সোমবার, ২৮ মার্চ, ২০১৬ ০০:০০ টা

তদন্তে আস্থা রেখে ধৈর্য ধরতে হবে

জিন্নাতুন নূর

তদন্তে আস্থা রেখে ধৈর্য ধরতে হবে

মে. জে. মো. আব্দুর রশীদ (অব.)

কলেজছাত্রী সোহাগী জাহান তনুর হত্যাকাণ্ডটি অত্যন্ত দুঃখজনক। তনু হত্যাকাণ্ডের বিচার চাইতে গিয়ে সাধারণ মানুষের উত্তেজনা সৃষ্টি করা বা এই ইস্যুতে ফুঁসে উঠা ঠিক হবে না। তদন্তের প্রতি আস্থা রেখে সবাইকে ধৈর্য ধরতে হবে। নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও ইনস্টিটিউট অব কনফ্লিক্ট, ল’ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট স্টাডিস (আই ক্ল্যডস)-এর নির্বাহী পরিচালক মেজর  জেনারেল মো. আব্দুর রশীদ (অব.) এই কথা বলেন। গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনের এই প্রতিনিধিকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাত্কারে তিনি আরও বলেন, এই ঘটনায় অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরি হওয়া থেকে সাধারণ মানুষকে বিরত থাকতে হবে। বিচারপ্রক্রিয়া যাতে সঠিকভাবে হয় তার জন্য মনোনিবেশ করতে হবে। আব্দুর রশীদ বলেন, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এই ঘটনাকে পুঁজি করে এই ইস্যুতে ভ্রান্ত ধারণা ছড়িয়ে দিতে পারে এ নিয়েও সতর্ক থাকতে হবে। তিনি বলেন, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে সম্প্রতি তনু ইস্যুতে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন কিন্তু সেই স্ট্যাটাস নিয়ে একটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল ভুল ও অসত্য খবর তৈরি করে। আমি নিজে নাসির উদ্দিন বাচ্চুর সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি সম্পর্কে নিশ্চিত হই। ঘটনাটি অনাকাঙ্ক্ষিত। ফলে এখন অনেক পক্ষই তনুর হত্যাকাণ্ড নিয়ে ভুল ও অসত্য খবর প্রকাশ করতে পারে। এ সম্পর্কে এবং যারা এই ধরনের ভুল খবর প্রকাশ করছে তাদের নিয়ে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। কারণ ভুল ও অসত্য খবর মানুষের ক্ষোভকে আরও প্রভাবিত করবে। একই সঙ্গে এই বিষয়ে স্বচ্ছ তথ্য জনগণের কাছে তুলে ধরতে হবে। তদন্তের অগ্রগতি জনসম্মুখে জানাতে হবে। আমি মনে করি সঠিক তথ্য পেলে সাধারণের ক্ষোভ কিছুটা কমবে। সাবেক এই সামরিক কর্মকর্তা বলেন, পুলিশ তদন্তের খাতিরে সেনানিবাসে যাবে এবং এ জন্য পুলিশকে সহযোগিতা করা সেনা কর্তৃপক্ষের আইনগত দায়িত্ব। এক্ষেত্রে পুলিশ ও সেনাবাহিনী প্রয়োজনে একসঙ্গে তদন্ত করবে। অতীতেও এক বাহিনী অন্য বাহিনীকে তদন্তের স্বার্থে সহযোগিতা করেছে। আর সেনাবাহিনীর গোয়েন্দা বিভাগ যদি কোনো তথ্য পায় তবে তা পুলিশকে দিয়ে সাহায্য করবে বলেই বিশ্বাস করি। কিন্তু তদন্ত শুরুর আগেই ‘সেনাবাহিনী পুলিশকে সাহায্য করছে না’ বলে ভুল তথ্য ছড়ানো হয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নিজেও বলেছেন এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটনের চেষ্টা করছেন। আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীগুলোও এ ব্যাপারে সক্রিয় আছে। আব্দুর রশীদ বলেন, এই হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে সাধারণ মানুষের অধিকার খর্ব করা হয়েছে। আর রাষ্ট্র তার নাগরিকের অধিকার রক্ষায় নিয়োজিত। এই কারণে রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলো তনু হত্যাকাণ্ডের তদন্তে একসঙ্গে কাজ করবে এবং সে তদন্তে এক সংস্থার সঙ্গে আরেকটির কোনো বিরোধ থাকবে না বলেই আশা রাখছি। আর আমাদের বুঝতে হবে এই হত্যাকাণ্ডে কোনো রাজনৈতিক ইস্যু নেই, আছে সামাজিক সংশ্লিষ্টতা। এই নিরাপত্তা বিশ্লেষক কলেজছাত্রী তনু হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানান। তিনি বলেন, আমি মনে করি সমাজ ও রাষ্ট্রকে মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়েদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। এই হত্যাকাণ্ডটি সবাইকে নাড়া দিয়েছে। যারা এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে তাদের বিচার অবশ্যই হবে। তবে এই বিষয়ে এক ধরনের ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। আর সেটি হলো, ক্যান্টনমেন্ট থানায় হত্যাকাণ্ডটি সংঘটিত হওয়ায় সেনা কর্তৃপক্ষ হয়তো বিষয়টিতে প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করতে পারেন। কিন্তু এই ধারণা সঠিক নয়। আমি মনে করি এমন কিছু সেনা কর্তৃপক্ষ করবে না। বরং তনু হত্যাকাণ্ডে তদন্ত বাহিনীকে সহযোগিতা করার মানসিকতা সেনাবাহিনীর আছে। অন্যদিকে যে এলাকায় এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে সেখানে বহিরাগতদেরও চলাফেরা আছে। সাধারণ মানুষও সেখানে বসবাস করেন। কাজেই এই ঘটনায় সেনাবাহিনীর কারও সংশ্লিষ্টতা আছে এমন ধারণাও ঠিক নয়। আব্দুর রশীদ আরও বলেন, যে কোনো হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হলে তার ন্যায়-বিচার আশা করাটাই স্বাভাবিক। একইভাবে সেনাবাহিনীও এই হত্যাকাণ্ডে ন্যায়বিচার আশা করবে বলেই মনে করি। যারা এই হত্যার তদন্ত করবেন তাদেরও সহযোগিতা করবে সেনাবাহিনী। তবে তনুর কেসটি পুলিশ তদন্ত করলেও সেখানে সেনা কর্তৃপক্ষের সহযোগিতার মাত্রায় যে অভাব থাকবে এমনটি ভাবা ঠিক না। আর এই হত্যাকাণ্ডের তদন্তে এখন র‌্যাব ও পুলিশ সক্রিয় আছে। সে কারণে বলতে পারি সবাই এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করবেন। এই নিরাপত্তা বিশ্লেষক মনে করেন, তনু হত্যাকাণ্ডে মিডিয়াকে তার সঠিক দায়িত্ব পালন করতে হবে। বিচার ইস্যুতে গুরুত্ব দিতে হবে এবং মানুষকে তদন্তের অগ্রগতি জানাতে হবে। নেতিবাচক খবর পরিবেশন না করে সঠিক তথ্য জানিয়ে মানুষের ক্ষোভ কমাতে হবে।

সর্বশেষ খবর