সোমবার, ১১ এপ্রিল, ২০১৬ ০০:০০ টা

কমিটি নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া

আওয়ামী লীগে প্রশ্ন থানা ও ওয়ার্ড নেতাদের নিয়ে

নিজস্ব প্রতিবেদক

ঢাকা মহানগরকে উত্তর ও দক্ষিণে ভাগ করে আওয়ামী লীগের দুটি পৃথক কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। ঢাকা মহানগর উত্তরে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এ কে এম রহমতউল্লাহ এমপিকে সভাপতি ও মোহাম্মদপুর থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি সাদেক খানকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে। আর দক্ষিণে লালবাগ থানা আওয়ামী লীগ সভাপতি আবুল হাসনাত এবং মহানগরের সাংগঠনিক সম্পাদক শাহে আলম মুরাদকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে। গতকাল ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে দলটির সাধারণ সম্পাদক ও জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম এক যুগ পর ঢাকা মহানগরের নতুন নেতৃত্বের নাম ঘোষণা করেন। একই সঙ্গে থানা ও ওয়ার্ডের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকদের নাম ঘোষণা করা হয়। কমিটি ঘোষণার পরপরই পদবঞ্চিত নেতাদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের বিগত কাউন্সিল অধিবেশনে কাউন্সিলরদের দেওয়া প্রদত্ত ক্ষমতাবলে ও আওয়ামী লীগের বিগত কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে অনুমোদন সাপেক্ষে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা এসব কমিটি অনুমোদন করেছেন। কমিটি ঘোষণার পরপরই দলীয় সভাপতির কার্যালয়ের সামনে কেউ কেউ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, এক সময়ে অন্য দল করে এবং একদিনও জেল-জুলুম নির্যাতন সহ্য না করেই বিশেষ সুবিধায় মহানগরের থানা এবং ওয়ার্ডের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পেয়েছেন। একাধিক নেতা বলছেন, ‘আওয়ামী লীগ করে নৌকায় আর উঠতে পারব না, সারাজীবন গুনই টেনে যাব’। ঘোষিত কমিটি বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ওয়ার্ড ও থানায় অনেক ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতা বিশেষ কারণে কমিটি থেকে ছিটকে পড়েছেন। সুবিধাবাদীরা দায়িত্ব পেয়েছেন ওয়ার্ড ও থানায়। মশিউর রহমান মোল্লা ডেমরা থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন। মশিউর রহমান মোল্লার রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত নন। তিনি ঢাকা-৫ আসনের এমপি হাবিবুর রহমানের ছেলে। এটাই তার বড় পরিচয়। বাবার আশীর্বাদে তিনি সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন বলে স্থানীয় নেতা-কর্মীরা অভিযোগ করেছেন। রমনা থানা আওয়ামী লীগের নবনির্বাচিত কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন মোখলেছুর রহমান। তিনি দীর্ঘদিন থেকে অসুস্থ। চিকিৎসার জন্য তিনি সিঙ্গাপুরে আছেন। দলে তার কার্যক্রম নাই বললেই চলে। কোতোয়ালি থানার হাজী ফজলুর রহমান পর্বত। স্থানীয় নেতা-কর্মীদের অভিযোগ—মাঠের রাজনীতির সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক নেই। কাফরুল থানার ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন মো. আজগর আলী। তিনি মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক আইন বিষয়ক সম্পাদক খোরশেদ আলম বাচ্চু হত্যা মামলার সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ আছে। শেরেবাংলা থানার ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন মো. আবু দাউদ। স্থানীয় নেতা-কর্মীদের অভিযোগ, তিনি কোনো কালেই আওয়ামী লীগ করতেন না। তাছাড়া যেসব প্যানেল কমিটির জন্য জমা দেওয়া হয়েছে সেসব প্যানেলের কোনোটিতেই তার নাম নেই।

