বুধবার, ৯ মার্চ, ২০১৬ ০০:০০ টা

মেয়েরা দুর্নীতিতে কম জড়ায়

প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দুর্নীতিতে মেয়েরা একটু কম জড়ায়, ছেলেরা একটু বেশি— এতে কোনো সন্দেহ নেই। মেয়েদের হাতে কাজ দিলে তারা অত্যন্ত সুনিপুণভাবে সেটি শেষ করে। গতকাল আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি। মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় আয়োজিত ওই অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি। অনুষ্ঠানে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘নারীকে আপন ভাগ্য জয় করিবার কেন নাহি দিবে অধিকার হে বিধাতা?’— লাইনটি আবৃত্তি করে শোনান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রাক্তন শিক্ষার্থী শেখ হাসিনা। বলেন, বিধাতার কাছে কাঁদব না আমরা। আমাদের অধিকার আমরা নিজেরা আদায় করে নেব। নিজেরাই অর্জন করব। এ সময় তিনি কাজী নজরুল ইসলামের ‘বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চির-কল্যাণকর/অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর’ এবং ‘সেদিন সুদূর নয়; যেদিন ধরণী পুরুষের সাথে গাহিবে নারীরও জয়’ লাইনগুলোও আবৃত্তি করে শোনান। সংসার সুখী রাখতে মেয়েদের অনেক দায়িত্ব থাকে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, একটি সংসার সুখের করতে মেয়েদের অনেক অনেক দায়িত্ব পালন করতে হয়। আশা করি, আমার বোনেরা সেই দায়িত্ব পালন করবেন। তিনি বলেন, কথায় তো আছে যে রাঁধে, সে চুলও বাঁধে। মেয়েরা সব পারে। ঘরে যেমন কাজ করতে পারে, বাইরেও কাজ করতে পারে। এ সময় তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় বাংলাদেশকে একটি ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত দেশ হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব হবে। অন্যের মুখাপেক্ষী না হয়ে নারীদের আত্মনির্ভরশীল হওয়ার পরামর্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের কারও মুখাপেক্ষী হয়ে থাকলে চলবে না। নিজেদের ভাগ্য নিজেদের গড়তে হবে, নিজেদের পায়ে দাঁড়াতে হবে। আত্মবিশ্বাস নিয়ে চলতে হবে। তবেই মর্যাদা পাওয়া যাবে। কেঁদে কেঁদে ফিরলে মর্যাদা কেউ হাতে তুলে দেয় না। তিনি বলেন, উন্নয়নের জন্য নারী-পুরুষের সমান অবদান প্রয়োজন। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, একজন মেয়ে যদি সারা দিন কাজ করে আঁচলে বেঁধে কিছু টাকা নিয়ে আসেন, তাহলে সংসারে তার দাম থাকে। তাই যেভাবেই হোক নারীদের নিজের কর্মসংস্থান করে নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে। তাহলে পরিবার ও সমাজে নারীদের মর্যাদা বাড়বে, দাম পাবে। শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের দেশে সরকারপ্রধান, সংসদের স্পিকার, বিরোধীদলীয় নেতা, সংসদ উপনেতা সবাই নারী। বিশ্বের কোথাও এ ধরনের দৃষ্টান্ত নেই। বিশ্বের অনেক দেশ আছে, যারা ধনী, উন্নয়নে যারা বিশ্বব্যাপী মোড়লগিরি করে বেড়ায়, তারা কিন্তু আজ পর্যন্ত কোনো নারী সরকারপ্রধান করতে পারেনি। এ সময় প্রধানমন্ত্রী তিন বাহিনীতে নারীদের উপস্থিতি, জজকোর্টে নারী, নারী পাইলটসহ সাঁতার ও ভারোত্তোলনে দুই নারীর সোনা জয়ের কথা উল্লেখ করেন। একাত্তরে নির্যাতিত মেয়েদের জন্য বাবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিবের ভালোবাসার কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সব পিতামাতা তাদের গ্রহণ করতে চায়নি, অনেকে পরিচয় দিতে চায়নি। তখন প্রশ্ন উঠেছিল, বিয়ে দিতে গেলে তো তাদের বাবার নাম লিখতে হবে। তখন জাতির পিতা বলেছিলেন, বাবার নামের জায়গায় আমার নাম লিখে দাও। বাড়ির ঠিকানা দাও ধানমন্ডি-৩২ নম্বরের সড়কের ওই বাড়িটি। অনেককে আমার মা নিজে দাঁড়িয়ে থেকে বিয়ে দিয়ে তাদের সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। নারীর অধিকার রক্ষায় নারী উন্নয়ন নীতিসহ সরকারের নানা পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ নারীদের আত্মবিশ্বাস সৃষ্টি করেছে। ধর্মের নামে নারীকে ‘কূপমণ্ডূক’ করে রাখা যাবে না। ইসলাম ধর্মে স্বামীর সম্পদে যেমন নারীর অধিকার আছে, তেমনি পিতার সম্পদেও। একমাত্র ইসলাম ধর্মই সম্পদের এই অধিকার দিয়েছে। আমাদের ধর্মে নারীর ক্ষমতায়নে গৌরবের ইতিহাস রয়েছে। বিবি খাদিজা যখন ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন, তিনি কিন্তু ব্যবসা-বাণিজ্য করতেন। দেশ-বিদেশেও ঘুরতেন। কাজেই আমাদের সামনে দৃষ্টান্ত রয়েছে। আমাদের ঘাবড়াবার কিছু নেই।

সর্বশেষ খবর