বৃহস্পতিবার, ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ ০০:০০ টা

আমরা এখন অনেক সতর্ক : প্রধানমন্ত্রী

প্রতিদিন ডেস্ক

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সরকার পরিবর্তন হলেও কেউ যেন দেশে বিজ্ঞান গবেষণার জন্য দেওয়া ফেলোশিপ বন্ধ করতে না পারে সে লক্ষ্যে সরকার বঙ্গবন্ধু ফেলোশিপকে একটি ট্রাস্টে রূপান্তরের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা এখন অনেক সতর্ক। আমরা ভালো কাজ করে গেলেও সরকার পরিবর্তন হলে দেশের প্রতি মমত্ববোধ না থাকলে অন্য সরকার এসব কাজ বন্ধ করে দিতে পারে।... অতীতে বিএনপি-জামায়াত সরকার এমন অনেক প্রকল্পই বন্ধ করে দিয়েছিল।’ প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়িয়েছে, বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ শুরু করা বাংলাদেশের ইতিহাসের জন্য টার্নিং পয়েন্ট। তিনি বিশেষায়িত জ্ঞানের যথার্থ ব্যবহার নিশ্চিত করে সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত, সমৃদ্ধ ‘সোনার বাংলা’ গড়ে তোলারও আহ্বান জানান। খবর বাসসের। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে মেধাবী শিক্ষার্থীদের মাঝে বঙ্গবন্ধু ফেলোশিপ ও জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি (এনএসটি) ফেলোশিপ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি গবেষণায় নিয়োজিত গবেষকদের মাঝে বিশেষ অনুদানের চেক বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এ আহ্বান জানান। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান। বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ডা. আ ফ ম রুহুল হক। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. সিরাজুল হক খান অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠানে এ বছর ৫০ জন এমএস, ১৬০ জন পিএইচডি, ১১ জন পোস্ট ডক্টোরাল স্টুডেন্ট এবং গবেষককে দেশে-বিদেশে উচ্চশিক্ষা-গবেষণার জন্য ফেলোশিপ প্রদান করা হয়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর দেখি গবেষণা খাতে কোনো বরাদ্দ নেই। সে বছরই গবেষণার জন্য ১২ কোটি টাকার থোক বরাদ্দ দিই। এখন সারা বছরই তরিতরকারি পাওয়া যাচ্ছে, এটি সে সময়কার বরাদ্দে কৃষি গবেষণার মাধ্যমেই সম্ভব হয়েছে।

যারা পদ্মা সেতু নিয়ে ষড়যন্ত্র করেছে তাদের বিচার হবে : সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, পদ্মা সেতু প্রকল্প নিয়ে যারা ষড়যন্ত্র করেছে তাদের বিচার প্রচলিত আইনেই হবে। জাতীয় সংসদ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে গতকাল জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদের (ঢাকা-৬) প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এ কথা জানান।

প্রধানমন্ত্রী সংসদে জানান, দুর্নীতি দমন কমিশনের তদন্তে পদ্মা সেতু প্রকল্পের বিরুদ্ধে আনীত কথিত দুর্নীতি ষড়যন্ত্রের অভিযোগ ভিত্তিহীন প্রমাণিত হয়েছে। তত্কালীন সময়ে পদ্মা সেতু প্রকল্প বাস্তবায়নে বাধা দিতে যারা ষড়যন্ত্র করেছে তাদের বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন তদন্ত করেছে। ষড়যন্ত্রকারীদের বিচার প্রচলিত আইনেই হবে। সংসদ নেতা বলেন, বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়নাধীন পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের আওতায় পদ্মা সেতুতে ৩০ ইঞ্চি ব্যাসের গ্যাস সঞ্চালন পাইপ লাইন নির্মাণের পরিকল্পনা আছে। গ্যাস প্রাপ্তি ও পাইপ লাইন নির্মাণ প্রকল্পের অর্থায়ন প্রাপ্তি সাপেক্ষে পর‌্যায়ক্রমে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে গ্যাস পাইপ লাইন সম্প্রসারণের পরিকল্পনা আছে। দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে গ্যাস সরবরাহের জন্য পায়রা বন্দরে একটি ল্যান্ড বেসড এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের পরিকল্পনাও সরকার গ্রহণ করেছে জানালেন প্রধানমন্ত্রী।

