপুরি। সব জায়গাতে সরকারের জোরালো অবস্থান। কিন্তু বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আস্থার সংকট কাটাতে পারছে না। কারণ শেষ বিচারে অনিশ্চয়তার সংকটটা দূর করতে পারছে না। তারা তা পারত, যদি গণতন্ত্র ও সুশাসনকে সুসংহত করতে পারত। অথবা গণতন্ত্রকে ছুটি দিয়ে যদি সুশাসন নিশ্চিত করতে পারত। কিন্তু সেটি তো হচ্ছে না। একই সঙ্গে দুটোকেই ছুটি দেওয়া হয়েছে। ফলে কোনো কাজ হচ্ছে না। এভাবে চলতে থাকলে হবেও না।

বা. প্র. : আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

হোসেন জিল্লুর : বাংলাদেশ প্রতিদিনকেও ধন্যবাদ।

সর্বশেষ খবর