বৃহস্পতিবার, ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ ০০:০০ টা

নিষিদ্ধ হচ্ছে জামায়াত?

সংশোধনী আসছে ট্রাইব্যুনাল আইনে

নিজামুল হক বিপুল

যুদ্ধাপরাধী সংগঠন হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতি নিষিদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন, ১৯৭৩-এর দুটি ধারায় গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনাসহ অনেকগুলো ধারায় পরিবর্তন, সংযোজন ও সংশোধন আনছে সরকার। ইতিমধ্যে সংশোধিত ও সংযোজিত অংশের খসড়াও প্রস্তুত করেছে আইন মন্ত্রণালয়। এখন চূড়ান্ত এ খসড়াটি মন্ত্রিসভায় উপস্থাপন ও অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। আগামী সোমবার বা পরের সোমবার মন্ত্রিসভায় এটি উপস্থাপন করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। প্রস্তাবিত সংশোধনীতে ব্যক্তির অপরাধের ক্ষেত্রে সংগঠনকে দায়ভার বহন করতে হবে বলে স্পষ্ট উল্লেখ করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বিদ্যমান অধ্যাদেশের চতুর্থ ধারার উপধারা-১-এ আগে ছিল, কোনো ব্যক্তি একক বা যৌথভাবে কোনো অপরাধ সংঘটন করলে তাদের প্রত্যেককে আলাদা আলাদাভাবে বিচারের মুখোমুখি করা যাবে। এতে করে সংগঠনকে বিচারের মুখোমুখি হতে হচ্ছে না। এ অবস্থায় ব্যক্তির অপরাধের জন্য তার সংগঠনকে এ অপরাধ বহনের কথা উল্লেখ করে এই উপধারাটিতে সংশোধন আনা হচ্ছে। প্রস্তাবিত সংশোধনীতে ব্যক্তির অপরাধের ক্ষেত্রে সংগঠনকে দায়ভার বহন করতে হবে বলে স্পষ্ট উল্লেখ করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বিদ্যমান অধ্যাদেশের চতুর্থ ধারার উপধারা-১-এ আগে ছিল, কোনো ব্যক্তি একক বা যৌথভাবে কোনো অপরাধ সংঘটন করলে তাদের প্রত্যেককে আলাদা আলাদাভাবে বিচারের মুখোমুখি করা যাবে। এতে করে সংগঠনকে বিচারের মুখোমুখি হতে হচ্ছে না। এ অবস্থায় ব্যক্তির অপরাধের জন্য তার সংগঠনকে এ অপরাধ বহনের কথা উল্লেখ করে এই উপধারাটিতে সংশোধন আনা হচ্ছে। প্রস্তাবিত সংশোধনীতে নতুন করে সংযোজন করা হয়েছে— কোনো ব্যক্তি এককভাবে অপরাধে জড়িত হলে তার দায়ভার সংগঠনকে বহন করতে হবে। শুধু তা-ই নয়, সংগঠনের যে কোনো পর্যায়ের যে কোনো কমিটিতে, অর্থাত্ সংগঠনের নির্বাহী কমিটি, সাধারণ কমিটি, আঞ্চলিক কমিটি কিংবা স্থানীয় কমিটিসহ সংশ্লিষ্ট অন্য যে কোনো কমিটির সদস্য হলেও তার অপরাধের দায়ভার ওই সংগঠনের ওপর বর্তাবে। এ ক্ষেত্রে ব্যক্তির পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট সংগঠনেরও বিচার হবে। আইনের ধারা-২০-এর উপধারা-২-এ আগে ব্যক্তির শাস্তির কথা সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা ছিল। কিন্তু সংশোধনীতে ব্যক্তির পাশাপাশি সংগঠনের শাস্তির বিষয়টিও স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। এখানে সংগঠনের শাস্তির বিষয়ে বলা হয়েছে, আদালত অভিযুক্ত সংগঠনকে সরাসরি নিষিদ্ধ করতে পারবেন। ভবিষ্যতে এ নামে বা ভিন্ন কোনো নামে একই ধরনের সংগঠনের কার্যক্রমকে নিষিদ্ধ করতে পারবে সরকার। শাস্তির ক্ষেত্রে শুধু যে সংগঠনকেই সংযোজন করা হয়েছে তা নয়, এ ক্ষেত্রে শাস্তির রকমফেরও সুনির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। আগে ছিল ট্রাইব্যুনাল যেরূপ মনে করে সেরূপ শাস্তি দিতে পারবে। কিন্তু সংযোজনীতে শাস্তিকে সুনির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে— যেমন সংগঠন নিষিদ্ধ করা, সংগঠনের কার্যক্রমের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা, সংগঠনের ভবিষ্যত্ কোনো কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা এবং সংগঠনের দায়িত্বে থেকে কৃত অপরাধের জন্য ব্যক্তির শাস্তি মৃত্যুদণ্ড দিতে পারবে। আগে এগুলো ছিল না। এখন শাস্তির আওতা বাড়ানো হয়েছে। অহেতুক বিতর্ক এড়াতে আইনে সুনির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে শাস্তির মাত্রা। যদিও শাস্তি প্রদানের ক্ষেত্রে বিদ্যমান আইনেও কোনো সমস্যা ছিল না। আদালত যেরূপ মনে করেন সেরূপ শাস্তিই দিতে পারতেন। এ ছাড়া বিদ্যমান এ আইনের প্রস্তাবনার ধারায় পূর্বে উল্লিখিত ব্যক্তির পাশাপাশি সংগঠনকেও অপরাধের জন্য সার্বিকভাবে দায়বদ্ধ করা হচ্ছে। এ আইনের ৯, ১০এ, ১২, ২১এ ধারায় ব্যক্তির পাশাপাশি সংগঠনকে যুক্ত করা হচ্ছে।

এ আইন সংশোধনের ফলে শুধু জামায়াতে ইসলামী নয়, একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় মুসলিম লীগ, নেজামে ইসলামসহ যেসব সংগঠন যুদ্ধাপরাধের সঙ্গে যুক্ত ছিল, সেগুলোর বিচারের প্রক্রিয়া সহজ হচ্ছে। যুদ্ধাপরাধে জড়িত থাকার কারণে এসব সংগঠনকেও বিচারের মুখোমুখি হতে হবে। সম্প্রতি যুদ্ধাপরাধের জন্য সংগঠন হিসেবে জামায়াতে ইসলামের বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে নতুন বিতর্ক দেখা দেয়। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক একাধিকবার বলেন, বিদ্যমান আইনে জামায়াতে ইসলামীর বিচার করা যাবে না। জামায়াতে ইসলামীর বিচার করতে হলে আইনে কিছুটা পরিবর্তন আনতে সংশোধন করতে হবে। তবেই জামায়াতে ইসলামীর বিচার করা যাবে। অবশেষে যুদ্ধাপরাধের দায়ে জামায়াতে ইসলামীসহ অন্যান্য সংগঠন, যারা একই অপরাধে অপরাধী, তাদের বিচার নিশ্চিত করতে ট্রাইব্যুনালের বিদ্যমান আইনে সংশোধন আনা হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আইনটি মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের পর সংসদে পাস হলে চলতি বছরই দ্রুততার সঙ্গে বিচার প্রক্রিয়া শুরু হবে জামায়াতে ইসলামীসহ যুদ্ধাপরাধী দলগুলোর। যুদ্ধাপরাধে জড়িত জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষস্থানীয় নেতাদের বিচারের রায় ঘোষণার সময় প্রতিটিতেই ট্রাইব্যুনাল পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন, যাতে রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর যুদ্ধাপরাধের বিষয়টি উল্লেখ করা হয়। আইন-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যুদ্ধাপরাধী দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর বিচার প্রক্রিয়া শুরুর পর তাদের রাজনৈতিক ভবিষ্যত্ও পরিষ্কার হয়ে যাবে। যুদ্ধাপরাধে যুক্ত থাকার অভিযোগ প্রমাণিত হলে স্বাভাবিকভাবেই রায় তাদের বিপক্ষে যাবে। তখন বিচার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে রাজনৈতিক দল হিসেবে আইন অনুযায়ীই জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ হয়ে যাবে। সরকারকে কোনো আদেশের মাধ্যমে জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে না। খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম সম্প্রতি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, যুদ্ধাপরাধে জড়িত অভিযোগে রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতের বিচার নিশ্চিত করা গেলে এমনিতেই তাদের রাজনীতি নিষিদ্ধ হয়ে যাবে। তিনি বলেন, ‘আমি আশা করছি, এ বছরই জামায়াতের বিচার প্রক্রিয়া শেষ হবে।’

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর