রবিবার, ১৩ মার্চ, ২০১৬ ০০:০০ টা

ঢাকা-লন্ডন যাত্রীবাহী ফ্লাইট বন্ধের শঙ্কায়

যুক্তরাজ্য প্রতিনিধি দল ঢাকা আসছে আজ। মন্ত্রী ঘুরে দেখলেন নিরাপত্তা ব্যবস্থা

মির্জা মেহেদী তমাল

ঢাকা-লন্ডন যাত্রীবাহী ফ্লাইটও যুক্তরাজ্যের নিষেধাজ্ঞা ঝুঁকিতে রয়েছে। বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে দুই দেশের সম্মত কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তা জোরদারের কাজ শুরু না হলে বাংলাদেশ বিমানের যুক্তরাজ্যগামী সরাসরি যাত্রীবাহী ফ্লাইট এ নিধোজ্ঞার আওতায় পড়বে। বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করতে যুক্তরাজ্য সরকারের এক সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল আজ ঢাকায় আসছে। আর আগামী ২২ মার্চ আসছে যুক্তরাষ্ট্রের একটি পর্যবেক্ষণ দল। তাদের দেওয়া পর্যবেক্ষণের ওপর নির্ভর করবে কার্গো ফ্লাইটের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার এবং যাত্রীবাহী ফ্লাইটের ওপর নতুন করে নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি। আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে নিরাপত্তার ঘাটতি থাকায় ৮ মার্চ ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সরাসরি পণ্য পরিবহনে নিষেধাজ্ঞা জারি করে যুক্তরাজ্য। এতে করে লন্ডনগামী বাংলাদেশ বিমানের সরাসরি কার্গো পরিবহন বন্ধ হয়ে যায়। এর তিন মাস আগে একই ধরনের নিষেধাজ্ঞা জারি করে অস্ট্রেলিয়া। সংশ্লিষ্টরা বলছে, বিমানবন্দরের নিরাপত্তার বিষয়টি খুবই গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছে যুক্তরাজ্য। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন মঙ্গলবার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে চিঠি লিখে ৩১ মার্চের মধ্যে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন। অন্যথায় বাংলাদেশ থেকে সরাসরি ব্রিটেনে যাত্রী চলাচল বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এদিকে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন এমপি গতকাল সকালে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অফিস করেছেন। এ সময় তিনি বিমানবন্দরের বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেন।

সিভিল এভিয়েশনের নির্ভরশীল সূত্র জানায়, সরকার যুক্তরাজ্যের নিষেধাজ্ঞার এ সিদ্ধান্তকে অযৌক্তিক মনে করলেও প্রকৃতপক্ষে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তা যে আন্তর্জাতিক মানের নয়, এতে সন্দেহ নেই। যুক্তরাজ্য বারবার তাগিদ দিলেও সিভিল এভিয়েশন সে ঘাটতি পূরণে পাঁচ মাসেও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারেনি। গৃহীত পদক্ষেপ বলতে, বিমানবাহিনী, আনসার ও পুলিশ থেকে ধার করে নেওয়া ২৫০ জনের একটি যৌথবাহিনী মোতায়েন। এ ছাড়া এই বাহিনীর কোনো কর্মকাণ্ড সেখানকার কোনো পরিবর্তন আনতে পারেনি। এর বাইরে কনকর্স হল বন্ধ করে দেওয়া ছাড়া আর কিছুই চোখে পড়েনি। সূত্র জানায়, ব্রিটিশ গোয়েন্দারা দীর্ঘদিন ধরে কাজ করেছেন বিমানবন্দরে। শাহজালাল বিমানবন্দরের বাইরে হাজার হাজার দর্শনার্থী প্রতিদিন ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকাটাও এক ধরনের নিরাপত্তার হুমকি বলে মনে করছেন ব্রিটিশ গোয়েন্দারা।

দীর্ঘ সময়েও নিরাপত্তা ব্যবস্থায় পরিবর্তন না আসায় সরকারের শীর্ষ মহলও ক্ষুব্ধ। সিভিল এভিয়েশন ও বাংলাদেশ বিমানের শীর্ষ পর্যায়ে রদবদলের সম্ভাবনাও রয়েছে বলে জানা গেছে।

