মঙ্গলবার, ১২ এপ্রিল, ২০১৬ ০০:০০ টা

পাট শ্রমিকদের জন্য হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ

নিজস্ব প্রতিবেদক

আন্দোলনরত পাটকল শ্রমিক-কর্মচারীদের বকেয়া পরিশোধ ও পাট কেনার জন্য সরকার এক হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। একই সঙ্গে পয়লা বৈশাখের আগে বকেয়া মজুরির একটি অংশ মন্ত্রণালয়ের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় পরিশোধ করা হবে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে গতকাল মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অর্থ মন্ত্রণালয়কে এ নির্দেশ দেন। মন্ত্রিসভা বৈঠক শেষে বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম সচিবালয়ের নিজ দফতরে তাত্ক্ষণিক এক  সংবাদ ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান। একই সঙ্গে প্রতিমন্ত্রী আন্দোলনরত শ্রমিকদের কাজে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানান। এ সময় বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী মুহা. ইমাজ ? উদ্দিন প্রামাণিক এবং সচিব এম কাদের সরকার উপস্থি?ত ছিলেন। মির্জা আজম বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে পয়লা বৈশাখের আগেই শ্রমিকদের বকেয়া মজুরির একটা অংশ দেওয়া হবে। বাকি টাকা অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে ছাড় পাওয়ার পর গ্র্যাচুইটি ও প্রভিডেন্ট ফান্ড (ভবিষ্য তহবিল) বাবদ পরিশোধ করা হবে। প্রতিমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, মন্ত্রিসভা বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, পয়লা বৈশাখে বোনাস পেয়ে সারা দেশের মানুষ আনন্দ-উৎসব করবে, আর আমার পাট শ্রমিকরা তাদের ন্যায্য পাওনা না পেয়ে থালা-বাসন নিয়ে বসে থাকবে-এটা মানতে পারছি না। প্রতিমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী সব বকেয়া পরিশোধ ছাড়াও পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে স্থাপিত পাটকলগুলো সংস্কার ও আধুনিকায়ন করতে বলেছেন। প্রতিমন্ত্রী বলেন, ইতিমধ্যে পাটকলগুলোর উৎ?পাদন ক্ষমতা ৪০ শতাংশে নেমে এসেছে। একদিকে সরকারি পাটকলে শ্রমিক বেশি, মজুরিও বেশি। এ ছাড়া দুর্নীতির বেশ কিছু অভিযোগ ছিল, যেগুলোর উৎ?সমুখ বন্ধ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। মির্জা আজম বলেন, আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে পাটকলগুলো লাভ করতে না পারলেও আয়-ব্যয় সমান হবে। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সরকারি ২৭টি পাটকলে মোট ৭০ হাজার শ্রমিক আছেন। এর মধ্যে স্থায়ী শ্রমিক ৩২ হাজার। বাকিরা বদলি শ্রমিক। এর আগে মন্ত্রিসভা বৈঠকে অনির্ধারিত আলোচনায় পাটকল শ্রমিকদের অবরোধের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শ্রমিকদের অবরোধের বিষয়টি তুলে ধরে অর্থমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। এ সময় বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম এ বিষয়ে বিস্তারিত বর্ণনা দেন এবং ৮০০ কোটি টাকা বরাদ্দের দাবি জানান। তখন মন্ত্রিসভার সিনিয়র সদস্যরা মির্জা আজমের বক্তব্যকে সমর্থন করেন। অবশ্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে প্রস্তাবিত বাজেটের আগে এত টাকা সংগ্রহ করা কঠিন বলে মত প্রকাশ করে কিছুটা আপত্তি জানানো হয়। তবে প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অর্থমন্ত্রীকে নির্দেশ দেন। বৈঠক সূত্র আরও জানায়, পাটকল শ্রমিক ও কর্মচারীদের গ্র্যাচুইটি বাবদ ৩০০ কোটি টাকা, প্রভিডেন্ট ফান্ডের (ভবিষ্য তহবিল) জন্য ৩০০ কোটি এবং পাট কেনার জন্য ২০০ কোটি দরকার বলে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় হিসাব দেয়। এ ছাড়া শ্রমিকদের সপ্তাহের মজুরি বাবদ মোটা অঙ্কের টাকা বকেয়া পড়েছে। সব মিলিয়ে পাটকল শ্রমিকদের জন্য এক হাজার কোটি টাকা বরাদ্দেরও নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। প্রসঙ্গত, গত কয়েক দিন ধরে পাঁচ দফা দাবিতে শ্রমিকদের টানা আন্দোলনের মুখে অচল হয়ে পড়েছে খুলনাঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলো। খুলনাঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত সাত পাটকলে টানা ছয় দিনের শ্রমিক ধর্মঘটের কারণে প্রায় এক হাজার মেট্রিক টন উত্পাদন ঘাটতি হয়েছে, যার বাজার মূল্য প্রায় আট কোটি টাকা।

সর্বশেষ খবর