শুক্রবার, ৪ মার্চ, ২০১৬ ০০:০০ টা

কেন্দ্র দখল, নাশকতা ও দলীয় কোন্দলের শঙ্কা

গোলাম রাব্বানী

কেন্দ্র দখল, নাশকতা ও দলীয় কোন্দলের শঙ্কা

বিগত পৌরসভা নির্বাচনের মতো আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও কেন্দ্র দখল, জাল ভোট ও ব্যালট পেপার ছিনতাইয়ের আশঙ্কা করছেন নির্বাচন-সংশ্লিষ্টরা। প্রথমবারের মতো দলীয়ভাবে এ নির্বাচন হওয়ায় ক্ষমতাসীন দলের বিদ্রোহী প্রার্থীরা মাঠে রয়েছেন। ফলে দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে সংঘাত-সংঘর্ষের আশঙ্কাও প্রকাশ করছেন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা। এ ছাড়া তৃণমূলের এ নির্বাচনে সীমান্তে অবৈধ অস্ত্রের আমদানি বৃদ্ধি ও জঙ্গিরা নাশকতা সৃষ্টি করতে পারে বলেও জানিয়েছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারা। এ জন্য     নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করতে গ্রেফতার অভিযান অব্যাহত রাখার পরামর্শও এসেছে আইনশৃঙ্খলা বৈঠকে। এদিকে বৈঠকে সহিংসতার দায়ভার পুলিশের ঘাড়ে চাপিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ। তিনি বলেছেন, সহিংসতার দায়দায়িত্ব পুলিশের ওসিদের নিতে হবে। তীক্ষ দৃষ্টি রাখতে হবে। দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। কেন্দ্র দখল করতে দেওয়া যাবে না। গুলি থাকা অবস্থায় যাতে কোনো কেন্দ্র দখল করতে না পারে কেউ। সর্বশেষ বুলেট থাকা পর্যন্ত কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা চেষ্টা করবেন। এ ছাড়া ১৫ মিনিট তাদের চেষ্টা অব্যাহত রাখতে স্ট্রাইকিং ফোর্স সেখানে উপস্থিত হওয়ার সুযোগ পাবেন বলেও ইসির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। বৈঠকে নির্বাচন কমিশনের বক্তব্যে অতীতের নির্বাচন নিয়ে নানা আলোচনাও হয়েছে। এতে নির্বাচন কমিশনাররা বলেছেন, ‘এক দল বলে, আমরা বিমাতাসুলভ আচরণ করছি। আরেক দল বলে, আমরা সরকারের পকেটে ঢুকে গেছি। দুটাই যেন মিথ্যা হয়, আমাদের সে অনুযায়ী কাজ করা উচিত।’ তারা বলেন, ‘আমরা যে সর্বাঙ্গীণভাবে ভালো করতে পারছি, সেটি বলা যাবে না। দু-একজন এমন কাজ করেছে, যার জন্য নির্বাচন কমিশন প্রশ্ন বিদ্ধ হয়েছে। এটি যাতে আর না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।’ বৈঠক সূত্র জানিয়েছে, আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে যেসব এলাকায় বিএনপির কোনো প্রার্থী নেই এবং আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী রয়েছেন, সেসব এলাকায় ব্যাপক আকারে সহিংসতা ঘটতে পারে। দলীয় কোন্দল রূপ নিতে পারে সংঘাতে, এমন আশঙ্কা প্রকাশ করেছে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। এ জন্য এসব এলাকায় অতিরিক্ত ফোর্স মোতায়েনের সুপারিশ করা হয়েছে। গতকাল আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক সভায় এমন আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়। সভায় গোয়েন্দা সংস্থা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা বলেছেন, অন্য যে কোনো নির্বাচনের চেয়ে ইউপি নির্বাচনে অপ্রীতিকর অবস্থা বেশি ঘটতে পারে। পরিস্থিতি সরকারের ওপর চাপাতে ২০-দল তত্পর থাকতে পারে। বৈঠকে রিটার্নিং অফিসার ও প্রিসাইডিং অফিসারের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারা। এ ছাড়া সরকারের উচ্চপর্যায়ের নেতারা গ্রেপ্তারে পুলিশকে প্রভাবিত করছেন বলেও অভিযোগ করা হয়। পুরো নির্বাচন নিয়ন্ত্রণ করা বড় ধরনের চাপ মন্তব্য করে ভোটের পুনর্বিন্যাস করার দাবি তোলেন পুলিশ কর্মকর্তারা। সভায় কর্মকর্তারা বলেন, এ নির্বাচন দলীয় পর্যায়ে হওয়ার কারণে পাড়ায় পাড়ায় পারস্পরিক দ্বন্দ্ব দলীয় পর্যায়ে চলে যাচ্ছে। অন্যান্য নির্বাচনের তুলনায় এ নির্বাচনে অপ্রীতিকর ঘটনা বেশি ঘটার আশঙ্কা রয়েছে। নির্বাচনী কর্মকর্তাদের ওপর হামলা হতে পারে। এ জন্য  তাদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা জোরদার করা দরকার। ২০-দলীয় জোট পরিস্থিতি সরকারের ওপর চাপাতে পারে। প্রভাবশালী নেতাদের এলাকায় একই দল থেকে একাধিক প্রার্থী থাকা গ্রুপিং তৈরি হতে পারে বলেও মত দেন তারা। এ ছাড়া পার্বত্য এলাকায় নিরাপত্তা সমস্যা আছে বলেও উল্লেখ করেন এক শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা। তিনি বলেন, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে জঙ্গি ও বিচ্ছিন্নতাবাদীরা প্রভাব বিস্তার করে সংঘাতময় পরিবেশ তৈরি করতে পারে। তাই পুরো পার্বত্য অঞ্চলের সবগুলো ইউপিতে একই দিন নির্বাচন হওয়া উচিত। নইলে সন্ত্রাসীরা এক এলাকার নির্বাচন শেষ করে অন্য এলাকায় গিয়ে সমস্যা সৃষ্টি করবে। বৈঠক সূত্র জানায়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মোতায়েন আরও বাড়ানোর পক্ষে মত দেন নির্বাচনী কর্মকর্তারা। যদিও পুলিশ বলছে, পুরো নির্বাচনের জন্য পর্যাপ্তসংখ্যক পুলিশ সদস্য নেই। তাই নির্বাচনকে পুনর্বিন্যাস করার দাবি তোলেন তারা। পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, ভোটের দিন কি অন্য কোনো অপরাধ ঘটবে না? যদি সব পুলিশ নির্বাচনই পাহাড়া দেয়, তাহলে বাকি পরিস্থিতি কীভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখা হবে। অনেক পুলিশ সুপারই এমন আপত্তি তোলেন। তাদের মতে, ছয় ধাপে নির্বাচন করা পুলিশের জন্য অনেক বড় চাপ হয়ে যাবে। আরও কয়েক ধাপ বাড়ানো উচিত বলে মত দেন তারা। এ ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েন করা অনেকটা সুবিধাজনক হবে।

এদিকে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও প্রিসাইডিং অফিসারদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন পুলিশ কর্মকর্তরা। এক পুলিশ সুপার বলেন, অনেক সময় দেখা যায় রিটার্নিং অফিসাররা স্বজনপ্রীতি দেখান। আর প্রিসাইডিং অফিসাররা খুব সহজে ম্যানেজ হয়ে যান। দেখা গেল বাইরে পুলিশ নিরাপত্তা দিচ্ছে, ভেতরে প্রিসাইডিং অফিসার অনৈতিক কাজ করছেন। এ ক্ষেত্রে এক জায়গার প্রিসাইডিং অফিসারকে অন্য জায়গায় নিয়ে যাওয়া উচিত। এমনকি ভোটকেন্দ্রের ভেতরটাও পুলিশকে নজরদারির করার সুযোগ দেওয়া উচিত। এই এসপি আরও বলেন, ‘আওয়ামী লীগের উচ্চপর্যায়ের নেতারা বিভিন্ন লোক গ্রেপ্তার করার জন্য আমাদের ওপর চাপ প্রয়োগ করে থাকেন। এ নিয়ে আমরা ঝামেলার মধ্যে আছি।’

সভায় সমাপনী বক্তব্যে সিইসি অপ্রীতিকর পরিস্থিতির জন্য পুলিশকে দায়ী করেন। তিনি বলেন, ‘দু-একটি জায়গায় গণ্ডগোল হওয়ার কারণে পুরো নির্বাচনে সফল হতে পারি না আমরা। এই সবকিছুর দায়দায়িত্ব পুলিশের ওসিদের নিতে হবে। গুলি থাকা অবস্থায় যাতে কোনো কেন্দ্র দখল করতে না পারে কেউ। সর্বশেষ বুলেটটি ব্যবহার করে হলেও কেন্দ্র বাঁচাতে হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর