মঙ্গলবার, ১২ এপ্রিল, ২০১৬ ০০:০০ টা
বাঁশখালীতে কয়লাবিদ্যুৎ প্রকল্প

উন্নয়নের পক্ষে চট্টগ্রামবাসী

সাইদুল ইসলাম ও রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুেকন্দ্রসহ যে কোনো উন্নয়নের পক্ষে আছে চট্টগ্রামবাসী। গতকাল বিভিন্ন স্থানে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে উপস্থিত জনতা এ দাবি করেন। এ ছাড়া চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে উপস্থিত হয়ে উন্নয়নের পক্ষে অবস্থান নেওয়ার ঘোষণা দেন চট্টগ্রামের সাবেক মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী। পরে মাবনবন্ধনটি রূপ নেয় মহাসমাবেশে।

গতকাল বেলা ৩টায় জামাল খানস্থ চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে ‘সর্বস্তরের চট্টগ্রামবাসী’র ব্যানারে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। কর্মসূচিতে চট্টগ্রাম নগরী ছাড়াও দক্ষিণ চট্টগ্রামের পটিয়া, আনোয়ারা, বাঁশখালীসহ বিভিন্ন উপজেলার রাজনৈতিক, সামাজিক ও পেশাজীবী  সংগঠনের বিভিন্ন প্লাকার্ড ও ব্যানার নিয়ে এই কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের পক্ষে অংশ নেয় স্থানীয়রা। বিদ্যুেকন্দ্র প্রকল্পটি বাস্তবায়নের পক্ষে সংহতি প্রকাশ করেন এসব সংগঠনের নেতারা। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘আমি জানি আপনাদের মনে অনেক ক্ষোভ। কারণ বাঁশখালীতে নির্মাণাধীন একটি বিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজের বিরোধিতার কারণে চারজন প্রাণ হারিয়েছে। সরকার চায় বিদ্যুৎ সংকট নিরসন করতে। আর এ জন্য বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ নিতে হয়। আমরা মনে করেছিলাম বাঁশখালীতে বিদ্যুেকন্দ্র প্রকল্পটি হলে সংকট নিরসন হবে। কিন্তু কিছু মানুষকে ভুল বুঝিয়ে প্রকল্পের বিরুদ্ধে দাঁড় করানো হয়েছে।’ তিনি বলেন, না বুঝে, না শুনে কোনো উন্নয়ন প্রকল্পের বিরোধিতা করা উচিত নয়। দেশের বিদ্যুৎ সংকট নিরসনের জন্যই এস আলম গ্রুপ এ উদ্যোগ নিয়েছিল। উপস্থিত জনতার উদ্দেশে সাবেক মেয়র বলেন, ‘আপনারা প্রকল্প এলাকার আশপাশের লোকজনকে বুঝিয়ে সংঘর্ষে যে ক্ষতি হয়েছে আপসের মাধ্যমে এর সুরাহা করবেন।’ গণ্ডামারা ইউনিয়নের বাসিন্দা তুহিন বলেন, ‘আমি গণ্ডামারা এলাকার সন্তান। আমি এখানে আসতে চাইনি।

কিন্তু আমি যেহেতু বিদ্যুেকন্দ্র চাই তাই এখানে সংহতি প্রকাশ করছি।’ তিনি বলেন, প্রকল্পের কাজ শুরুর আগে ভিডিও প্রজেক্টরের মাধ্যমে একাধিকবার বিদ্যুেকন্দ্র-সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো উপস্থাপন করা হয়েছে। ওই সময় স্থানীয়রা স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ করেছিলেন। বাঁশখালীর মতো এলাকায় বড় প্রকল্প হাতে নেওয়ায় এস আলম গ্রুপকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দা মো. আসিফ। তিনি বলেন, ‘এস আলম গ্রুপ যে প্রকল্প হাতে নিয়েছে সেটি জনবান্ধব। এতে বাঁশখালীবাসীসহ আমরাই উপকৃত হব।’ কিছু লোক এ প্রকল্পের বিরোধিতা করছে দাবি করে তিনি তাদের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনারা অন্ধকারে আছেন। সঠিক পথে আসুন।’ এ সময় কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের পক্ষে বক্তব্য রাখেন মুক্তিযোদ্ধা বশির উদ্দিন, ব্যাংকার মুসলেহ উদ্দিন মনছুর, সেলিম খান, জাহাঙ্গীর আলম, হাসমত আলী প্রমুখ। সমাবেশে নিহত মর্তুজা আলীর বড় ভাই বশির উল্লাহসহ অনেকেই উপস্থিত ছিলেন। বক্তারা বলেন, ‘এলাকার উন্নয়ন চাই আমরা। কর্মসংস্থানসহ নানাবিধ উন্নয়নে বিদ্যুৎ প্রকল্পটি দ্রুত বাস্তবায়নের দাবিতে আজ স্থানীয় বাসিন্দারাসহ চট্টগ্রামের কয়েক হাজার নারী-পুরুষের বিশাল মানববন্ধনটি পরিণত হয়েছে সমাবেশে।’ মানববন্ধন শেষে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব চত্বর থেকে মিছিল সহকারে লালদীঘির ময়দানে গিয়ে এ কর্মসূচি সমাপ্ত হয়।

গণ্ডামারায় জামায়াতের প্রতিনিধিদল : কয়লাভিত্তিক বিদ্যুেকন্দ্র স্থাপনকে কেন্দ্র করে নিহতদের পরিবারের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করতে রবিবার বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর একটি প্রতিনিধিদল বাঁশখালী উপজেলার গণ্ডামারা সফর করেছে। এতে পরিবেশ রক্ষা কমিটির ব্যানারে আয়োজিত সমাবেশে যোগ দেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। সেখানে বক্তারা বলেন, ‘আমরা দেশে যে কোনো ধরনের উন্নয়নের পক্ষে। একইভাবে বাঁশখালীর গণ্ডামারায় প্রস্তাবিত কয়লাভিত্তিক বিদ্যুেকন্দ্র স্থাপনেরও বিপক্ষে নই।’ তারা বলেন, ‘আমরা পরিবেশবান্ধব ও ক্ষতিমুক্ত উন্নয়ন প্রকল্প চাই। স্বার্থহানিকর কোনো কিছু না হওয়ার বিষয়ে এলাকাবাসীকে আশ্বস্ত করতে হবে।’ প্রতিনিধিদলে ছিলেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য মাওলানা আ ন ম শামসুল ইসলাম, কর্মপরিষদ সদস্য মাওলানা মুমিনুল হক চৌধুরী, দক্ষিণ জেলা জামায়াতের আমির জাফর সাদেক, বাঁশখালী উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ মাওলানা জহিরুল ইসলাম, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ মাওলানা বদরুল হক, গণ্ডামারা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাওলানা মুহাম্মদ আরিফুল্লাহ, জামায়াত নেতা ইঞ্জিনিয়ার শহীদুল মোস্তফা প্রমুখ। প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, ১৩২০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উত্পাদনে এস আলম গ্রুপ বাঁশখালীর পশ্চিম গণ্ডামারা ও অলোকদিয়া এলাকায় মোট ৮৫৫ একর ব্যক্তিমালিকানাধীন ভূমি ক্রয় করে। প্রকল্প স্থানে আগে থেকে থাকা উপকূলীয় এলাকার ৩৭টি পরিবারের ১৫০ জনকে (প্রতি ঘরের পুরুষ সন্তান হিসাবে) প্রয়োজনীয় অর্থ ও বিকল্প ভূমি দিয়ে পুনর্বাসন করা হয়েছে। ইতিমধ্যে প্রকল্পের জন্য ক্রয়কৃত ভূমি ভরাটসহ নানা কাজ শুরু হয়েছে। এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম মাসুদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘প্রকল্প বাস্তবায়নে আমরা সব নিয়ম অনুসরণ ও স্থানীয়দের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিয়েছি। ওই প্রকল্প নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একটি নির্দেশনা দিয়েছেন। নির্দেশনায় আছে, এ বিদ্যুৎ প্রকল্পের আয়ের একটি অংশ প্রকল্প এলাকার স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার উন্নয়নসহ স্থানীয় জনগণের জীবনমান উন্নয়নে ব্যয় করা হবে। এলাকায় জনসাধারণ সুলভ মূল্যে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সংযোগ পাবে।’ প্রকল্প সমন্বয়ক নাছির উদ্দিন বলেন, ‘প্রকল্পের জন্য অনেক জায়গা বাজারমূল্যের চেয়ে তিনগুণ বেশি টাকা দিয়ে ক্রয় করা হয়েছে। স্থানীয়দের ঘর তৈরি করে পুনর্বাসনও করা হয়েছে। এখানে তৈরি করা হবে মসজিদ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ নানা স্থাপনা। এ ছাড়া ইতিমধ্যে ৩৮০ জন ভূমিমালিকসহ স্থানীয়দের সঙ্গে আমাদের বৈঠক হয়েছে। ন্যায্য পাওনা দেওয়ায় তাদের কোনো অভিযোগও নেই। এর পরও সুবিধাভোগী একটি চক্র স্থানীয়দের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে।’

সর্বশেষ খবর