শনিবার, ১২ মার্চ, ২০১৬ ০০:০০ টা

দলীয় কোন্দলেই বাড়ছে সংঘাত

গোলাম রাব্বানী ও রফিকুল ইসলাম রনি

অভ্যন্তরীণ তীব্র কোন্দলের কারণেই আওয়ামী লীগকে প্রথম ধাপের ইউপি নির্বাচনে তিন শতাধিক বিদ্রোহী প্রার্থীর মোকাবিলা করতে হচ্ছে। এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছেন দলের বিদ্রোহী প্রার্থীরা। গত পৌরসভা নির্বাচনে  বিদ্রোহী প্রার্থীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা না নেওয়ায় এর প্রভাব পড়েছে ইউপি নির্বাচনে। প্রত্যেক ইউপিতে ক্ষমতাসীন দলের একাধিক গ্রুপিং থাকায় দলীয় ভোটও হবে ভাগাভাগি। এতে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীদের বিজয় পড়তে পারে হুমকিতে। এ ছাড়া প্রতিদিনই ৮ থেকে ১০ জায়গায় আওয়ামী লীগের প্রার্থীর সঙ্গে বিদ্রোহী প্রার্থীর সংঘর্ষ, হামলা-পাল্টা হামলার খবর পাওয়া যাচ্ছে। ফলে দিন দিন উত্তপ্ত হয়ে উঠছে নির্বাচনী মাঠ। প্রচার-প্রচারণা নিয়েও সংঘর্ষ হচ্ছে নিজেদের মধ্যে। ক্ষমতাসীনদের পক্ষ থেকে এখনই বিদ্রোহীদের লাগাম টেনে না ধরলে দলীয় প্রার্থীদের ভরাডুবি হওয়ার শঙ্কা প্রকাশ করেছেন নির্বাচন বিশ্লেষকরা। অন্যদিকে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো নির্বাচন কমিশনকে আগেই বলেছিল— দলীয়ভাবে এ নির্বাচন হওয়ায় ক্ষমতাসীন দলের বিদ্রোহী প্রার্থীরা মাঠে রয়েছেন। ফলে দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও দলীয় বিদ্রোহী প্রার্থীদের মধ্যে সংঘাত-সংঘর্ষের আশঙ্কা বেশি রয়েছে। নির্বাচন বিশ্লেষকরাও এমন কথাই বলছেন। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী ও দলের বিদ্রোহী প্রার্থীরাই নিজেদের মধ্যে সংঘাত সৃষ্টি করছে বলে মনে করেন তারা। আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা বলছেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে এটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা। প্রথম ধাপে বিদ্রোহী প্রার্থী বেশি থাকায় এই সমস্যা। পরবর্তীগুলোয় এ সমস্যা থাকবে না। আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, দাঙ্গা-হাঙ্গামা ঠেকাতে ও বিদ্রোহী প্রার্থীদের নিবৃত্ত করতে চেষ্টা চালাচ্ছে দলটি। যারা দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে প্রার্থী হয়েছেন, তাদের তালিকা করা হচ্ছে। এর সমন্বয় করছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তার নেতৃত্বে সমন্বয় সেলের নেতারা বিদ্রোহী প্রার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। তারা দলীয় প্রার্থীর সমর্থনে বিদ্রোহী প্রার্থীদের নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর নির্দেশ দিচ্ছেন। আওয়ামী লীগের এক প্রভাবশালী প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেন, আওয়ামী লীগ একটি বিশাল রাজনৈতিক দল। সেখানে দলীয় মনোনয়ন নিয়ে মনোমালিন্য থাকবে। কারণ প্রতিটি ইউপিতে প্রার্থী একজন। কাজেই ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কিছু ঘটনা যে ঘটছে না, তা নয়। এসব ঘটনা যেন না ঘটে সে জন্য কেন্দ্র থেকে তদারকি করা হচ্ছে। জানা গেছে, সম্প্রতি সাতক্ষীরার তালা উপজেলা আওয়ামী লীগের দলীয় কোন্দলের কারণে হামলা ও সংঘর্ষ ঘটেছে। উপজেলার খলিলনগর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান চেয়ারম্যান প্রার্থী প্রভাষক প্রণব ঘোষ বাবলু। আর তার ওপর হামলা চালিয়েছে দলের বিদ্রোহী প্রার্থী আজিজুর রহমান রাজুর কর্মী ও সমর্থকরা। দুই প্রার্থীর কোন্দলের প্রভাব পড়ছে দলীয় কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে। ফলে তারা দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েছেন। একইভাবে সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জের ব্রহ্মগাছা ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন নাসির উদ্দিন নাজির। জানা গেছে, আওয়ামী লীগ প্রার্থী গোলাম সরোয়ার লিটনের সমর্থনে যুবলীগ কর্মীরা বিদ্রোহী প্রার্থী নাসির উদ্দিনের সমর্থকদের ওপর হামলা চালায়। এতে দুজন গুলিবিদ্ধসহ কমপক্ষে ১০ জন আহত হন। এদিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর ওপর হামলা চালিয়েছে যুবলীগ নেতা-কর্মীরা। শরীফপুর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী সাইফ উদ্দিন চৌধুরী। কিন্তু দলীয় কোন্দলের কারণে যুবলীগ তার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। সম্প্রতি গণসংযোগ করার সময় স্থানীয় যুবলীগের ১৫-২০ জনের একটি সংঘবদ্ধ দল দলীয় প্রার্থীর ওপরে হামলা করে। এ ছাড়া নোয়াখালীর হাতিয়ার চরকিং ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন আহমেদ। অভিযোগ রয়েছে, হাতিয়ায় চলে সাবেক এমপি মোহাম্মদ আলীর শাসন। দল বড় কথা নয়, মোহাম্মদ আলীর কথাই শেষ কথা সেখানে। মহিউদ্দিন আহমেদ তার অনুসারী না হওয়ায় তাকে মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন তিনি। এ ছাড়া ভোটারদের বিভ্রান্ত করতে মহিউদ্দিন নামে আরেক ব্যক্তিকে বিদ্রোহী প্রার্থী দাঁড় করিয়েছেন মোহাম্মদ আলী। উপজেলার কমরুদ্দি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ফখরুল ইসলাম। তার লোকজনদের হয়রানি করছেন মোহাম্মদ আলীর লোকজন। এখানে তিনজন বিদ্রোহী প্রার্থী মাঠে রাখা হয়েছে। সোনাদিয়া আওয়ামী লীগের প্রার্থী হাজী নুরুল ইসলাম। তার নামে মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। ৫ মার্চ আওয়ামী লীগের নির্বাচনী অফিস জ্বালিয়ে দেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। নিঝুমদ্বীপে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান মেহেরাজ হাজী। তার বাসা ঘেরাও করে রাখে বিদ্রোহী প্রার্থীদের লোকজন। এ উপজেলায় আওয়ামী লীগের প্রার্থীরাই চাপে। গত সোমবার রাতে পটুয়াখালী জেলার বাউফল উপজেলার আদাবাড়িয়া ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ ও বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকের মধ্যে সংঘর্ষে নিহত হন ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি আশরাফ ফকির। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রাতে আবদুল বারেকের বাড়িতে বৈঠক করছিলেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী সামসুল হক ফকির। বৈঠককে কেন্দ্র করে ওই এলাকায় আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী জাহাঙ্গীরের কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে সামসুল হকের কর্মীদের সংঘর্ষ হয়। এতে দুই পক্ষের অন্তত ১৬ জন আহত হন। বাগেরহাটের মোল্লারহাট উপজেলার উদয়পুর ইউনিয়নে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে ১০ জন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও ২০ জন। গতকাল সকাল সাড়ে ৯টার দিকে আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে দুই সদস্য প্রার্থীর সমর্থকরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার নির্বাচন পরিচালনা কমিটির অন্যতম সদস্য ও দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে যে দু-একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনার  খবর আমরা পাই তা একেবারেই নগণ্য। প্রথম দফায় দু-একটি ঘটনা ঘটলেও আগামীতে এসব কমে আসবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

সর্বশেষ খবর