ঢাকায় আসছে প্রতিনিধি দল : আজ ঢাকায় আসছে যুক্তরাজ্য ও ইউরোপে সরাসরি কার্গো রপ্তানি করতে প্রয়োজনীয় সনদ দেওয়ার রেগুলটরি প্রতিষ্ঠান ‘এয়ার কার্গো সিকিউরিটি-৩ (এসিসি)’-এর এক সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল। দলটি ঢাকায় কয়েক দিন অবস্থান করে শাহজালাল বিমানবন্দর ও কার্গো হাউস নিয়মিত পরিদর্শন করবেন। একই সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করবেন সর্বশেষ নেওয়া নিরাপত্তা-সংক্রান্ত পদক্ষেপগুলো। সচক্ষে দেখবেন কীভাবে ইটিডি ও স্ক্যানার অপারেট করা হয়। বিমান সূত্র জানায়, এই টিমের দেওয়া প্রতিবেদনের ওপর নির্ভর করছে যুক্তরাজ্যে সরাসরি কার্গো পরিবহনে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার এবং যাত্রীবাহী ফ্লাইটের নিষেধাজ্ঞার বিষয়। এ টিম যদি সন্তুষ্ট হয়ে ইতিবাচক প্রতিবেদন দাখিল করে, তাহলে আগামী মাস থেকেই ফের চালু হতে পারে যুক্তরাজ্যে সরাসরি কার্গো ফ্লাইট। বিমানবন্দরের নিরাপত্তা নিয়ে আলোচনা করতে এ মাসেই আসছে যুক্তরাষ্ট্রের দুই প্রতিনিধি দল। ২২ ও ২৩ মার্চ তাদের ঢাকা সফরে আসার কথা। বিমানবন্দরের নিরাপত্তার পাশাপাশি মার্কিন প্রতিনিধিরা সাইবার নিরাপত্তাসহ অন্যান্য বিষয়েও আলোচনা করবে।

সূত্র জানায়, ঢাকা-নিউইয়র্ক রুটে সরাসরি ফ্লাইট বন্ধ রয়েছে। জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রও ঢাকার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তার ঘাটতি নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছিল। তখনো তিন মাসের সময়সীমা দিয়ে যৌথ কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের বাধ্যবাধকতা ঠিক করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দলের প্রতিবেদনের ওপর নির্ভর করবে নিউইয়র্ক ফ্লাইটের ভবিষ্যৎ।

বিমানবন্দরে মন্ত্রী : বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন গতকাল সকালে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অফিস করেন। এ সময় তিনি বিমানবন্দরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখেন। বিমানবন্দরের কার্গো কমপ্লেক্সের উন্নয়ন ও নিরাপত্তাব্যবস্থা ঢেলে সাজানোর প্রেক্ষাপটে ৩১ মার্চের মধ্যে কার্গো পরিবহনে যুক্তরাজ্যের সাময়িক নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। রাশেদ খান মেনন বলেন, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তা জোরদার করতে সরকার ইতিমধ্যে নতুন নিরাপত্তা বাহিনী গঠনের পাশাপাশি প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতিসহ আনুষঙ্গিক কাজের জন্য বাড়তি অর্থ বরাদ্দ করেছে। মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় ‘বাংলাদেশের বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে জরুরি সরঞ্জাম সরবরাহ ও সংস্থাপন’ প্রকল্পের জন্য প্রায় ৯০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদিত হয়েছে। ওই প্রকল্পের আওতায় বিভিন্ন ধরনের স্ক্যানার, তরল ও বিস্ফোরক দ্রব্য শনাক্তকরণ ব্যবস্থা, ব্যারিয়ার গেটসহ বিভিন্ন যন্ত্র কেনার কথা রয়েছে বলে জানা গেছে। গেল অক্টোবরে পেতে রাখা বোমায় মিসরের সিনাই উপত্যকায় রাশিয়ার একটি বিমান বিধ্বস্ত হওয়ায় বিভিন্ন দেশের বিমানবন্দরের নিরাপত্তা জোরদারের তাগিদ দিচ্ছে পশ্চিমা দেশগুলো। এর পর থেকেই বাংলাদেশসহ আরও কিছু দেশকে বিমানবন্দরের নিরাপত্তা বাড়াতে যুক্তরাজ্যের ডিপার্টমেন্ট অব ট্রান্সপোর্ট তাগাদা দিয়ে আসছে। পশ্চিমা দেশগুলোর পক্ষে যুক্তরাজ্যের বিমান নিরাপত্তা-বিষয়ক দফতর বিশ্বের ২০টি দেশের নিরাপত্তাঝুঁকিতে থাকা ৩৮টি বিমানবন্দরের যে তালিকা তৈরি করেছে, এতে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরও রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ পাশ্চাত্যের কয়েকটি দেশের পক্ষে বিভিন্ন দেশের বিমানবন্দরের নিরাপত্তা মূল্যায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয় যুক্তরাজ্যকে। এর পর থেকে ঢাকায় কয়েক দফা সফর করেছেন যুক্তরাজ্যের কর্মকর্তারা। তারা বিমানবন্দরের নিরাপত্তা জোরদারের তাগিদ দিয়ে আসছেন।

সর্বশেষ খবর