সোমবার, ২৮ মার্চ, ২০১৬ ০০:০০ টা

সন্ত্রাসে অর্থায়নে ঝুঁকিতে বাংলাদেশ

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

সন্ত্রাসে অর্থায়নে ঝুঁকিতে বাংলাদেশ

অবশেষে আশঙ্কাই সত্যি হলো। মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে আন্তর্জাতিক বিশ্বের কাছে বাংলাদেশ এখন ঝুঁকিপূর্ণ একটি রাষ্ট্র। এই মূল্যায়ন করেছে এশিয়া প্যাসিফিক গ্রুপ অন মানি লন্ডারিং (এপিজি)। সম্প্রতি সংস্থাটি তাদের তৃতীয় পর্বের এ সংক্রান্ত মূল্যায়ন প্রক্রিয়ার খসড়া প্রতিবেদন বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে হস্তান্তর করেছে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, এপিজির এই মূল্যায়নই চূড়ান্ত নয়। বাংলাদেশকে ঝুঁকিপূর্ণ মূল্যায়নের প্রতিবেদনে এপিজি বলেছে, জাতীয় ঝুঁকি নিরূপণে সন্ত্রাসে অর্থায়নকে সঠিকভাবে চিহ্নিত করা হয়নি। এ বিষয়ে বাংলাদেশের কোনো দালিলিক কৌশলপত্রও নেই।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ফিনান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) মহাব্যবস্থাপক দেবপ্রসাদ দেবনাথ বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশকে চিহ্নিত করা সংক্রান্ত এপিজির এই মূল্যায়নই চূড়ান্ত নয়। এটি তাদের তৃতীয় পর্যায়ের মূল্যায়ন। আগামী জুলাইয়ে বাংলাদেশে অনুষ্ঠেয় সংস্থাটির বার্ষিক সভায় যে মূল্যায়ন উপস্থাপন করা হবে সেটিই হবে চূড়ান্ত। তার আগে এপিজির সঙ্গে কাজ করার আরও সুযোগ রয়েছে বাংলাদেশের। এপিজির এই প্রতিবেদনটি এমন একসময়ে বাংলাদেশে পাঠানো হলো যখন দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জমা রাখা রিজার্ভ থেকে আন্তর্জাতিক সাইবার চক্র হ্যাক করে প্রায় ৮০০ কোটি টাকার সমপরিমাণ ডলার লোপাট করে নিয়ে গেছে। বহির্বিশ্বে যেটি এখন আলোচিত ইস্যুগুলোর একটি। রিজার্ভের এই অর্থ ঘুরেফিরে দেশের জঙ্গি পৃষ্ঠপোষকতায় আসতে পারে বলে সন্দেহ করছে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। কারণ, আন্তর্জাতিক বিশ্বে জঙ্গি অর্থায়নে এ ধরনের ব্যাংক লুট, জুয়া ও মাদক পাচারের অবৈধ অর্থ ব্যবহারের নজির রয়েছে। এপিজির মূল্যায়নে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের টেকনিক্যাল কমপ্লায়েন্সের রেটিং ভালো হলেও ‘ইফেকটিভনেস’-এর রেটিং আশানুরূপ নয়। খসড়া প্রতিবেদনে ১১টি ইমিডিয়েট আউটকাম (আইও)-এর মধ্যে মাত্র ১টি আইও-তে সংহত বা দৃঢ় অবস্থান (সাবসটেনশিয়াল) দেখা গেছে, ৫টি আইও-তে মাঝারি বা সীমিত অবস্থান (মডারেট) এবং ৫টি আইও-তে নিম্নমানের (লো লেভেল) রেটিং করা হয়েছে। বর্তমানে ১১টি আইও-এর মধ্যে ৯ বা তার অধিক আইও-তে মাঝারি বা নিম্নমানের রেটিং থাকলে ওই দেশকে ঝুঁকিপূর্ণ দেশের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে মানি লন্ডারিংবিষয়ক আন্তর্জাতিক গ্রুপ ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন রিভিউ গ্রুপ (আইসিআরজি)। গত ২৩ মার্চ এপিজির এই প্রতিবেদন সম্পর্কে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অবহিত করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের কাছে লেখা এক চিঠিতে বিএফআইইউ-এর মহাব্যবস্থাপক দেবপ্রসাদ দেবনাথ জানান, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে বাংলাদেশের আইন প্রয়োগকারী ও গোয়েন্দা সংস্থার গৃহীত কার্যক্রম সম্পর্কে মুখোমুখি প্রশ্ন করতে এপিজির একটি টিম ২ মে ঢাকা আসবে। মূল্যায়নকারী দলের কাছে সঠিকভাবে সরকারের কার্যক্রম তুলে ধরতে পারলে মানি লন্ডারিং ঝুঁকির রেটিং কিছুটা উন্নীত করার সুযোগ থাকবে। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, এটি এপিজির তৃতীয় পর্যায়ের মূল্যায়ন। অবশ্য এর আগের মূল্যায়নে মুদ্রা পাচার ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে অগ্রগতি হওয়ায় বাংলাদেশকে গ্রে লিস্ট থেকে সাধারণ লিস্টে র্যাংকিং করেছিল এপিজি। তবে সর্বশেষ মূল্যায়নে সন্ত্রাসে অর্থায়ন ও জঙ্গি কার্যক্রম প্রতিরোধে সঠিক তথ্য সরবরাহের কিছুটা ঘাটতি ছিল বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। জানা গেছে, বাংলাদেশের জঙ্গি অর্থায়ন ও মানি লন্ডারিংয়ের ঝুঁকির মাত্রা মূল্যায়ন করতে গত বছরের ৯ অক্টোবর ঢাকায় আসে এপিজির উচ্চ পর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দল। তারা ১২ অক্টোবর থেকে ২২ অক্টোবর পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংক, দুদক, অর্থ মন্ত্রণালয়, এনবিআর, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সরকারের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা ও নীতি-নির্ধারকদের সঙ্গে বৈঠক করে। এরপর বাংলাদেশের অবস্থান মূল্যায়ন করে মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে কাজ করা আন্তর্জাতিক সংগঠন ফিনান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্কফোর্স (এফটিএফ)-এর কাছে প্রতিবেদন জমা দেয়। ওই প্রতিবেদনে সন্ত্রাসে অর্থায়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ঝুঁকিপূর্ণ বলে মূল্যায়ন করা হয়। বাংলাদেশে মূল্যায়ন শেষে ঢাকা ছাড়ার আগের দিন গত বছরের ২১ অক্টোবর অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সঙ্গে তার রোডের বাসভবনে বৈঠক করেছিল এপিজি টিম। ওই বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, ‘মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে চার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের দুর্বলতা শনাক্ত করেছে এপিজি। এগুলো হলো— সরকারি কেনাকাটায় দুর্বলতা, সোনা চোরাচালান প্রতিরোধ, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর দুর্নীতি এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের শিথিলতা।

সর্বশেষ খবর