কমিটি ঘোষণা শেষে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেন, ভবিষ্যতে নির্বাচন ও আন্দোলনে এ কমিটি ভূমিকা রাখবে। তিনি বলেন, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণের কমিটি ভালো হয়েছে। ভবিষ্যতে এই কমিটি নির্বাচন ও আন্দোলনে ভূমিকা রাখবে বলে তিনি আশা করেন। সাবেক খাদ্যমন্ত্রী আবদুর রাজ্জাক ও সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী ফারুক খানকে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের জন্য পৃথক দুই কমিটি করার দায়িত্ব পালন করায় সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম তাদের ধন্যবাদ জানান। কমিটির নাম ঘোষণার সময় ধানমন্ডির কার্যালয়ে নেতা-কর্মীদের প্রচুর ভিড় ছিল। কার্যালয়ের ভিতর ও বাইরে এবং আশপাশের সড়কে প্রচুর লোকসমাগম হয়। কমিটি ঘোষণার সময় নেতা-কর্মীরা নানান স্লোগান দেন। অনেক নেতা-কর্মী ফুলের তোড়া নিয়ে আসেন। কমিটি ঘোষণার সময় নেতা-কর্মীরা বিভিন্ন স্লোগানে পুরো এলাকা প্রকম্পিত করে তোলেন। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণার পর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ প্রতিটি থানা ও ওয়ার্ডের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণা করেন। দুই মহানগরের পূর্ণাঙ্গ কমিটি কয়েক দিনের মধ্যে দেওয়া হবে। ঢাকা মহানগরের নতুন কমিটিতে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলামসহ অনেককেই শীর্ষ পদে রাখা হয়নি। ২০১২ সালের ২৭ ডিসেম্বর সর্বশেষ দলীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হলেও দীর্ঘদিন ধরেই ঝুলে ছিল আওয়ামী লীগের ঢাকা মহানগর কমিটি। প্রায় সাড়ে তিন বছরের প্রতীক্ষার অবসান নিয়ে তাই নেতা-কর্মীদের মধ্যে ছিল ব্যাপক উদ্দীপনা। সকাল থেকেই সম্ভাব্যপ্রার্থীদের কর্মী-সমর্থকরা দলে দলে ভিড় করতে শুরু করে ধানমন্ডিতে দলীয় সভাপতির কার্যালয়ে।

 দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে সকাল ১১টার দিকে আনুষ্ঠানিকভাবে ঢাকার নব গঠিত দুই কমিটির ঘোষণা দেন দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। তার এই ঘোষণার মাধ্যমে অবিভক্ত ঢাকার প্রায় সাড়ে ছয় দশকের ইতিহাসকে পেছনে ফেলে এক নতুন অধ্যায় শুরু করল উপমহাদেশের ঐতিহ্যবাহী দল আওয়ামী লীগ।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণের থানাগুলোতে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পেলেন যারা : খিলগাঁওয়ে শরীফ আলী খান ও মাহবুবুল আলম। সবুজবাগে আশরাফুজ্জামান ফরিদ ও লায়ন চিত্তরঞ্জন দাস। মুগদায় মো. শামীম আল মামুন ও মোশারফ হোসেন বাহার। ওয়ারী থানায় চৌধুরী আশিকুর রহমান লাভলু ও হাজী আবুল হোসেন, শাহবাগে জি এম আতিকুর রহমান ও অ্যাডভোকেট এম এ হামিদ, মতিঝিলে বশির উদ্দিন বাবুল ও সাব্বির হোসেন, শাহজাহানপুরে আবদুল লতিফ ও আবদুল মুকিত হাওলাদার হূদয়, পল্টনে এনামুল হক আবুল ও মোস্তবা জামান পপি, হাজারীবাগে ইলিয়াসুর রহমান বাবুল ও হাজী সাদেক হামিদ সাজু, ধানমন্ডিতে কামাল আহমেদ দুলাল ও রফিকুল ইসলাম বাবলা, কলাবাগানে নাজমুল করিম টিংক ও নজরুল ইসলাম বাবুল, নিউমার্কেটে জসীম উদ্দিন ও হানিফ মিয়া, রমনায় মোখলেছুর রহমান ও রফিকুল ইসলাম, লালবাগে হাজী দেলোওয়ার হোসেন ও মতিউর রহমান জামাল, চকবাজারে সিরাজুল ইসলাম রাডো ও ইউনুস সুমন, বংশালে আলহাজ গোলাম মোস্তফা ও সিরাজ উদ্দিন বাদল, কোতোয়ালিতে হাজী ফজলুর রহমান পর্বত ও আবু হোসেন জামালউদ্দিন বাবলা, গেন্ডারিয়াতে শহিদুল মিনু ও লিয়াকত জাহান শিপন, সূত্রাপুরে হাজী মো. সহিদ ও গাজী আবু সাঈদ, শ্যামপুরে তোফাজ্জল হোসেন ও কাজী হাবিবুর রহমান হাবু, যাত্রাবাড়ীতে হাজী মনিরুল ইসলাম মনু ও হারুনুর রশিদ মুন্না, ডেমরায় রফিকুল ইসলাম খান মাসুদ ও মশিউর রহমান মোল্লা সজল, কদমতলীতে নাছিম মিঞা ও মোবারক হোসেন, কামরাঙ্গীরচরে আবুল হোসেন সরকার ও সোলায়মান মাতব্বর।

ঢাকা মহানগর উত্তরে থানাগুলোতে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পেলেন যারা : ভাটারায় ইসহাক মিয়া ও শহিদ উদ্দিন খন্দকার, রামপুরায় লিয়াকত আলী ও কামরুজ্জামান (বাদল), বাড্ডায় ওসমান গনি ও হাজী মো. জাহাঙ্গীর আলম, তেজগাঁওয়ে আবদুর রশিদ ও শামীম হাসান, শিল্পাঞ্চলে শফিউল্লাহ ও কাজী রেজাউল হক রেজা, আদাবরে এম এ মান্নান ও সালাউদ্দীন শামীম, শেরেবাংলা নগরে সাব্বির হোসেন মাসুদ ও আনোয়ার হোসেন মিন্টু, মোহাম্মদপুরে অধ্যক্ষ এম এ সাত্তার ও মতিউর রহমান মিয়া চান, মিরপুরে এস এম হানিফ ও অ্যাডভোকেট কাজী আজাদুল কবির, শাহ আলী থানায় আগা খান মিন্টু ও আবুল কাশেম মোল্লা, দারুস সালাম থানায় এ বি এম মাজহারুল আনাম ও কাজী ফরিদুল হক হ্যাপী, কাফরুলে জামাল মোস্তফা ও ইঞ্জি. আবুল কাশেম, পল্লবীতে ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লা এমপি ও এ এস এম সারোয়ার আলম, রূপনগরে হাজী রজ্জব হোসেন ও সালাউদ্দীন রবিন, ক্যান্টনমেন্টে কাজী রফিকুল ইসলাম ও হাজী মো. সামসুল হক, ভাসানটেকে গিয়াস উদ্দিন (ইঞ্জি.) ও আজমত আলী দেওয়ান, বনানীতে এ কে এম জসিম উদ্দিন ও মীর মোশাররফ হোসেন, গুলশানে হাজী মো. সুলতান হোসেন ও হেদায়েত উল্লাহ, উত্তরায় কুতুব উদ্দিন আহমদ ও মতিউল হক, উত্তরা পশ্চিম থানায় অ্যাডভোকেট মনোয়ার ইসলাম রবিন ও সাঈদ সিদ্দিকী কাক্কা, বিমানবন্দরে শাজাহান আলী মণ্ডল ও মাকসুদুর রহমান মাসুম, তুরাগে আবুল হাসেম চেয়ারম্যান ও এম ডি হালিম, খিলক্ষেতে আলহাজ মো. কেরামত আলী দেওয়ান ও আসলাম উদ্দিন, দক্ষিণ খানে অ্যাডভোকেট আবু হানিফ ও এ কে এম মাসুদুজ্জামান মিঠু, উত্তরখানে কামাল উদ্দিন ও জয়নাল আবেদীন, রমনা (উত্তর)-এ মোখলেসুর রহমান ও রফিকুল ইসলাম।

সর্বশেষ খবর