শনিবার, ১৩ আগস্ট, ২০১৬ ০০:০০ টা

যা বলেছি দায়িত্ব নিয়েই বলেছি

—আ জ ম নাছির

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের উন্নয়ন বরাদ্দের ক্ষেত্রে দুর্নীতির যে অভিযোগ তুলে আলোড়ন তুলেছেন তাতে অনড় রয়েছেন মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন। তিনি বলেন, প্রয়োজনে তিনি বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীকেও জানাবেন। অভিযোগের যে ব্যাখ্যা মন্ত্রণালয় ৭ দিনের মধ্যে দিতে বলেছে সে অনুযায়ী জবাব দেওয়া হবে। এদিকে গতকাল নগরীর মুসলিম ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠান শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি কি রাস্তার লোক! যা বলেছি দায়িত্ব নিয়েই বলেছি’। নগরীতে বলাবলি হচ্ছে, সরকার ও চট্টগ্রামের স্বার্থে মন্ত্রী- এমপিদেরও দাঁড়ানো উচিত উচ্চকণ্ঠ মেয়রের পাশে। এ ব্যাপারে নাগরিক সমাজেরও ঐক্যবদ্ধ সমর্থন প্রয়োজন। যেহেতু চট্টগ্রামের উন্নয়নের দায়িত্ব প্রধানমন্ত্রী নিজের হাতে নিয়েছেন বলে ইতিমধ্যে ঘোষণা দিয়েছেন সেহেতু ঘুষের অভিযোগের সুরাহা করতে প্রধানমন্ত্রীরই হস্তক্ষেপ প্রয়োজন বলে মনে করেন অনেকেই। মেয়র নাছির বরাবরই সাহস করে সত্যটা বলেন। বাধা ডিঙিয়েই তিনি এতটা পথ হেঁটেছেন। চ্যালেঞ্জ নিতেই ভালোবাসেন। এবারও নিজের তোলা অভিযোগের ব্যাপারে অনড় অবস্থান রেখে মেয়র নাছির বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ডাকে দুর্নীতিবিরোধী সংগ্রাম ও সরকারকে সহযোগিতা করতে তিনি তার অবস্থান থেকে নড়বেন না। ঢাকা শহরকে দুই ভাগে ভাগ করে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণের জন্য দেওয়া বরাদ্দের তুলনায় ঘূর্ণিঝড় ‘রোয়ানু’ ও চলতি বর্ষায় ক্ষত-বিক্ষত চট্টগ্রামের সড়কগুলো মেরামত করতে দেওয়া থোক বরাদ্দকে যথার্থ নয় দাবি করে মেয়র আরও বলেন, ঘুষ বা দয়া-দাক্ষিণ্য দিয়ে নয়, চট্টগ্রামের উন্নয়নের জন্য পর্যাপ্ত বরাদ্দ পাওয়া আমাদের অধিকার। মেয়র বলেন, আমি রাজনীতি করি। জনমানুষের কাছে আমার ও আমার দলের জবাবদিহিতা আছে। জনগণের স্বার্থে গণতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় আমি কি কথাও বলতে পারব না? মন্ত্রণালয় প্রদত্ত চিঠিতে মেয়রের বক্তব্যে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে— তোলা অভিযোগ নাকচ করে নাছির বলেন, ঢালাওভাবে আমলাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেননি তিনি। বরং তার উত্থাপিত সুনির্দিষ্ট অভিযুক্ত ব্যক্তিরাই সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করছেন। এদের বিরুদ্ধে তদন্তসাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হলে সরকারের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে। এদিকে উন্নয়নে বরাদ্দের বিপরীতে ঘুষ চাওয়ার চাঞ্চল্যকর এই অভিযোগের ব্যাপারে ফুঁসে উঠছে জনমত। প্রশ্ন উঠেছে, তবে কি সিভিল ব্যুরোক্রেটসের হাতে এখনো জনপ্রতিনিধিরা বন্দী? সচেতনদের মাঝে এও প্রশ্ন, তবে কি উেকাচ না দেওয়ায় উন্নয়নে প্রতিবন্ধকতার মতো আমলাতন্ত্রই সবার অলক্ষ্যে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে চাটগাঁর মেয়রের মর্যাদার পথে? যেখানে ঢাকার দুই অর্ধশহরের মেয়রের পূর্ণ মন্ত্রীর মর্যাদা এবং নারায়ণগঞ্জ জেলা শহরের মেয়রের প্রতিমন্ত্রীর স্বীকৃতি মিলেছে সেখানে অত্যধিক অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক গুরুত্বপূর্ণ শহর চট্টগ্রামের মেয়রকে এখনো ন্যায্য স্বীকৃতি না দেওয়ার পেছনেও আলোচ্য অসাধু আমলাচক্রের কোনো যোগসূত্র আছে কিনা তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী বলেন, বৈষম্য আর দুর্নীতির ব্যাপারে আমলাতন্ত্রের প্রতি মানুষের যে বিরূপ ধারণা সে পাকিস্তান আমল থেকে ছিল, তা কাটিয়ে আমলারা জঙ্গিবাদবিরোধী গণতন্ত্রের যাত্রায় যে অসীম ভূমিকা রাখছেন তা কালিমাযুক্ত করছেন আলোচ্য অভিযুক্ত কয়জন আমলা। মেয়র তার দফতরের যে সূত্রের ভিত্তিতে ঘুষের অভিযোগটি তুলেছেন, সে সূত্র ধরে তদন্ত করলেই ‘শর্ষের ভিতরে থাকা ভূত’, যারা সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করছে তাদের মুখোশ উন্মোচন হবে বলে মনে করেন এই উপাচার্য। তিনি মেয়রের পদক্ষেপকে যথার্থ বলেও মন্তব্য করেন। ইউএসটিসির উপাচার্য প্রফেসর প্রভাত চন্দ্র বড়ুয়া বলেন, চট্টলামেয়র সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও প্রধানমন্ত্রীর হাতকে শক্তিশালী করতেই দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। উল্লেখ্য, নগরীর থিয়েটার ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে বুধবার ‘চট্টগ্রাম নগর সংলাপ’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন বলেন, মন্ত্রণালয় থেকে অর্থ ছাড়ের জন্য একটা নির্দিষ্ট অর্থ (বরাদ্দের ৫ শতাংশ) দিতে হয়। তিনি বলেন, মন্ত্রণালয়ের আচরণ হাত-পা বেঁধে সাঁতার কাটতে বলার মতো। মেয়র জানান, ‘বাড়ৈইপাড়া থেকে শাহ আমানত ব্রিজ পর্যন্ত খাল খনন মাস্টারপ্ল্যানে আছে। সে অনুযায়ী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তা অনুমোদন দিয়েছেন। প্রশাসনের অনুমোদন দিতে কয়েক মাস পার হয়ে যায়। এরপর কোয়ারির পর কোয়ারি আসছে। মেয়র প্রশ্ন রেখে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পরও কেন কোয়ারির পর কোয়ারি হবে? প্রকল্পটির মেয়াদ আগামী ২০১৭ সালের জুনে শেষ হবে। বরাদ্দের অভাবে প্রকল্প শেষ না হলে আমাকে যারা পছন্দ করেন না তারা বলবে আমি ব্যর্থ।

 কিন্তু আমার যা যা করণীয় ছিল সবই তো করেছি।

সর্বশেষ খবর