মঙ্গলবার, ১২ এপ্রিল, ২০১৬ ০০:০০ টা

দমননীতি উগ্রবাদকে সুবিধা দেবে

—ক্রাইসিস গ্রুপ

প্রতিদিন ডেস্ক

আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের ‘বলপ্রয়োগ ও বিচারহীনতার সংস্কৃতির’ কারণে সহিংস রাজনৈতিক দল ও উগ্রপন্থী সংগঠনগুলোই সুবিধা পাচ্ছে বলে মনে করে ব্রাসেলসভিত্তিক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ।

‘বাংলাদেশে  রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব উগ্রপন্থা ও ফৌজদারি বিচার’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে সংস্থাটি বলেছে, এ দেশের আইনশৃঙ্খলা সংকটের মূলে রয়েছে ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে বিরোধী মতের দীর্ঘদিনের বৈরিতা। ‘রাজনৈতিক মেরুকরণের শিকার ও অকার্যকর ফৌজদারি বিচারব্যবস্থায়’ আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার বিষয়টি গুরুত্বও পাচ্ছে না। খবর বিডিনিউজের। গতকাল এ প্রতিবেদন আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করার কথা ক্রাইসিস গ্রুপের। পূর্বাহ্নে প্রাপ্ত প্রতিবেদনের একটি অনুলিপিসূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

ক্রাইসিস গ্রুপ বলছে, দমননীতির কারণে একদিকে সরকারের কর্মকাণ্ডের ‘বৈধতা প্রশ্নবিদ্ধ’ হচ্ছে, অন্যদিকে এর মধ্য দিয়ে অন্য পক্ষকে সহিংস জবাব দিতে ‘উসকানি’ দেওয়া হচ্ছে, যা কার্যত উগ্রপন্থিদেরই সুবিধা করে দিচ্ছে। ‘সরকারকে বুঝতে হবে যে, নিজেদের স্বার্থেই তাদের এ পথ থেকে সরে আসতে হবে। তা না হলে সহিংস উগ্রবাদ ও বিরোধী রাজনৈতিক হুমকি মোকাবিলায় হয়তো তাদের ব্যর্থ হতে হবে।’ এর অংশ হিসেবে ক্রাইসিস গ্রুপ ফৌজদারি বিচারব্যবস্থাকে ‘সব দিক দিয়ে শক্তিশালী’ করার সুপারিশ করেছে, যাতে আইনশৃঙ্খলার চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করা যায়, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার ‘ধস ঠেকানো’ সম্ভব হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে পুলিশকে ‘বিরোধী মত দমনে’ ব্যবহার করা হচ্ছে, নেতা-কর্মীদের করা হচ্ছে বিচারের মুখোমুখি। অধিকারকর্মীরা রয়েছেন উগ্রপন্থিদের হুমকির মুখে। আর শিথিল আইনি ব্যবস্থাপনার সুযোগে উগ্রপন্থি সংগঠনগুলো নতুন করে সংগঠিত হওয়ার সুযোগ পাচ্ছে। ‘এর ফল দেখা গেছে ২০১৫ সালে ব্লগার ও বিদেশি হত্যা এবং ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার মধ্য দিয়ে।’ ক্রাইসিস গ্রুপ বলছে, সরকার এসব উগ্রপন্থির কাউকে কাউকে গ্রেফতার করে বিচারের মুখোমুখি করলেও তাতে ‘স্বচ্ছ ও সঠিক আইনি প্রক্রিয়া’ অনুসরণ করা হয়নি। এতে এক ধরনের বিচ্ছিন্নতা তৈরি হয়েছে, যা থেকে উগ্রপন্থিরাই ফের সুবিধা পাচ্ছে।

‘বিরোধী মতের সংগঠনগুলোর সঙ্গে ঝামেলা মিটিয়ে ফেলে রাষ্ট্রকে স্থিতিশীল করতে হলে রাজনৈতিক সমঝোতার পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মাধ্যমে দমন-পীড়ন ও বিচারব্যবস্থার অপব্যবহার বন্ধ করতে হবে।’ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নির্বাচনের বর্ষপূর্তি ঘিরে বিএনপি ও তাদের শরিক জামায়াতে ইসলামী সহিংস আন্দোলনের পথ বেছে নিলেও বিএনপির ‘মূলধারার রাজনীতিতে ফিরে আসার সিদ্ধান্ত’ সরকারের সামনে সংলাপের ‘একটি সুযোগ’ এনে দিয়েছে। সে সুযোগ কাজে লাগিয়ে সরকার নিজের ‘আন্তরিকতা’ প্রমাণ করলে, বিরোধী মত ও সমালোচকদের ‘দমন-পীড়ন’ বন্ধ করলে, ‘হারানো ভাবমূর্তি’ পুনরুদ্ধার এবং বিচারব্যবস্থা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর জনগণের ‘আস্থা ফিরে পাওয়া’ সহজ হবে বলে মন্তব্য করা হয়েছে ক্রাইসিস গ্রুপের প্রতিবেদনে।

বিশ্বে সংঘাত বন্ধে কাজ করা ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, ১৯৯৫ সালে প্রতিষ্ঠিত অলাভজনক এ বেসরকারি সংস্থা চারটি মহাদেশের ৬০টি দেশ ও ভূখণ্ড নিয়ে কাজ করছে। নির্বাচনের বর্ষপূর্তি ঘিরে টানা হরতাল-অবরোধের মধ্যে গত বছর মার্চে এক বুলেটিনে সংস্থাটি বলেছিল, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার করা হলে বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংকট ‘গুরুতর’ আকার ধারণ করতে পারে। আর বিএনপিকে জামায়াতের সঙ্গ ছেড়ে সহিংসতার পথ পরিহার করার পরামর্শ দিয়েছিল সংস্থাটি।

সর্বশেষ খবর