সোমবার, ২৮ মার্চ, ২০১৬ ০০:০০ টা

ইউপি নির্বাচনে বিএনপির গরজ নেই : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

ইউপি নির্বাচনে বিএনপির গরজ নেই : প্রধানমন্ত্রী

আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন হচ্ছে। দলীয় প্রতীকের এই নির্বাচনে দেখা যাচ্ছে বিএনপির তেমন গরজ নেই। তারা শুধু নানা কথার মাধ্যমে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে, সারা দিন নালিশ করে যাচ্ছে। তাদের কর্মকাণ্ডটা কোথায়? তিনি বলেন, নালিশ করে কী হচ্ছে— নালিশ করে বালিশ পায়, ভাঙা জুতার বাড়ি খায়। মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে গতকাল বিকালে রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনেও বিএনপি জনগণের সমর্থন পাচ্ছে না। তাদের জ্বালাও-পোড়াও ও মানুষকে পুড়িয়ে হত্যার রাজনীতি জনগণ মেনে নেয়নি। আসলে বিএনপি নেত্রী যেভাবে নির্বিচারে জ্বালাও-পোড়াও ও পুড়িয়ে মানুষ হত্যা করেছে এটা কোনোভাবেই আন্দোলন নয়, এটি ছিল সম্পূর্ণ হত্যাকাণ্ড। এ কারণেই জনগণ তার কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। শেখ হাসিনা বলেন, তারা এক ব্রিটিশ এমপিকে নিয়ে এলেন, তিনিও সেই দেশে তিন মাসের জন্য সাসপেন্ড হয়েছেন। কথায় বলে, রতনে রতন চেনে। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, সাধারণ সম্পাদক ও জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, সতীশ চন্দ্র রায়, মাহবুব-উল আলম হানিফ, ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, ডা. দীপু মনি, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আহমদ হোসেন, ডা. বদিউজ্জামান ভূঁইয়া ডাবলু ও রাজশাহীর সাবেক মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন। সভা পরিচালনা করেন ড. হাছান মাহমুদ ও অসীম কুমার উকিল। বক্তৃতায় বঙ্গবন্ধুর সংগ্রামী জীবন, স্বাধীনতার ঘোষণাসহ বর্তমান সরকারের উন্নয়ন প্রভৃতি বিষয় তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী বলেন, পরাজিত শক্তির দোসররা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করতে ব্যর্থ হলেও তাদের ষড়যন্ত্র চক্রান্ত থেমে নেই। দেশ যখন সবক্ষেত্রে উন্নয়নের পথে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হচ্ছে তখন সরকারকে বাধা ও ব্যতিব্যস্ত করতে নানা ষড়যন্ত্র চলছে। শুধু দেশের নয়, ভিতরে-বাইরে অনেক জায়গা থেকেই বারবার বাধা আসে। সেই বাধা অতিক্রম করেই এগিয়ে যাচ্ছি, এগিয়ে যাবই, কেউ দাবিয়ে রাখতে পারবে না। শেখ হাসিনা বলেন, আমরা বিজয়ী জাতি। আমরা বিশ্বে মাথা উঁচু করে চলব। কারও কাছে মাথানত করব না। ভিক্ষা করে চলব না। নিজেদের আয়-সামর্থ্য দিয়ে চলব। নিজেদের সত্পথের পয়সায় ডাল আর মোটা চালের ভাত খাব, ভিক্ষা করে বা কারও কাছে হাত পেতে বিরানি খাব না। দেশের মানুষকেও এমন আত্মবিশ্বাস নিয়েই কাজ করে যেতে হবে। বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রতি ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একজন নেত্রী জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে গেলেন। কিন্তু তার মুখ ছিল করুণ, কোনো হাসি ছিল না। হাসি থাকবে কোত্থেকে? তার পেয়ারের যুদ্ধাপরাধীদের একে একে ফাঁসি হচ্ছে, শাস্তি হচ্ছে।

 কারণ উনার হূদয়ে তো পেয়ারে পাকিস্তান!

বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ভূমিকার কঠোর সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে দেশ যখন এগিয়ে যাচ্ছে, দেশের মানুষ স্বাধীনতার স্বাদ পেতে শুরু করেছে, তখনই জনগণকে বিভ্রান্ত করতে নানা ষড়যন্ত্র শুরু হয়। ওই সময় কারা কাদের মদদে এবং টাকা নিয়ে এসব করেছে তা এখন গবেষণার বিষয়। বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী জিয়াউর রহমান একাত্তরের গণহত্যাকারী, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ করে দিয়ে তাদের মন্ত্রী-প্রধানমন্ত্রী-উপদেষ্টা বানিয়ে রাজনীতিতে পুনর্বাসন করেন। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করে একটি প্রজন্মকে সঠিক ইতিহাস জানতেই দেননি। দেশের নতুন প্রজন্ম এখন মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানতে পারছে।

বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী দলের সব নেতা-কর্মীকে ভালোভাবে পড়ার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণেই বঙ্গবন্ধু বলে গেছেন স্বাধীনতার জন্য কী কী করতে হবে। দেশের মানুষ তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছে। সত্তরের ম্যান্ডেট আর জনগণের অকুণ্ঠ সমর্থন বঙ্গবন্ধুকে অবিসংবাদিত নেতায় পরিণত করেছিল। তাকে দেশের স্বাধীনতার ঘোষণারও ক্ষমতা দিয়েছিল দেশের জনগণ। অনেকেই প্রশ্ন করেন, ৭ মার্চ কেন বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণা দেননি? আসলে ৭ মার্চের ভাষণেই বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন, কিন্তু পাকিস্তানিরা তা বুঝতে বা ধরতে পারেনি। তিনি বলেন, রাজনীতি করতে হলে ইতিহাস জানা খুব দরকার। বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী পড়লেই দেখা যাবে, বঙ্গবন্ধু কীভাবে ধাপে ধাপে বাঙালি জাতিকে স্বাধীনতার দিকে নিয়ে গিয়েছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী স্বাধীনতা অর্জনের পেছনে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ২৪ বছরের দীর্ঘ সংগ্রাম ও সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস তুলে ধরেন। তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর ভারতে গিয়ে বঙ্গবন্ধু সেদেশের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে মিত্রবাহিনীকে দেশে ফিরে নেওয়ার কথা বলেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর মতো দৃঢ়চেতা নেতার পক্ষেই তা সম্ভব হয়েছিল। এ সময় প্রধানমন্ত্রী মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় সহযোগিতা ও আত্মোৎসর্গকারী ভারতীয় বাহিনীর সদস্যদের কথাও কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত-সমৃদ্ধ সোনার বাংলা গড়ে তুলতে দেশবাসী, বিশেষ করে নতুন প্রজম্মের প্রতি আহ্বান জানান।

সর্বশেষ খবর