রবিবার, ১৩ মার্চ, ২০১৬ ০০:০০ টা
কবি রফিক আজাদ ১৯৪১-২০১৬

চলে গেলেন ভালোবাসা ও দ্রোহের কবি

নিজস্ব প্রতিবেদক

চলে গেলেন ভালোবাসা ও দ্রোহের কবি

দ্রোহ ও ভালোবাসার কবি রফিক আজাদ আর নেই। একাত্তরের বীর মুক্তিযোদ্ধা তার সেই বিখ্যাত কবিতা ‘চলে যাবো সুতোর ওপারে’র মতো করেই সব বন্ধন ছিন্ন করলেন গতকাল দুপুর ২টা ১০ মিনিটে (ইন্না লিল্লাহি ... রাজিউন)। সত্তরের দশকে বাঙালি জাতিকে উজ্জীবিত করতে তিনি লিখেছিলেন, ‘আমার ক্ষুধার কাছে কিছুই ফেলনা নয় আজ/ ভাত দে হারামজাদা, তা নাহলে মানচিত্র খাবো’। কবির আরেক কবিতা, ‘যদি ভালোবাসা পাই, আবার শুধরে নেবো জীবনের ভুলগুলি।’ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান দেশের অন্যতম প্রধান এ কবি। মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের কারণে গত ১৫ জানুয়ারি স্বনামখ্যাত এই কবিকে বিএসএমএমইউ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। গত ১৩ ফেব্রুয়ারি অবস্থার অবনতি হলে তাকে আইসিইউতে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়। তিনি ৫৮ দিন লাইফ সাপোর্টে ছিলেন। বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষ জানায়, গত শুক্রবার সকাল থেকে কবির রক্তচাপ পাওয়া যাচ্ছিল না। ক্রমান্বয়ে তার শারীরিক পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে থাকে। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে টাঙ্গাইলে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম এর নেতৃত্বাধীন কাদেরিয়া বাহিনীর যোদ্ধা হিসেবে সম্মুখ সমরে অংশ নেওয়া কবি রফিক আজাদের বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর। একুশে পদকে ভূষিত কবি রফিক আজাদ মৃত্যুকালে স্ত্রী কবি দিলারা হাফিজ, চার ছেলে ও এক মেয়ে রেখে গেছেন। কবি রফিক আজাদের মৃত্যুর খবরে সাহিত্যিক ও বুদ্ধিজীবী মহলে শোকের ছায়া নেমে আসে। কবির ভক্ত বন্ধুবান্ধব ও শুভানুধ্যায়ীরা হাসপাতালে ছুটে যান। তার মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া প্রমুখ শোক প্রকাশ করেছেন। আগামীকাল সোমবার মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে কবিকে দাফন করা হবে। তার মরদেহ বারডেম হাসপাতালের হিমঘরে রাখা হয়েছে। কবির পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, তার দুই ছেলে অভিন্ন আজাদ ও অব্যয় আজাদ কানাডায় থাকেন। তারা বাবাকে দেখতে দেশে এসেছিলেন। ১০ মার্চ অভিন্ন আজাদ কানাডা ফিরে যান। বাবার মৃত্যুর খবর শুনে অভিন্ন ফিরতি প্লেনে আবার রওনা হয়েছেন। আগামীকাল তিনি দেশে পৌঁছাবেন। কবির ভাতিজি ড. নীরু শামসুন্নাহার জানান, তার মরদেহ বারডেম হাসপাতালের হিমঘরে রাখা হয়েছে। কাল সকাল ১০টায় কবির মরদেহ প্রথমে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য নেওয়া হবে। সেখান থেকে বাংলা একাডেমিতে নেওয়ার পর ঢাকা কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। জানাজা শেষে মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে তাকে দাফন করা হবে। কবি রফিক আজাদের জন্ম ১৯৪১ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি টাঙ্গাইল জেলার ঘাটাইল থানার গুণী গ্রামের এক অভিজাত পরিবারে। দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন সর্বকনিষ্ঠ। বাবা সলিম উদ্দিন খান ছিলেন একজন সমাজসেবক এবং মা রাবেয়া খান আদর্শ গৃহিণী। তিনি পেশাজীবনে বাংলা একাডেমির সাহিত্য পত্রিকা উত্তরাধিকার-এর সম্পাদক, টাঙ্গাইলের মাওলানা মুহম্মদ আলী কলেজে বাংলার প্রভাষক, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী কালচারাল একাডেমির পরিচালক ও সাপ্তাহিক রোববারসহ বিভিন্ন সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। একুশে পদক ছাড়াও কবি রফিক আজাদ বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার, হুমায়ুন কবির স্মৃতি পুরস্কারসহ অসংখ্য পদক ও সম্মাননায় ভূষিত হন রফিক আজাদ। তার উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থের মধ্যে আছে ‘অসম্ভবের পায়ে’, ‘সীমাবদ্ধ জলে সীমিত সবুজে’, ‘চুনিয়া আমার আর্কেডিয়া’, ‘পাগলা গারদ থেকে প্রেমিকার চিঠি’, ‘প্রেমের কবিতাসমগ্র’, ‘বর্ষণে আনন্দে যাও মানুষের কাছে বিরিশিরি পর্ব’, ‘হূদয়ের কী বা দোষ’, ‘কোনো খেদ নেই’, ‘প্রিয় শাড়িগুলো’।

বাংলাদেশ প্রতিদিনের শোক : প্রখ্যাত কবি রফিক আজাদের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ প্রতিদিন পরিবার। কবির বিদেহী আত্মার মাগফিরাত ও শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করা হয়েছে। এদিকে আগামী ১৫ মার্চ বাংলাদেশ প্রতিদিন-এর সাত বছরে পদার্পণ উপলক্ষে গত সপ্তাহে কবি রফিক আজাদ ও কথাশিল্পী সমরেশ মজুমদারকে সম্মাননা প্রদানের সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ প্রতিদিন পরিবার। গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনে প্রকাশিত সম্মাননা প্রাপ্তির খবরটি আর জানা হলো না কবি রফিক আজাদের।

সর্বশেষ খবর