বৃহস্পতিবার, ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ ০০:০০ টা

আচরণবিধি মেনে চলা উচিত বিচারপতিদের

নিজস্ব প্রতিবেদক

আচরণবিধি মেনে চলা উচিত বিচারপতিদের

সুরেন্দ্র কুমার সিনহা

সরকারি সুযোগ-সুবিধা নেওয়া অবস্থায় অবসরপ্রাপ্ত ও বর্তমান বিচারপতিদের আদালতের আচরণবিধি (কোড অব কন্ডাক্ট) মেনে চলার পরামর্শ দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা মীর কাসেম আলীর আপিলের শুনানিতে গতকাল প্রধান বিচারপতি এ কথা বলেন। সকালে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চে মীর কাসেমের আপিলের শুনানি দ্বিতীয় দিনের মতো শুরু হয়। তখন আসামিপক্ষে শুনানিতে অংশ নেন সম্প্রতি হাইকোর্ট থেকে অবসরে যাওয়া বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরী। তিনি বর্তমানে অবসর-পরবর্তী ছুটিতে রয়েছেন। হাইকোর্টের সাবেক এ বিচারপতি এখনো সরকারি সব সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছেন। সরকারি বাড়িতেই থাকছেন। বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরী আসামিপক্ষের শুনানিতে অংশ নিলে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, ‘মাই লর্ড, সদ্য অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিরা সরকারি বাড়ি-গাড়ি ব্যবহার করে প্র্যাকটিস করছেন, যা শোভনীয় নয়।’ প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘দীর্ঘদিন চাকরি করার পর বিচারপতিরা এক বছর পর্যন্ত বাড়ি-গাড়ি ব্যবহার করতে পারেন। এটি তাদের প্রিভিলাইজ (সুযোগ)। আপনি (বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরী) এ বিষয়ে সতর্ক থাকবেন।’ শুনানিতে প্রধান বিচারপতি বলেন, সরকারি সুযোগ-সুবিধা নেওয়া অবস্থায় অবসরপ্রাপ্ত ও বর্তমান বিচারপতিদের আদালতের প্রথা ও নিয়মকানুন মেনে চলা উচিত। মামলার শুনানি শেষে সাবেক বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, ‘মীর কাসেম আলীর আপিলের শুনানি চলাকালে অ্যাটর্নি জেনারেল আমার প্র্যাকটিসের বিষয়টি আদালতের নজরে আনেন। তখন প্রধান বিচারপতি সরকারি সুযোগ-সুবিধা নেওয়া অবস্থায় অবসরপ্রাপ্ত ও বর্তমান বিচারপতিদের আদালতের নিয়মকানুন মেনে চলার আহ্বান জানান। আমি তখন বলেছি, মাই লর্ড, অতীতেও আমি এর অপব্যবহার করিনি, এখনো করছি না। আর কয়েক মাস আছি (সুবিধা নিতে পারব), আমি ভবিষ্যতেও এর অপব্যবহার করব না। আমি আইন মেনে আইন পেশায় কাজ করছি। সংবিধান আমাকে ক্ষমতা দিয়েছে।’ পরে নিজ দফতরে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের বলেন, নজরুল ইসলাম চৌধুরী একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি। তিনি সরকারি জাজেস কমপ্লেক্স, সরকারি গাড়ি, গানম্যানসহ সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন। এ রকম সরকারি সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে আইনজীবী হিসেবে প্র্যাকটিস করবেন, তা চরম নীতি-নৈতিকতাবিরোধী। অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘আইনজীবীরা সরকারি অন্য কোনো সুযোগ-সুবিধা নিতে পারেন না। জাজ হিসেবে তিনি তা করতে পারেন না।’ তাহলে কি বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরী রাষ্ট্রবিরোধী কাজ করছেন—এমন প্রশ্নে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘বিষয়টি এমন নয়। এখানে নীতি-নৈতিকতার প্রশ্ন।’ সংবিধানের ৯৯ অনুচ্ছেদের ২-এর (১) উপ-অনুচ্ছেদে এ সম্পর্কে বলা আছে, ‘কোনো ব্যক্তি হাইকোর্ট বিভাগের বিচারক পদে বহাল থাকিলে উক্ত পদ হইতে অবসর গ্রহণের পর তিনি আপিল বিভাগে ওকালতি বা কার্য করিতে পারিবেন।’

সর্বশেষ খবর