শিরোনাম
শনিবার, ১৩ আগস্ট, ২০১৬ ০০:০০ টা

আরেক মাস্টারমাইন্ড মারজান

তামিম-জিয়া ঢাকায় : পুলিশ

নিজস্ব প্রতিবেদক

আরেক মাস্টারমাইন্ড মারজান

গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় জঙ্গি হামলার আরেক মাস্টারমাইন্ডের খবর পেয়েছেন গোয়েন্দারা। ‘মারজান’ নামে এই হোতা গুলশান হামলায় অংশ নেওয়া পাঁচ জঙ্গির অপারেশন কমান্ডার ছিলেন। রেস্তোরাঁয় হত্যাযজ্ঞের ছবি মারজানের কাছে পাঠানো হয়েছিল; যা জঙ্গি  কার্যক্রম পর্যবেক্ষণকারী ওয়েব পেজ সাইট ইন্টেলিজেন্টে প্রকাশ হয় হামলার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই। কল্যাণপুর আস্তানাসংশ্লিষ্ট কয়েকজন জঙ্গিকে জিজ্ঞাসাবাদ করে এমন তথ্য পেয়েছে পুলিশ। এদিকে বাংলাদেশে সাম্প্রতিককালে সব হামলার মাস্টারমাইন্ড তামিম চৌধুরী ও মেজর (অব.) জিয়া ঢাকায় আছেন বলে গোয়েন্দারা নিশ্চিত হয়েছেন। এই মারজানের খোঁজখবর কারও কাছে থাকলে তা পুলিশের কাছে সরবরাহ করতে আহ্বান জানিয়েছেন ডিএমপির কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার মো. মনিরুল ইসলাম। গতকাল দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে তিনি এ আহ্বান জানিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, হলি আর্টিজানে হামলার মূল মাস্টারমাইন্ড হিসেবে তামিম চৌধুরী ও সৈয়দ জিয়াউল হকের সঙ্গে এই মারজান রয়েছেন। তিনি বলেন, হলি আর্টিজান বেকারিতে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের অপারেশনাল কমান্ডার ছিলেন মারজান। তিনি আর্টিজানের বাইরে থেকে হত্যাকাণ্ডে অংশগ্রহণকারী জঙ্গিদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দেন। তাকে গ্রেফতার করা গেলে এ হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যাবে। অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেন, ১ জুলাই পাঁচ জঙ্গি হেঁটে গিয়ে গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় আক্রমণ চালায়। বিদেশিসহ একাধিক মানুষকে হত্যার ঘটনাস্থলের ছবি জঙ্গিরা মোবাইলে পাঠাতে থাকে। এ ছবি সরাসরি চলে আসে রেস্তোরাঁর বাইরে থাকা একাধিক ব্যক্তির কাছে। এদের একজনের নাম ‘মারজান’। মনিরুল জানান, জঙ্গিরা ছবিগুলো মারজানের কাছে একটি ইমেইলে পাঠিয়েছে। মারজান জেএমবির প্রচার শাখার নেতৃত্বে আছেন। হামলাসংক্রান্ত সব ছবি মারজানের আইডি থেকেই বাইরে পাঠানো হয়। মারজানকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। হামলাকারী পাঁচজন হেঁটে হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় ঢোকে। যাওয়ার সময় আরেক পরিকল্পনাকারী জঙ্গিদের অনুপ্রেরণা জোগাচ্ছিলেন। পরে তিনি ঘটনাস্থল থেকে সরে যান। তবে হলি আর্টিজানে হামলা ও হত্যার সব ছবি মারজানের আইডি থেকেই বাইরে পাঠানো হয়। জঙ্গি হামলার ঘটনা তদন্তে মারজানের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। ডিএমপি নিউজ পোর্টালেও হাস্যোজ্জ্বল অবস্থায় থাকা মারজানের ছবি প্রকাশ করা হয়েছে। পরনে হালকা নীল টি-শার্ট। মারজানের মাথায় ঘন চুল, মুখে খোঁচা খোঁচা দাড়ি ও গোঁফ রয়েছে। নিউজ পোর্টালে মারজান সম্পর্কে বলা হয়, “গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলাকালে সন্ত্রাসীরা এই ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ করে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তার সাংগঠনিক নাম ‘মারজান’। তিনি অত্র ঘটনার সন্দেহভাজন। তার পরিচয় সম্পর্কে জানা থাকলে ‘হ্যালো সিটি’ অ্যাপসের মাধ্যমে অবহিত করুন।” তামিম ও জিয়াউল ঢাকায় : ২ আগস্ট পুলিশের আইজি এ কে এম শহীদুল হক ২০ লাখ করে ৪০ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণার পর গুলশান, শোলাকিয়াসহ দেশের সাম্প্রতিক জঙ্গি হামলার মাস্টারমাইন্ড হিসেবে কানাডাপ্রবাসী তামিম চৌধুরী ও সেনাবাহিনী থেকে বহিষ্কৃত সৈয়দ জিয়াউল হকের নাম জানান। পুলিশ তখন জানায়, জিয়া দেশে থাকলেও তামিম দেশের বাইরে পালিয়ে গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। গতকাল অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেন, গুলশান, কল্যাণপুর ও শোলাকিয়া হামলার ‘মাস্টারমাইন্ড’ তামিম চৌধুরী ও ব্লগার হত্যায় জড়িত বলে সন্দেহে থাকা চাকরিচ্যুত সেনা কর্মকর্তা সৈয়দ জিয়াউল হক ঢাকাতেই আছেন বলে তাদের ধারণা। এক প্রশ্নের জবাবে মনিরুল বলেন, আমাদের ধারণা, তারা ঢাকাতেই আছেন। আমরাও চেষ্টা করছি এবং অন্য সবার কাছে সহযোগিতা চেয়েছি। ধরিয়ে দিতে পারলে ২০ লাখ টাকা করে পুরস্কারের ঘোষণাও হয়েছে। এদের মধ্যে সেনাবাহিনী থেকে বরখাস্ত সৈয়দ মো. জিয়াউল হক ২০১২ সালে সেনাবাহিনীতে ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থান চেষ্টার পরিকল্পনাকারী। পরে জঙ্গি দল আনসার আল ইসলামের হয়ে কাজ করছেন। আর কানাডীয় পাসপোর্টধারী বাংলাদেশি নাগরিক তামিম চৌধুরীকে ‘আইএসের বাংলাদেশ শাখার সমন্বয়ক’ বলা হয়েছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের খবরে। ২ আগস্ট আইজিপি শহীদুল হক বলেন, ‘তদন্ত করতে গিয়ে আমরা যা পেয়েছি, এখানে মাস্টারমাইন্ড তামিম চৌধুরী। জেএমবির নেতৃত্ব তিনি দিচ্ছেন। এই তামিম চৌধুরীর পর যারা দ্বিতীয় ও তৃতীয় প্রধান তাদেরও আমরা চিহ্নিত করেছি। তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা করছি। আরেকটা গ্রুপ আছে আনসারুল্লাহ বাংলা টিম। সেখানে তদন্তে আমাদের ধারণা হয়েছে, তাদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন চাকরিচ্যুত মেজর জিয়া।’

সর্বশেষ খবর