শনিবার, ১৩ আগস্ট, ২০১৬ ০০:০০ টা

ফিরলেন তুরস্কের রাষ্ট্রদূত, পালালেন তিন কূটনীতিক

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

তুরস্কে ব্যর্থ অভ্যুত্থানের সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগের মুখে থাকা ঢাকার তুরস্ক দূতাবাসের তিন কূটনীতিক পালিয়ে গেছেন। তুরস্ক তাদের ডিপ্লোমেটিক পাসপোর্ট বাতিল করে দেশে ফেরত পাঠানোর আদেশ দিলে তারা পালিয়ে যান। এদিকে নিজামীর ফাঁসি কার্যকরের বিরোধিতাকারী ঢাকাস্থ তুরস্কের রাষ্ট্রদূত দেউরিম ওজতুর্ক স্বদেশে চলে গেলেও আবার তিনি ঢাকায় ফিরে এসেছেন।

জানা গেছে, ঢাকা থেকে পালিয়ে যাওয়াদের মধ্যে তুরস্ক দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স আহমেদ গুরবুজ ও তৃতীয় সচিব সেমিলেনুর গুরবুজ সপরিবারে চলে গেছেন যুক্তরাষ্ট্রে। অ্যাটাশে পদে দায়িত্ব পালন করা অপর তুর্কি কর্মকর্তা রাশিয়ায় পালিয়েছেন বলে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে খবর প্রকাশ হয়েছে। এসব তথ্য নিশ্চিত করে তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী  মেভলুত কাভুসোগলুক জানিয়েছেন, ‘মোট ২০৮ কূটনীতিককে দেশে ডেকে পাঠানো হলেও ৩২ জন ফেরেননি এবং কোনো যোগাযোগও করেননি’। এদিকে গতকাল দুপুরে ঢাকা ফিরে এসেছেন বাংলাদেশে তুরস্কের রাষ্ট্রদূত দেউরিম ওজতুর্ক। যুদ্ধাপরাধী নিজামীর ফাঁসি কার্যকরের পর তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে রাষ্ট্রদূত ওজতুর্ককে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগান প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন। ঢাকার কূটনৈতিক সূত্রের খবর অনুযায়ী, তুরস্কে গত ১৫ জুলাইয়ের ব্যর্থ অভ্যুত্থানের সঙ্গে সম্পৃক্ততার তদন্তের জন্য জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহে ঢাকার দূতাবাসের চার্জ দ্য আফেয়ার্স, তৃতীয় সচিব ও অ্যাটাশেকে তাদের সদর দফতরে ডেকে পাঠানো হয়। ঢাকার পররাষ্ট্র দফতরকে এ বিষয়ে কোনো তথ্য না জানানো হলেও ২৮ জুলাই তুরস্ক পররাষ্ট্র দফতর থেকে এক চিঠিতে অপর কূটনীতিক মাহমুত বুরাককে অন্তর্বর্তীকালীন সময়ের জন্য দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স নিয়োগ করা হয়েছে বলে জানানো হয়। সূত্র মতে, এর পরদিন সকালেই যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্যে সপরিবারে ঢাকা ত্যাগ করেন চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স আহমেদ গুরবুজ ও তৃতীয় সচিব সেমিলেনুর গুরবুজ। সন্ধ্যায় টোকিও চলে যান অপর অ্যাটাশে। পরে ১ আগস্ট ঢাকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে তুরস্ক জানায়, দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স আহমেদ গুরবুজ, তৃতীয় সচিব সেমিলেনুর গুরবুজ ও অ্যাটাশে পদের একজনসহ তিনজনের তুরস্কের কূটনৈতিক পাসপোর্ট বাতিল করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থাগুলোর তথ্যানুসারে, ইরান সফররত তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত কাভুসোগলুক গতকাল বলেছেন, ‘বাংলাদেশে অবস্থান করা তিনজনকে আমরা দেশে ফিরতে বলেছিলাম। কিন্তু তাদের দুজন নিউইয়র্কে চলে গেছেন বলে আমরা আগেই জেনেছি। এখন শুনছি অন্যজন জাপান হয়ে রাশিয়া চলে গেছেন। যাই হোক এই বিশ্বাসঘাতকদের আমরা যে কোনোভাবেই হোক ফিরিয়ে নিয়ে আসব।’

ঢাকায় ফিরলেন সেই রাষ্ট্রদূত : যুদ্ধাপরাধী নিজামীর ফাঁসি কার্যকরের পর গত ১১ মে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে ঢাকা থেকে তুরস্কের রাষ্ট্রদূতকে প্রত্যাহার করে নেওয়ার সিদ্ধান্তের কথা সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগান। পরদিন ১২ মে ঢাকা ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন রাষ্ট্রদূত দেউরিম ওজতুর্ক। অবশ্য লিখিতভাবে জরুরি প্রয়োজনে তুরস্ক যাওয়ার কথা বলে গিয়েছিলেন রাষ্ট্রদূত ওজতুর্ক। এর বিপরীতে তুরস্কে থাকা বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আল্লামা সিদ্দিকীকেও ঢাকা ডেকে পাঠানো হয়েছিল। এরপর টানা তিন মাস দুই রাষ্ট্রদূতের পরিবর্তে অন্যরা দায়িত্ব পালন করছিলেন কূটনৈতিক মিশনগুলোয়। তবে এখন সেই পরিস্থিতির অবসান হয়েছে। গতকাল দুপুরে ঢাকা এসেছেন রাষ্ট্রদূত দেউরিম ওজতুর্ক। আর গত বুধবার তুরস্ক গিয়ে দায়িত্ব পালন শুরু করেছেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আল্লামা সিদ্দিকী।

সর্বশেষ খবর