বৃহস্পতিবার, ২১ জানুয়ারি, ২০১৬ ০০:০০ টা

নতুন কৌশলে মোদি-নওয়াজ

প্রতিদিন ডেস্ক

নতুন কৌশলে মোদি-নওয়াজ

সন্ত্রাস এবং দ্বিপক্ষীয় অন্যান্য আলোচনাকে ভবিষ্যৎ কূটনীতিতে দুই পৃথক স্তরে ভেঙে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারত এবং পাকিস্তান। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের যৌথ সম্মতিতেই এই নতুন কৌশল রচিত হয়েছে বলে জানা গেছে। ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের প্রশ্নে এই কৌশলকে এক আমূল বদল বলেই মনে করছে কূটনৈতিক শিবির।     ‘পুরনো গতানুগতিক রেওয়াজ’ থেকে বেরিয়ে দুই দেশই ফলপ্রসূভাবে শান্তি আলোচনা এগিয়ে নিয়ে যেতে চাইছে। এমনটাই জানাচ্ছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। জানা গেছে, দুই দেশের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা পর্যায়ে শুধু সন্ত্রাস প্রসঙ্গ নিয়ে কথা এগোনো হবে। দ্বিতীয় স্তরটি পাশাপাশি চলবে পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ে। সেখানে প্রতিপাদ্য জম্মু কাশ্মীর, সার ক্রিক, বাণিজ্যসহ বিভিন্ন দ্বিপক্ষীয় বিষয়। কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য মনমোহন সরকারের সময় মিসরের শর্ম অল শেখে এ ধরনের একটি প্রয়াস করা হয়েছিল ঠিকই, কিন্তু ঘরোয়া রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতার জেরে সাহস করে এ বিষয়ে খুব বেশি এগোতে পারা যায়নি। বর্তমান রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী থাকার সময়ও একটি ‘মেকানিজম’ তৈরি করার চেষ্টা হয় এই মর্মে, কিন্তু সেটিও কার্যকরী হয়নি। কূটনৈতিক শিবিরের বক্তব্য, ভবিষ্যৎ জঙ্গি হামলার সম্ভাবনাগুলোকে মাথায় রেখে এই মডেল মোদি সরকার কীভাবে এগিয়ে নিয়ে যায়, তা দক্ষিণ এশিয়ার ভূকৌশলগত রাজনীতিতে অত্যন্ত তাত্পর্যপূর্ণ হয়ে উঠতে চলেছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রের খবর, সম্প্রতি প্যারিসের জলবায়ু সম্মেলনে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর আলোচনায় এ ব্যাপারে প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়। পরে পাঠানকোট কাণ্ডের পরে শান্তি আলোচনা যাতে ভেস্তে না যায় সে জন্য এই মডেলটিতে সিলমোহর লাগানো হয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের খবর, এই নতুন সূত্র ধরেই পাঠানকোট পরবর্তী দ্বিপক্ষীয় কূটনীতি এগোবে। আপাতত পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের আলোচনা স্থগিত রাখার কারণ হিসেবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বিকাশ স্বরূপ জানিয়েছিলেন, ‘পাঠানকোট কাণ্ডের ছায়ার মধ্যে দুই দেশের সামগ্রিক আলোচনা করা হলে তাতে আখেরে লাভের থেকে লোকসানই হবে বেশি।’ এ বিষয়ে একমত ইসলামাবাদও।

ইতিমধ্যেই পাঠানকোট কাণ্ডের তদন্ত করার জন্য পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী একটি বিশেষ তদন্তকারী দল বা ‘সিট’ তৈরি করেছিলেন। কূটনৈতিক সূত্রের খবর, সিট এই তদন্তের জন্য এখনই ইসলামাবাদ থেকে ভারতে আসছে না। স্থির হয়েছে, ভারত আগে তার নিজের তদন্ত শেষ করবে। জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ) তার তদন্তের রিপোর্ট কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং প্রধানমন্ত্রীর দফতরে জমা দেওয়ার পরই ভারতে আসবে পাকিস্তানের গোয়েন্দা দল। তাদের হাতে ভারত তদন্তের যাবতীয় তথ্য তুলে দেবে। সেই তথ্যকে নিজেদের তদন্তের কাজে লাগাবে ইসলামাবাদ। এখনো পর্যন্ত যা স্থির রয়েছে তা হলো, তদন্তের আরও খানিকটা অগ্রগতি হওয়ার পর দুই দেশের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা নিজেদের মধ্যে তথ্য আদান-প্রদান করবেন একটি বৈঠকে বসে। সেটি যে খুব আনুষ্ঠানিকভাবে ঢাক পিটিয়ে করা হবে এমনটা নয়। যেভাবে ব্যাংককে দুই দেশের নিরাপত্তা উপদেষ্টা বৈঠক করার পর সংবাদ মাধ্যমকে জানানো হয়েছিল, সেভাবেই এ বৈঠকটি হওয়ার সম্ভাবনা। তবে তার পরে পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠকটি অবশ্য আনুষ্ঠানিকভাবেই করা হবে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্তার মতে, ‘পাঠানকোট সন্ত্রাস নিয়ে আগেই ফলপ্রসূ আলোচনা হয়ে গেলে, দুই দেশের মধ্যে অন্যান্য দ্বিপক্ষীয় বিষয় নিয়ে পররাষ্ট্র সচিবরা অনেক খোলামনে আলোচনা করতে পারবেন। সন্ত্রাস দমন নিয়ে কোনো আলোচনার চাপ বা প্রতিবন্ধকতা তাদের ওপর থাকবে না। এর ফলে আখেরে লাভবান হবে দুই দেশের সাধারণ মানুষ।’ আগামী নভেম্বরে পাকিস্তানে বসছে সার্ক সম্মেলন। তার আগেই ভারতের সঙ্গে একদফা আস্থাবর্ধক আলোচনা সেরে নিতে চায় পাকিস্তান। পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের প্রথম বৈঠকটিতেই অবশ্য তা সম্ভব নয়। কারণ, সাউথ ব্লকের কর্তাদের মতে, প্রথম বৈঠকটি হবে আস্থাবর্ধক আলোচনার প্রতিপাদ্যগুলো স্থির করার জন্য। তাই এই নতুন মডেলে নভেম্বরের মধ্যে আলোচনা কত দ্রুত এগোয় এবার সেটাই দেখতে চাইছে কূটনৈতিক মহল।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর