রবিবার, ১৩ মার্চ, ২০১৬ ০০:০০ টা

বিএনপির সম্মেলন হলেও কমিটি হচ্ছে না

শফিউল আলম দোলন

বিএনপির সম্মেলন হলেও কমিটি হচ্ছে না

আগামী ১৯ মার্চ বিএনপির জাতীয় সম্মেলন হলেও সেদিন দলের কমিটি ঘোষণা করা হচ্ছে না। বিকালের কাউন্সিল অধিবেশনে কাউন্সিলররা চেয়ারপারসনকে সর্বময় দায়িত্ব দেওয়ার পর আরও এক থেকে দেড় মাস পরে নির্বাহী কমিটি ঘোষণা করা হতে পারে। কিংবা আরও দেরি হতে পারে দলটির পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণার ক্ষেত্রে। দলের অভ্যন্তরীণ কিছু সমস্যাজনিত কারণেই এবার কমিটি ঘোষণায় এ দীর্ঘসূত্রতা তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে বিগত আন্দোলনের ক্ষতিগ্রস্ত ও ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়নের লক্ষ্যেই কাউন্সিল হয়ে যাওয়ার পর মাসখানেক কিংবা তারও কিছু বেশি সময় নিয়ে চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া তার সুবিধামতো সময়ে কমিটি ঘোষণা করতে পারেন। ইতিমধ্যেই তিনি বর্তমান কমিটির সব কর্মকর্তার আমলনামাও সংগ্রহ করেছেন। দলের নীতিনির্ধারকদের একাধিক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। তবে দলের ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিল যথারীতিই অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, বিএনপির নতুন নির্বাহী কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে এবার অনেকটা হ-য-ব-র-ল অবস্থা তৈরি হয়েছে। কেন্দ্র থেকে শুরু করে একেবারে ইউনিয়ন পর্যায় থেকে তদবির আসছে কেন্দ্রীয় কমিটিতে নাম লেখাতে। বিশেষ করে নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ভিত্তিক কতিপয় নেতার এখন কান জ্বালাপালা হয়ে গেছে এসব তদবিরে। কেন্দ্রীয় কমিটিতে নাম লেখানোর এই তদবিরে যোগ্যদের চেয়ে অযোগ্য, অদক্ষ ব্যক্তিরাই এখন পর্যন্ত এগিয়ে আছেন। এর ফলে বরাবরের মতোই যোগ্য, দক্ষ, ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাদের পরিবর্তে আবারও সেই অথর্ব, অযোগ্য, অকর্মণ্য ও সুবিধাবাদী শ্রেণির ব্যক্তিরাই বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটিতে প্রবেশে তদবিরের দৌড়ে এগিয়ে গেছেন। এ ছাড়া কতিপয় পরিচিত মুখের নেতার বিরুদ্ধে এসব পদ-পদবি নিয়ে বাণিজ্যেরও অভিযোগ উঠেছে। এসব বিষয়ে দলের দুই শীর্ষ নেতার দৃষ্টিগোচর হয়েছে। ফলে দীর্ঘদিনের প্রচলিত— ‘বিএনপিতে তদবিরে মেওয়া ফলে’ প্রবাদটি এবার শেষ পর্যন্ত কতটুকু ফলপ্রসূ হয়, তা নিয়েও বেশ কৌতূহল দেখা দিয়েছে।  জানা গেছে, এবার ঢাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় নেতারা নির্বাহী কমিটির খসড়া তালিকা চূড়ান্ত করার পর সেগুলো পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ শেষে আন্দোলনে ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়নের ওপর সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেবেন বিএনপি হাইকমান্ড। এর সঙ্গে প্রয়োজনীয় সংযোজন-বিয়োজন শেষে সরাসরি চেয়ারপারসনের কাছে পাঠানোর পর চেয়ারপারসন সেই কমিটি অনুমোদন দিলেই সেটি ঘোষণা করা হবে। তাছাড়া এবার চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের পাশাপাশি দলেরও একটি উপদেষ্টা পরিষদ গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। স্থায়ী ও নির্বাহী কমিটির অধিক বয়োজ্যেষ্ঠ, বিশেষ করে শারীরিকভাবে অক্ষম নেতৃবৃন্দের ঠিকানা হতে যাচ্ছে নতুন এই উপদেষ্টা পরিষদ। আসন্ন কাউন্সিল প্রসঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, কমিটি কখন ঘোষণা করা হবে, না হবে সেটি আমি বলতে পারব না। কারণ এটা নির্ধারণ করবেন কাউন্সিলররা। তবে বিএনপির ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিল তথা সম্মেলনের প্রস্তুতি শেষ পর্যায়ে। ইনশা আল্লাহ ১৯ মার্চই আশা করছি দলের কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হবে। আর সেখানে সারা দেশ থেকে আগত সম্মানীত কাউন্সিলররাই সিদ্ধান্ত নেবেন কখন কীভাবে কমিটি গঠিত হবে। দলটির স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, কমিটি গঠনের বিষয়টি কাউন্সিলরদের এখতিয়ার। অন্যান্যবারের মতো এবারও গঠনতন্ত্রের বিধান অনুযায়ীই কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হবে। বরাবরের মতোই প্রয়োজনীয় সংশোধনীও আনা হবে গঠনতন্ত্রে। কাউন্সিলররা যদি মনে করেন, কমিটি গঠনের সব দায়িত্ব চেয়ারপারসনের ওপর অর্পণ করবেন, তাহলে সেটিই করতে পারেন। আর তখন চেয়ারপারসন তার সুবিধামতো সময়ে সেই কমিটি ঘোষণা করতে পারেন। দলের এই নীতিনির্ধারক বলেন, কমিটি কী হবে, না হবে জানি না। তবে এই কাউন্সিলের মাধ্যমে গত কয়েক বছরের ধারাবাহিক স্বৈরশাসনে ক্ষতবিক্ষত বিএনপি সাংগঠনিকভাবে ঘুরে দাঁড়ানোর শক্তি সঞ্চয় করবে। আর দলীয় নেতৃত্বে কিছু পরিবর্তন-পরিবর্ধন তো সব সময়ই হয়ে থাকে। এটা গতানুগতিক প্রক্রিয়া। তবে এবারের কাউন্সিলকে ঘিরে আমাদের প্রত্যাশা হলো— রাজনীতিকে পরিষ্কার করে এমন একটি গুণগত মানে উন্নীত করা, যাতে রাষ্ট্রীয় ও দলীয় সব ক্ষেত্রে ও সব পর্যায়ে গণতান্ত্রিক সংস্কৃতিচর্চার সুযোগ তৈরি হয়। আসন্ন কাউন্সিলের মাধ্যমে বিএনপির এই সৎ উদ্দেশ্য সফল হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন ড. মোশাররফ হোসেন। 

এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির অপর একজন সদস্য গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সারা দেশের লাখ লাখ নেতা-কর্মীর প্রত্যাশা অনুযায়ী ও যুগোপযোগী নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে প্রয়োজনে চেয়ারপারসন একটু-আধটু সময় নিতেই পারেন। তড়িঘড়ি করে যেনতেন কমিটি না দিয়ে একটু সময় নিয়ে যোগ্য ব্যক্তিদের দিয়ে ইতিবাচক কমিটি ঘেষণা করাটাই হবে দেশ, দল ও নেতা-কর্মীদের জন্য অধিক কল্যাণকর। অপর একটি সূত্র জানায়, বিএনপি থেকে দূরে সরে যাওয়া প্রভাবশালী বেশ কয়েকজন নেতাকে পুনরায় দলে আনার যে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল, মাঝখানে কতিপয় ব্যক্তির অযাচিত কিছু বাধার কারণে এতে স্থবিরতা দেখা দেয়। এদেরও কিছু দিনের ভিতরেই দলে ফিরিয়ে আনা হতে পারে। এসব বিষয় বিবেচনায় রেখেই এবারের জাতীয় নির্বাহী কমিটি গঠন করা হচ্ছে। প্রসঙ্গত, ২০০৯ সালের ৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত বিএনপির পঞ্চম জাতীয় কাউন্সিলের দ্বিতীয় অধিবেশনে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে আলোচনা শেষে সারা দেশের কাউন্সিলররা দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটি গঠনসহ সব সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে সর্বময় ক্ষমতা অর্পণ করেন। অতঃপর বেগম জিয়া সে রাতেই খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনকে তিন বছরের জন্য দলের মহাসচিব নিয়োগসহ নতুন স্থায়ী ও নতুন নির্বাহী কমিটি ঘোষণা করেন।

সর্বশেষ খবর