বুধবার, ৯ মার্চ, ২০১৬ ০০:০০ টা

ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে : অর্থমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

যুক্তরাষ্ট্রে ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে বাংলাদেশ ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট থেকে হ্যাকারদের হাতিয়ে নেওয়া অর্থ উদ্ধারে প্রয়োজনে মামলা করা হবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। গতকাল সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন মন্ত্রী। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের এখানে কোনো রকমের দোষ কিছু নেই। এটা ফেডারেল রিজার্ভের, যারা এটা সেখানে হ্যান্ডেল করেন, তাদের কোনো গোলমাল হয়েছে। তারা যদিও বলছে, তাদের কোনো দায়িত্ব নেই। তবে এটা হতেই পারে না। কারণ দেখা যায়, আমি যা শুনেছি বা জেনেছি, ওখান থেকে তারা (ফেডারেল রিজার্ভ) বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে বার্তা প্রেরণ করেন। আমরা তোমাদের এই রকম একটা হুকুম পেয়েছি। তোমরা এটা কনফার্ম কর। জবাবে তারা (বাংলাদেশ ব্যাংক) বলেছে, এটা ফলস। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের এই নির্দেশনা পাওয়ার আগেই লেনদেনটা হয়েছে। সুতরাং ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক কোনোমতেই তাদের দায়িত্ব এড়াতে পারবে না। যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকের দায় অস্বীকারের বিষয়ে সরকার কোনো পদক্ষেপ নেবে কি না—জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘অফ কোর্স’। আমরা তাদের বিরুদ্ধে মামলা করব। তাদের কাছে টাকা রাখছি, তারাই এই জন্য রেসপনসিবল। সুতরাং তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে। কোনো তদন্ত করা হবে কিনা— এ প্রশ্নে তিনি বলেন, এটা বাংলাদেশ ব্যাংক ভালো বলতে পারবে। অবশিষ্ট অর্থের হদিস বের করে তা উদ্ধারে ফিলিপিন্সের অ্যান্টি মানি লন্ডারিং কর্তৃপক্ষের সঙ্গে একযোগে কাজ চলছে বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, আমি কালকে পর্যন্ত কিছু জানি নাই। আমি বাড়িতে গিয়েছিলাম, দেখলাম আতিউরের একটা মেসেজ আছে যে, ‘আই এম ট্রায়িং টু টক টু ইউ’। আই স্পোক টু হিম লেটার। এর মধ্যে অনেকবার কথা হয়ে গেছে।

একুশে পদক না পাওয়ায় অতৃপ্ত অর্থমন্ত্রী : এদিকে এবার অর্থমন্ত্রী সবচেয়ে বড় রাষ্ট্রীয় পদক স্বাধীনতা পুরস্কার পাচ্ছেন এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা অবশ্যই খুশির খবর। তবে এখনো একুশে পদক না পাওয়ায় তিনি অতৃপ্ত। তিনি বলেন, এখন আনন্দ নিয়েই মরতে পারব। আমি মনে করি, এখন যারা জীবিত আছে, তাদের মধ্যে যাদের একুশে পদক পাওয়া উচিত, সেই ব্যক্তির মধ্যে আমি একজন। উল্লেখ্য, স্বাধীনতা সংগ্রামে অবদানের জন্য এবার স্বাধীনতা পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছেন মুহিত।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মামলা : বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি সূত্র জানায়, ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্ক থেকে হ্যাক হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনতে ফিলিপাইনের আদালতে ইতিমধ্যে মামলা দায়ের করা হয়েছে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনো কর্মকর্তা এমনকি মুখপাত্রও এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি। শুধু জানানো হয়েছে এখন তদন্ত চলছে। এ ঘটনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের অ্যাকাউন্টস অ্যান্ড বাজেটিং বিভাগের আট কর্মকর্তাকেও নজরদারিতে রাখা হয়েছে। তাদের পাসপোর্টও জব্দ করা হয়েছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী মুখপাত্র এ এফ এম আসাদুজ্জামান বলেন, শ্রীলঙ্কায় পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনা হয়েছে। আর ফিলিপাইনের অর্থ আদায়ে তাদের মানি লন্ডারিং বিভাগের সঙ্গে কাজ করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ বিষয়ে ইতিমধ্যে মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলা নিষ্পত্তি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অর্থ ফিরিয়ে আনা হবে।

র‌্যাব-পুলিশের সঙ্গে বৈঠক : অন্যদিকে গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান র‌্যাব ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে এ নিয়ে দীর্ঘসময় রুদ্ধধার বৈঠক করেছেন। বৈঠকের একটি সূত্র জানায়, এই ঘটনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট অ্যান্ড বাজেট ডিপার্টমেন্টের ব্যাক অফিসের (সিলিং) আট কর্মকর্তাকে নজরদারিতে রাখা হয়েছে। তাদের সংশ্লিষ্টতা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ জন্য ইতিমধ্যে তাদের পাসপোর্টও জব্দ করা হয়েছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক শুভঙ্কর সাহা বলেন, বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংক তদন্ত করছে। এ ছাড়া অর্থ উদ্ধারের বিষয়টি অব্যাহত রয়েছে।

ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকের অস্বীকার : বাংলাদেশ ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট থেকে অর্থ চুরির অভিযোগ অস্বীকার করেছে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ সিস্টেম কর্তৃপক্ষ। বলা হয়েছে, বাংলাদেশের অর্থ চুরির কোনো নথিপত্র তাদের কাছে নেই। ফেডারেল রিজার্ভ সিস্টেমের মুখপাত্রের বরাত দিয়ে আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদেন এই তথ্য জানানো হয়েছে। রয়টার্সের ওই প্রতিবেদনে জানানো হয়, ফেডারেল রিজার্ভের ওই মুখপাত্র জানিয়েছেন, ব্যাংকটির রিজার্ভ সিস্টেমে অবৈধভাবে প্রবেশ করে অর্থ লেনদেন সংক্রান্ত কোনো তথ্য নেই। এমনকি তাদের সিস্টেমে কোনো দুর্নীতিও ধরা পড়েনি।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর