রবিবার, ১৩ মার্চ, ২০১৬ ০০:০০ টা

টাকা যায় ফেরত আসে না

অ্যাকাউন্ট খুলতে জালিয়াতি সর্বনাশে রিজাল ব্যাংক

আলী রিয়াজ

টাকা যায় ফেরত আসে না

বাংলাদেশের বিভিন্ন ব্যাংকের টাকা লোপাট হয় কেলেঙ্কারি ও জালিয়াতির মাধ্যমে। শুরুটা হয়েছিল হলমার্ক-বিসমিল্লাহ দিয়ে। সেই টাকা এখনো ফেরত পাওয়া যায়নি। এর মধ্যে ভুয়া দলিল ও এফডিআরের মাধ্যমেও টাকা জালিয়াতির অভিযোগ রয়েছে। সমস্যা হলেই তদন্ত কমিটি হয় কিন্তু টাকা ফেরত আসে না।

 

বাংলাদেশ ব্যাংকের ৮১ মিলিয়ন ডলার হ্যাক করে নিয়ে যাওয়ার ঘটনায় ফেঁসে যাচ্ছেন ফিলিপাইনের রিজাল ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তারা। এ ঘটনায় রিজাল ব্যাংকের জুপিটার স্ট্রিট শাখায় অ্যাকাউন্ট খোলা থেকে শুরু করে টাকা লেনদেন পর্যন্ত পুরো ঘটনাই জানত তারা। এমনকি অ্যাকাউন্ট খুলতেও জালিয়াতির আশ্রয় নেওয়ার প্রমাণ পেয়েছে ঘটনার তদন্তকারী সংস্থা ফিলিপাইন এন্টি মানি লন্ডারিং কর্তৃপক্ষ। এ ঘটনায় চলতি সপ্তাহে ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তাদের ফিলিপাইনের সিনেট (সংসদ) জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকেছে। ঘটনার পর নিজের দায় অস্বীকার করে প্রতিষ্ঠানের এমডি লরেন্স ট্যান দায়িত্ব থেকে ছুটি নিয়েছেন। এ ছাড়া ঘটনার সঙ্গে জড়িত হিসেবে সন্দেহভাজন জালিয়াতকারী উইলিয়াম গো নিজের দায় অস্বীকার করেছেন। জানা গেছে, ফিলিপাইনের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় মানি লন্ডারিংয়ের ঘটনায় নড়েচড়ে বসেছে দেশটির প্রশাসন। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের ধরতে দেশটির একাধিক সংস্থা তদন্ত করছে। তাদের তদন্তে প্রাথমিকভাবে রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশনের (আরসিবিসি) শীর্ষ কর্মকর্তাদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে। প্রাথমিক তদন্তে ফিলিপাইন এন্টি মানি লন্ডারিং কর্তৃপক্ষ গণমাধ্যমের কাছে জানিয়েছে, ঘটনার বিস্তারিত তদন্ত হচ্ছে। এ ঘটনার উদ্দেশ্যে গত বছরের মার্চে আরসিবিসি জুপিটার স্ট্রিট শাখায় যে অ্যাকাউন্ট খোলা হয় সেখানে গ্রাহকের পুরো তথ্য নেওয়া হয়নি। পাঁচটি অ্যাকাউন্টের ক্ষেত্রেই গ্রাহকের (‘নো ইয়োর কাস্টমার’- কেওয়াইসি) তথ্য পূরণ না করেই ব্যাংক শাখা অ্যাকাউন্ট খোলে। অ্যাকাউন্ট খোলার পর গত ফেব্রুয়ারিতে ৮১ মিলিয়ন ডলার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসার পর দুটি ক্যাসিনোতে ট্রান্সফার করা হয় একটি অংশ। আরেকটি অংশ চেকের মাধ্যমে উত্তোলন করে নিয়ে যান ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহভাজন গার্মেন্ট ব্যবসায়ী উইলিয়াম গো। তবে উইলিয়াম গো চেকের মাধ্যমে তার স্বাক্ষরে টাকা উত্তোলনের কথা অস্বীকার করেছেন। ফিলিপাইনের ইনকোয়ার পত্রিকার মাধ্যমে জানা গেছে, গত শুক্রবার ফিলিপাইনের মাকাতি সিটির একটি হোটেলে এক সংবাদ সম্মেলনে উইলিয়াম গোর আইনজীবী র‌্যামন অ্যাসগুয়েরা সাংবাদিকদের কাছে এ দাবি করেন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, গোর স্বাক্ষর নকল করে চেকের মাধ্যমে টাকা তোলা হয়েছে। ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর আরসিবিসির জুপিটার শাখার ম্যানেজার মাইয়া সান্তোস ডিগুইতো দুই কোটি পেসো (ফিলিপিনো মুদ্রা) ঘুষ দিতে চেয়েছিল। কিন্তু তিনি (গো) রাজি হননি বলে ওই আইনজীবী দাবি করেছেন। এদিকে ঘটনার সঙ্গে এবার আরসিবিসির শীর্ষ কর্মকর্তাদের জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে। জুপিটার শাখা ম্যানেজার ডিগুইতো দাবি করেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে সংশ্লিষ্ট অ্যাকাউন্টে ডলার আসার পর দুটি ক্যাসিনোতে ৪৬ মিলিয়ন ডলার দিয়ে দেওয়া হয়। কোনো ধরনের অনিয়ম দেখা না যাওয়ায় ওই ডলার দিয়ে দেওয়া হয়েছে। বিপুল পরিমাণ ডলার হওয়ায় তা এমডিকে জানানো হয়। তিনি নির্দেশ দেওয়ার পর ক্লায়েন্টকে টাকা দেওয়া হয়। আরসিবিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক লরেন্স ট্যান গণমাধ্যমকে বলেছেন, আমাদের ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তাদের জানানোর পর পুরো টাকা লেনদেন করার নির্দেশ দেওয়া হয়। ব্যাংকের চেয়ারপারসন হেলেন ওয়াই ডিসহ ১৫ জন পরিচালক রয়েছেন। তাদের প্রত্যেককেই এই লেনদেন সম্পর্কে জানানো হয়। তাদের জানানোর পরও ক্যাসিনোতে ওই অর্থ পাঠানো হয়। এর পরে বাকি অর্থ চেকের মাধ্যমে অ্যাকাউন্ট হোল্ডার উইলিয়াম গো নিয়েছেন। তবে শাখা থেকে কোনো ধরনের সন্দেহজনক কিছু্ই বলাও হয়নি। শুধু বিপুল পরিমাণ ডলার হওয়ায় ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের অনুমতি নেওয়া হয়। এর পরেই টাকা লেনদেন করা হয়েছে। তিনি এসব ঘটনার সঙ্গে কোনো ধরনের সংশ্লিষ্টতার কথাও অস্বীকার করেছেন। ঘটনার তদন্তের অংশ হিসেবে লরেন্স ট্যান ছুটি নিয়েছেন। তিনি বর্তমানে ব্যাংকের কোনো কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত নন। চলতি সপ্তাহে ব্যাংকের পুরো পর্ষদ সদস্যদের ফিলিপাইনের সিনেট ডেকে পাঠিয়েছে। সিনেটে এই জালিয়াতি শুনানিতে তাদের জবাবদিহি করতে হবে।

এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃপক্ষ এখনো অর্থ উদ্ধারের চেষ্টা করে চলেছে। গতকালও বাংলাদেশ ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তারা বৈঠক করেছেন বিষয়টি নিয়ে। বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি প্রতিনিধি দল আবারও ফিলিপাইন যাবে সে দেশের তদন্ত সংস্থা ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে কথা বলার জন্য। জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক শুভঙ্কর সাহা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, গুরুত্বের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কাজ চলছে। এ ঘটনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনো দুর্বলতা ছিল না। এখন আমরা সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি কীভাবে অর্থ উদ্ধার করা যায়। তদন্তের স্বার্থে এরচেয়ে বেশি কিছু বলা যাবে না। 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর