শুক্রবার, ৪ মার্চ, ২০১৬ ০০:০০ টা

মালামাল ছাড়াতে পার হতে হয় তিরিশ ঘাট

শাহজালালে কার্গো অব্যবস্থাপনা

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

মালামাল ছাড়াতে পার হতে হয় তিরিশ ঘাট

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আমদানিকৃত মালামাল ছাড়াতে পার হতে হয় অন্তত তিরিশ ঘাট। অনেক ক্ষেত্রে পণ্য ডেলিভারিতে দেড় থেকে দুই মাস সময়ও লেগে যায়। ডেলিভারির সময় আবার ঠিকমতো পণ্য বুঝে না পাওয়া গেলেও বুঝে পাওয়ার অঙ্গীকারনামায় স্বাক্ষর করতে হয়। আমদানিকারকদের জিম্মি করে এভাবেই কার্গো হ্যান্ডলিং কার্যক্রম চালাচ্ছে বিমান কর্তৃপক্ষ। সম্প্রতি বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত সভার কার্যবিবরণীতে উঠে এসেছে এসব অভিযোগ।

শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কার্গো হ্যান্ডলিং ব্যবস্থাপনা উন্নয়নে ২ ফেব্রুয়ারি একটি সভা হয় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে। সভায় বিমান কর্তৃপক্ষ, বেবিচক, এনবিআর, শুল্ক গোয়েন্দা, ব্যবসায়ী, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট, ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার্সসহ সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য ওই কার্যবিবরণীতে তুলে ধরা হয়। এরপর ১৪ ফেব্রুয়ারি এটি পাঠানো হয় সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থায়। কার্যবিবরণীর তথ্য অনুযায়ী, বিজিএমইএ সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান সভায় জানান, হযরত শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে মালামাল ছাড়াতে অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেড় থেকে দুই মাস সময় লাগে। শত শত কোটি টাকার মালামাল দীর্ঘদিন খোলা আকাশের নিচে পড়ে থাকায় এর গুণগত মান অক্ষুণ্ন থাকে না। বর্ষাকালে সমস্যা আরও প্রকট আকার ধারণ করে। অনেক সময় পানিতে ভিজে মালামাল নষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু পণ্য সরবরাহের সময় স্বাক্ষর করতে হয় শতভাগ মাল বুঝে পাওয়ার অঙ্গীকারনামায়। এ পরিস্থিতিতে তিনি দেশের প্রধান রপ্তানি খাত তৈরি পোশাকের মালামাল সংরক্ষণ ও সরবরাহের জন্য পৃথক কাউন্টার খোলার আবেদন জানান। বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মাহবুবুল আলম জানান, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কার্গো গোডাউনের স্বল্পতা রয়েছে। মালামাল বন্দরে আসার পর বিমান থেকে তা গ্রহণ করতে তিন থেকে চার দিন সময় লেগে যায়। অথচ প্রায় তিন থেকে চার গুণ বেশি খরচ করে জরুরি প্রয়োজনে ব্যবসায়ীরা বিমানে মালামাল আমদানি করে থাকেন। তিনি কার্গো এলাকায় স্ক্যানিং মেশিন বাড়ানোর আবেদন জানিয়ে বলেন, পার্শ্ববর্তী শ্রীলঙ্কার বিমানবন্দরে বাংলাদেশের চেয়ে অনেক বেশি স্ক্যানিং মেশিন রয়েছে। সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শেখ মো. ফরিদ জানান, কার্গো এলাকায় মালামাল রাখার নির্দিষ্ট কোনো স্থান নেই। এ ছাড়া আমদানিকৃত পণ্য যথাযথভাবে ট্যাগিং করেও রাখা হয় না। বিমান কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যে দেড়শ’ শ্রমিক এ কাজে নিয়োগ দিলেও অবস্থার কোনো উন্নতি নেই। সভায় তিনি অভিযোগ করে বলেন, কাস্টমস চেকিংয়ের কাজ মাত্র দুই ঘণ্টায় শেষ হয়ে গেলেও আমদানিকৃত মালামাল ডেলিভারি নেওয়ার জন্য অন্তত তিরিশ ঘাট পার হতে হয়। এনবিআর সদস্য ফরিদ উদ্দিন জানান, সময় ও চাহিদার সঙ্গে হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে বাণিজ্যিক সুবিধা প্রদানের জন্য সক্ষমতা বৃদ্ধি পায়নি। ফলে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সমস্যা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের মৌলিক দায়িত্বের অংশ হিসেবে বিমানবন্দরে বাণিজ্যিক সুবিধা প্রদান-সংক্রান্ত কার্যক্রম সম্পন্ন করা উচিত বলে মন্তব্য করেন তিনি। এসব অভিযোগের জবাবে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস লিমিটেডের এমডি এবং সিইও (ভারপ্রাপ্ত) এম এম আসাদুজ্জামান উইং কমান্ডার (অব.) সভায় জানান, বিমানবন্দরে উপযুক্ত জায়গার অভাব রয়েছে। কার্গো হ্যান্ডলিংয়ে বিদ্যমান অব্যবস্থাপনা দূর করতে তিনি সংশ্লিষ্ট সুবিধাভোগীদের সঙ্গে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেবেন বলে জানান।

সর্বশেষ খবর