পদ্মা সেতু : স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য মো. রুস্তম আলী ফরাজীর (পিরোজপুর-৩) অপর এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন,  পৃথিবীর বৃহত্তম হাইওয়ে সেতুর মধ্যে (ভায়াডাক্টসহ) পদ্মা সেতুর অবস্থান ২৫তম।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, পদ্মা সেতু প্রকল্পের বিভিন্ন প্যাকেজের নির্মাণ কাজ তদারকির জন্য পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ প্রক্রিয়ায় দুর্নীতি ষড়যন্ত্রের অভিযোগ এনে বিশ্বব্যাংক ঋণচুক্তি স্থগিত করে। কিন্তু দুর্নীতি দমন কমিশনের তদন্তে বিশ্বব্যাংকের সে অভিযোগ ভিত্তিহীন প্রমাণিত হয়। তবে একপর‌্যায়ে বিশ্বব্যাংক এ প্রকল্পে পুনরায় ফিরে আসার ঘোষণা দিলেও নতুন নতুন শর্ত আরোপ করে দীর্ঘসূত্রতার পথ অবলম্বন করায় তাদের ঋণ গ্রহণ না করে আওয়ামী লীগ সরকারের সাহসী ও স্বাধীনচেতা নেতৃত্ব ও দৃঢ় সিদ্ধান্ত গ্রহণের ফলেই বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ শুরু করা সম্ভব হয়।

জননিরাপত্তা : জাতীয় পার্টির পীর ফজলুর রহমানের (সুনামগঞ্জ-৪) প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, জনগণের জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তা বিধান, শান্তিপূর্ণ ও স্বাভাবিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বজায় রাখার লক্ষ্যে বাংলাদেশ পুলিশ নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী আরও জানান, পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে প্রতিটি অভিযোগ যথাযথভাবে তদন্ত করে অভিযোগের গুরুত্বানুসারে চাকরি থেকে বরখাস্তসহ বিধি মোতাবেক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়ে থাকে।

শান্তি চুক্তি বাস্তবায়ন হবে : ঊষাতন তালুকদারের সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের বাসিন্দাদের জীবন-জীবিকার যাবতীয় ব্যবস্থা আমরা করেছি, যারা চাকরি চেয়েছিল, তাদের চাকরি দিয়েছি। তাদের জীবন-জীবিকার জন্য যা যা করা প্রয়োজন আমরা করেছি। শান্তিচুক্তি যখন করেছি, তার পুরোপুরি বাস্তবায়ন করব। আমরা সব সময় বলেছি, সমাধান হবে সংবিধানের ভিতরে থেকে, বাইরে কিছু হবে না। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, যখন চুক্তি হয় বিএনপি-জামায়াত তার বিরোধিতা করেছিল। বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া বলেছিলেন, এই চুক্তি বাস্তবায়ন হলে বাংলাদেশের ফেনী পর্যন্ত ভারত হয়ে যাবে। তিনি তখন ফেনীর সংসদ সদস্য। তাই তাকে প্রশ্ন করেছিলাম ফেনী যদি ভারত হয়ে যায়, তাহলে কি তিনি ভারতের সংসদে গিয়ে বসবেন। যেদিন অস্ত্র সমর্পণ হয়, সেদিন বিএনপি পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় হরতাল-অবরোধ ডেকে ছিল, যাতে অস্ত্র সমর্পণ না হয়।  এই ১০ ফেব্রুয়ারি কিন্তু পার্বত্য চট্টগ্রামে অস্ত্র সমর্পণ করা হয়। আমরা ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে তাদের সঙ্গে আলোচনা করে সমস্যার সমাধান করেছি। চুক্তির পর অস্ত্র সমর্পণ অনুষ্ঠানে আমি নিরাপত্তার সব বেরিকেড ভেঙে তাদের কাছে চলে গিয়েছিলাম। এরপর ওই অঞ্চলে যখনই কোনো ঘটনা ঘটেছে আমি তখনই ছুটে গেছি। সমস্যার বিষয়গুলো আমার জানা, সমাধানের পথ কী— তা নিয়ে কমিটি করে দিয়েছি, দীর্ঘদিন কাজ করেছি। সরকার দলীয় সদস্য শামসুল হক চৌধুরীর (চট্টগ্রাম-১২) অপর এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে এয়ারপোর্ট করতে হলে পাহাড় কেটে করতে হবে, সেটা পার্বত্য চট্টগ্রামের জন্য ভালো হবে না। আমরা রাস্তা করে দিচ্ছি, কক্সবাজার বিমানবন্দর থেকে পার্বত্য চট্টগ্রাম বেশি দূরে নয়, প্রশস্ত রাস্তা আছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য রাস্তা দিয়ে চলাই সুন্দর হবে। 

এয়ারপোর্টের দরকার নেই।

সর্বশেষ খবর