শনিবার, ১৪ মে, ২০১৬ ০০:০০ টা
কাউন্সিল আজ

ঘুরে দাঁড়াতে চায় জাপা

শফিকুল ইসলাম সোহাগ

জাতীয় সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির অষ্টম জাতীয় সম্মেলন আজ। এ সম্মেলনে শীর্ষ নেতৃত্বে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হচ্ছে না। কারণ কাউন্সিলের আগেই জাপার প্রধান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ দলের মহাসচিব, সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান, কো-চেয়ারম্যান নিয়োগ দিয়েছেন।

সংশ্লিষ্টরা গতকাল জানান, এবারের সম্মেলনকে দলটির শীর্ষ নেতা থেকে শুরু করে মাঠ পর্যায়ের কর্মীরা দেখছেন শক্তি প্রদর্শনের সম্মেলন হিসেবে। এ জন্য ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। সারা দেশ থেকে অন্তত ৫০ হাজার নেতা-কর্মী সম্মেলনে যোগ দেবেন বলে দলের নেতারা প্রত্যাশা করছেন। এদিকে গত সোমবার এইচ এম এরশাদ ‘শান্তির জন্য পরিবর্তন এবং পরিবর্তনের জন্য জাতীয় পার্টি’ স্লোগান সংবলিত সম্মেলনের লোগো উন্মোচন করেছেন। এ সময় পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান রওশন এরশাদ, কো-চেয়ারম্যান জি এম কাদের, মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদারসহ শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন। জাতীয় পার্টির মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আজ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠেয় সম্মেলনের সব প্রস্তুতি আগেই সম্পন্ন হয়েছে। কাউন্সিলে কাউন্সিলর, আমন্ত্রিত অতিথি, ডেলিগেটসহ প্রায় ৫০ হাজার অতিথি উপস্থিত থাকবেন। তিনি বলেন, সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত সাধারণ সম্মেলন, দুপুর ২টা থেকে মিলনায়তনে কাউন্সিলরদের নিয়ে মূল সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। এ সম্মেলনের মাধ্যমে জাতীয় পার্টি নতুনভাবে যাত্রা শুরু করবে। সম্মেলনের মধ্য দিয়ে জাতীয় পার্টি আবারও ঘুরে দাঁড়াবে এবং আগামী নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় যাওয়ার পথ তৈরি করবে। জানা গেছে, পার্টি চেয়ারম্যান এরশাদ ও সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান রওশন এরশাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব নিরসন হওয়ায় জাপার এমপিরা সর্বশক্তি দিয়ে সম্মেলনকে সফল করার জন্য কাজ করেছেন। প্রায় সব এমপি নিজ নিজ এলাকা থেকে ব্যাপক শো-ডাউন করে সম্মেলনে যোগ দিচ্ছেন। মাঠপর্যায়ের নেতা-কর্মীরাও ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে সম্মেলন সফল করার জন্য আগে থেকেই কাজ করছিলেন। জাপার সাবেক মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আজকের সম্মেলনের দিকে জাতীয় পার্টির লাখ লাখ নেতা-কর্মী তাকিয়ে আছে। এ সম্মেলনের মধ্য দিয়ে আমরা পার্টির চেয়ারম্যানের কাছ থেকে আগামী দিনের নির্দেশনা ও রূপরেখা পাব। নতুন বার্তা নিয়ে আগামী দিনে রাজপথে শক্ত অবস্থান নিয়ে এইচ এম এরশাদের নেতৃত্বে রাষ্ট্রক্ষমতায় অবতীর্ণ হব। পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন খান বলেন, আজকের সম্মেলনের মধ্য দিয়ে প্রমাণ হবে জাতীয় পার্টি দেশের অন্যতম বৃহত্তম রাজনৈতিক দল। সম্মেলনের মধ্য দিয়েই দেশবাসী দেখবে আগামীতে এইচ এম এরশাদের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টি রাষ্ট্রক্ষমতায় যাওয়ার জন্য প্রস্তুত। জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা বলেন, সম্মেলনে আমাদের শক্তি প্রদর্শন হবে। সম্মেলনের মধ্য দিয়ে আমরা প্রমাণ করব জাতীয় পার্টিই আগামী দিনের বাংলাদেশের রাজনীতির প্রধান শক্তি। এর মধ্য দিয়ে দেশে উদার গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লড়াই জোরদার হবে। জোরদার হবে মানব মুক্তির সংগ্রাম। সংশ্লিষ্টরা জানান, সম্মেলনে ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপি, বিরোধী দল কংগ্রেসসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী দলের নেতাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য এস এম ফয়সল চিশতী জানান, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অন্তত দশজন নেতা সম্মেলনে যোগ দেবেন। পার্টি চেয়ারম্যানের রাজনৈতিক সচিব সুনীল শুভ রায় জানান, ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপির শীর্ষ একজন নেতাও সম্মেলনে যোগ দিচ্ছেন। আরেক প্রেসিডিয়াম সদস্য মীর আবদুস সবুর আসুদ বলেন, বাংলাদেশে অবস্থানরত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, হাইকমিশনার ও বিভিন্ন দাতা সংস্থার প্রতিনিধিরা অংশ নেবেন জাতীয় পার্টির কাউন্সিলে। আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, বিএনপি, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ, বিকল্পধারা, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগসহ বিভিন্ন ইসলামী দলের নেতাদেরও। প্রেসিডিয়াম সদস্য তাজ রহমান বলেন, পার্টিতে এখন আর কোনো দ্বন্দ্ব-বিরোধ নেই। এইচ এম এরশাদের নেতৃত্বে সবাই ঐক্যবদ্ধ। সম্মেলনকে সফল করার জন্য প্রতিটি নেতা-কর্মী মাঠে কাজ করেছেন।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণের প্রস্তুতি : সম্মেলনে শুধু লোকসমাগম নয়, তোরণ নির্মাণ, পোস্টার, বিলবোর্ড, ব্যানার-ফেস্টুন লাগিয়ে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। দক্ষিণের সভাপতি সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা ও সাধারণ সম্পাদক জহিরুল আলম রুবেল থানা ও ওয়ার্ড নেতাদের নিয়ে দফায় দফায় সভা করছেন। দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক সুজন দে জানান, দক্ষিণ থেকে অন্তত ১৫ হাজার নেতা-কর্মী সম্মেলনে অংশ নেবেন। এ ছাড়া তিন ধরনের পোস্টার প্রকাশিত হয়েছে ঢাকা মহানগর দক্ষিণের পক্ষ থেকে। তিন শতাধিক ব্যানার-ফেস্টুন তৈরি করা হয়েছে।

এরশাদের মঞ্চ পরিদর্শন : গতকাল বিকালে রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে সম্মেলনের মঞ্চ পরিদর্শন করেন এইচ এম এরশাদ। সম্মেলনের জন্য তিনটি মঞ্চ নির্মিত হয়েছে। এরশাদ মঞ্চ দেখে সন্তোষ প্রকাশ করেন এবং দায়িত্বরত নেতা-কর্মীদের ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। এ সময় পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান রওশন এরশাদ, কো-চেয়ারম্যান জি এম কাদের, মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার, প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, সাইদুর রহমান টেপা, এস এম ফয়সল চিশতী, সুনীল শুভ রায়, মীর আবদুস সবুর আসুদ, হাজী সাইফুদ্দিন মিলন, রেজাউল ইসলাম ভূইয়া, ইসহাক ভূইয়াসহ শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

উত্তরের প্রস্তুতি : একইভাবে সম্মেলন সফল করতে ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি এস এম ফয়সল চিশতী ও সাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দিন বাবুল বিভিন্নস্থানে বিলবোর্ড, তোরণ স্থাপনসহ ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছেন।

কৃষক পার্টির যৌথসভা : সম্মেলন সফল করার জন্য গতকাল কাকরাইলে জাপা কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে কৃষক পার্টির যৌথসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জাপা প্রেসিডিয়াম সদস্য সাইদুর রহমান টেপা বলেন, দেশের জনগণ আজ পদে পদে শোষিত হচ্ছে। বর্তমানে যে গণতান্ত্রিক সরকার ক্ষমতায় আছে তা নামেই গণতান্ত্রিক। দেশের মানুষ এ গণতন্ত্র দেখার জন্য দেশ স্বাধীন করেননি। সভায় লিয়াকত চাকলাদার সভাপতিত্ব করেন।

মাতুয়াইলে কর্মিসভা : সম্মেলন সফল করার জন্য গতকাল ঢাকা-৫ আসনের মাতুয়াইলের কাজলায় কর্মিসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে জাপা প্রেসিডিয়াম সদস্য মীর আবদুস সবুর আসুদ বলেন, সম্মেলন সফল করার জন্য ডেমরা, মাতুয়াইল, সারুলিয়ার প্রত্যেকটি ইউনিয়নসহ ওয়ার্ড সম্মেলন করেছি। কর্মিসভায় আরও বক্তব্য দেন আকতার দেওয়ান, মামুন মোল্লা, তকদির হোসেন মন্টু, মো. খসরু।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর