বুধবার, ৯ মার্চ, ২০১৬ ০০:০০ টা

মধ্যপ্রাচ্যে নজর বাংলাদেশের

সৌদি সফরের প্রস্তুতি শীর্ষ পর্যায়ের

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগসহ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কোন্নয়নে মধ্যপ্রাচ্য ও পশ্চিম এশিয়ার তেলসমৃদ্ধ দেশগুলোকে এ মুহূর্তে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে ঢাকা। বড় বড় অবকাঠামো উন্নয়নে বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণের পাশাপাশি বাংলাদেশের বর্তমান সরকার বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের উন্নয়নে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছে। আর এসব খাতে মধ্যপ্রাচ্যের বিনিয়োগ ও সম্পদ ব্যবহারের একটি পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের।

জানা গেছে, স্বাধীনতার পর মধ্যপ্রাচ্যের তেলসমৃদ্ধ দেশগুলোয় জনশক্তি রপ্তানি ও অনুদান সহায়তার ওপর গুরুত্ব দিয়ে আসছে বাংলাদেশ। তবে মধ্য আয়ের দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে গড়ে তোলার জন্য উন্নয়নের সেই নীতিতে পরিবর্তন এসেছে। পরিবর্তিত সেই নীতি মেনে এ মুহূর্তে সরকার জনশক্তি রপ্তানির পাশাপাশি বাংলাদেশে মধ্যপ্রাচ্যের বিনিয়োগ ও সম্পদ ব্যবহারে গুরুত্ব দিচ্ছে। এ নীতিতে এরই মধ্যে সৌদি আরবের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য, বিনিয়োগ, নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনার জন্য সরকারের উচ্চ পর্যায়ের (ভিভিআইপি) একটি সফর তৈরির দায়িত্ব পেয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ওই সফরের প্রস্তুতির লক্ষ্যে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি নিয়ে আন্তমন্ত্রণালয় বৈঠক করারও কথা রয়েছে। একই উদ্দেশ্যে নিকট ভবিষ্যতে ইরান, কাতার ও কুয়েত সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের সফর তৈরি হতে পারে বলে জানা গেছে। সূত্র জানায়, পদ্মা সেতু, ঢাকা-চট্টগ্রাম ফোর লেন হাইওয়ে, মেট্রোরেল, গভীর সমুদ্রবন্দরসহ যোগাযোগ খাতের উন্নয়নে বর্তমান সরকার গ্রহণ করেছে বেশ কয়েকটি মেগা প্রকল্প। বিশেষ অর্থনৈতিক জোনগুলোয় বিনিয়োগের ক্ষেত্রে শুল্ক সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। আরও বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে নতুন করে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে অর্থনৈতিক জোন স্থাপনের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এসব ক্ষেত্রে মধ্যপ্রাচ্যের বিনিয়োগ সহায়তা ও জ্বালানি সম্পদের ব্যবহারে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক চিত্র বদলে যেতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। সরকারি সূত্রগুলো আরও জানায়, মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে বাংলাদেশের শ্রম রপ্তানি ছাড়াও ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও জ্বালানি সহায়তা, নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন ইস্যুতে সম্পর্কোন্নয়নের সুযোগ ও সম্ভাবনা রয়েছে। অথচ এ ধরনের সুযোগ থাকার পরও কুয়েত, সৌদি আরব ও আরব আমিরাতের সঙ্গে অল্প কিছু বিষয়ে বাংলাদেশের চুক্তি রয়েছে। কুয়েতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তি এবং অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষর ও অনুসমর্থন করেছে বাংলাদেশ। হয়েছে দ্বৈত কর পরিহার ও রাজস্ব ফাঁকি প্রতিরোধ চুক্তি। ওমানের সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারকের সংস্কার করা হয়েছে। তবে এসবের পাশাপাশি এখন অবকাঠামো উন্নয়ন, বিনিয়োগ ও জ্বালানি সহায়তাসহ ব্যাপকভিত্তিতে মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে বাংলাদেশের কাজ করার সময় এসেছে। শিল্প মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্পর্ক তৈরির প্রক্রিয়া এরই মধ্যে শুরু হয়েছে। গত সপ্তাহে সৌদি আরব সফরে গিয়ে শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু দেশটির সরকারি প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। সেখানে এক বৈঠকে বিনিয়োগসংক্রান্ত পারস্পরিক সম্পর্কোন্নয়ন ও শিল্পে সহযোগিতা বাড়াতে সৌদি আরবের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় পুঁজি বিনিয়োগ চুক্তি শিগগির সই করা হবে বলে জানিয়েছেন শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু। শিল্পমন্ত্রী সৌদি অ্যারাবিয়ান জেনারেল ইনভেস্টমেন্ট অথরিটির ডেপুটি গভর্নর ও ন্যাশনাল কমপিটিটিভ সেন্টারের প্রেসিডেন্ট সউদ কে. আল ফয়সালসহ দেশটির সরকারি প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন। এসব বৈঠকে সৌদি কর্তৃপক্ষকে বর্তমানে বাংলাদেশে বিনিয়োগ পরিবেশ সম্পর্কে অবহিত করে আমির হোসেন আমু বলেন, তার সরকার বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহী অন্যান্য দেশের মতোই সৌদি উদ্যোক্তাদের সমান সুবিধা দেবে। এদিকে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের পর জ্বালানিসমৃদ্ধ ইরানের সঙ্গে জ্বালানি সহায়তা ছাড়াও বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণে সরকারের আলোচনা চলছে। এরই অংশ হিসেবে সম্প্রতি দেশটির শিল্প ও বাণিজ্য উপদেষ্টা রেজা মওদুদি ঢাকা সফর করে গেছেন। এসব বৈঠকে বাণিজ্য সম্প্রসারণ ও দ্বিপক্ষীয় জ্বালানি সহায়তার বিষয়গুলো গুরুত্ব পেয়েছে। জ্বালানি সহায়তা নিয়ে দ্বিপক্ষীয় আলোচনার জন্য বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রীর তেহরান সফরের কথা রয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব শওকত আলী ওয়ারেছি বলেন, একটা সময় বাংলাদেশের লক্ষ্য ছিল সম্পদশালী দেশগুলোর অনুদান ও সহায়তার ওপর। এখন তার পরিবর্তন ঘটেছে। আমরা এখন বিনিয়োগ চাইছি। কারণ, বাংলাদেশে বিনিয়োগের পরিবেশ তৈরি হয়েছে।

দেশের রপ্তানি পণ্য প্রায় ৪৫টি দেশে জিএসপি সুবিধা পাচ্ছে। জনগণের ক্রয়ক্ষমতা বাড়ছে। ফলে এ দেশে ব্যবসা-বাণিজ্য ও অবকাঠামো খাতে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো বিনিয়োগ করলে উভয় পক্ষ লাভবান হবে।

সর্বশেষ খবর