রবিবার, ২৮ আগস্ট, ২০১৬ ০০:০০ টা

এক ঘণ্টার অপারেশন

সাখাওয়াত কাওসার ও আলী আজম

ময়মনসিংহ থেকে গ্রেফতার হওয়া এক জঙ্গির তথ্যের ভিত্তিতেই রাজধানীর গুলশানে হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় হামলার মাস্টারমাইন্ড ও কল্যাণপুরে জঙ্গি আস্তানার সদস্যদের ব্যাপারে জানতে পারে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। একপর্যায়ে ডিএমপির কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ইউনিটের (সিটিটিসি) সদস্যরা নিশ্চিত হন নারায়ণগঞ্জের পাইকপাড়ায় ৪১০/১ শাহ সুজা রোডের দেওয়ানবাড়িতে অবস্থান করছেন বড় মাপের একাধিক জঙ্গি। শুরু হয় বিশেষ অভিযানের প্রস্তুতি। একই সঙ্গে চলে বিশেষ নজরদারি। টানা দুই দিন কড়া নজরদারির মধ্যে রাখা হয় দেওয়ানবাড়িসহ আশপাশ এলাকা। একপর্যায়ে সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে চালানো হয় অভিযান। এর আগে নাম দেওয়া হয় অপারেশন ‘হিট স্ট্রং ২৭’। কথাগুলো বলছিলেন সিটিটিসি ইউনিটের এক কর্মকর্তা।

জানা গেছে, জঙ্গিদের অবস্থান নিশ্চিত হওয়ার পর তাদের আত্মসমর্পণ করতে বলা হয়। তবে নারায়ণগঞ্জ শহরের পাইকপাড়ার দেওয়ানবাড়ির তিন তলায় অবস্থানরত জঙ্গিরা গোয়েন্দাদের ওই আহ্বানে সাড়া দেননি। এর আগেই অভিযানের জন্য ঘটনাস্থলে নিয়ে আসা হয় সোয়াত, বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট ও কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের সদস্যদের। চলে অভিযানের জন্য শেষ পর্যায়ের প্রস্তুতি। নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থার অংশ হিসেবে রাতেই সরিয়ে ফেলা হয় ভবনের অন্য ফ্লোরের বাসিন্দাদের। দেওয়ানবাড়ির পাশের বাড়িগুলো থেকেও বাসিন্দাদের নিরাপদ দূরত্বে চলে যেতে অনুরোধ করেন আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা। এর আগেই ভবনের উত্তর পাশের ফ্ল্যাটের বাইরে থেকে তালা লাগিয়ে দেওয়া হয়। ভবন থেকে নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান করে পুলিশের মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হকের নির্দেশে পুলিশ সদস্যরা জঙ্গিদের আত্মসমর্পণের আহ্বান জানান। তবে তাদের এসব আহ্বানে সাড়া দেননি তারা। উল্টো পুলিশকে লক্ষ্য করে গ্রেনেড ছুড়ে মারেন। দেওয়ানবাড়ির আশপাশে উঁচু ভবনগুলোর ছাদে স্নাইপার রাইফেল নিয়ে সশস্ত্র অবস্থান নেন সোয়াত সদস্যরা। সর্বশেষ গতকাল সকাল ৯টা ৩৫ মিনিটে শুরু হয় অপারেশন ‘হিট স্ট্রং ২৭’। গুলি-পাল্টা গুলি ও বিকট শব্দে গ্রেনেড বিস্ফোরণ। এ যেন রীতিমতো যুদ্ধাবস্থা। আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে আশপাশ এলাকায়। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে অভিযানের সমাপ্তি হয়। অভিযানে অংশ নেওয়া আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা উত্তর পাশের ফ্ল্যাটটিতে প্রবেশ করেন। দেখতে পান রক্তে ভেসে গেছে পুরো ফ্লোর। মেঝেতে পড়ে আছে তিনটি মৃতদেহ। একজনের বুকের ওপর পড়ে আছে একটি একে-২২ রাইফেল। ছবির সঙ্গে মিলিয়ে নিশ্চিত হন তামিম আহমেদ চৌধুরীর পরিচয়। বাকিদের পরিচয় গত রাত পর্যন্ত নিশ্চিত হওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন সিটি ইউনিটের প্রধান ডিআইজি মনিরুল ইসলাম। গোয়েন্দাদের ধারণা, তামিম চৌধুরীর সঙ্গে আরও দুটি লাশ কল্যাণপুর আস্তানা থেকে পলাতক মো. ইকবাল ও আরেক শীর্ষ জঙ্গি মানিকের। এদিকে অভিযানের আগেই তিন তলার ওই ফ্ল্যাটটিতে ধোঁয়া দেখা যায়। পরে অভিযানের পর পুলিশ উদ্ধার করে পুড়ে যাওয়া ল্যাপটপ ও বেশকিছু ইলেকট্রনিক ডিভাইস। এগুলোর সঙ্গে হয়তো জঙ্গিরা আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্রও পুড়িয়ে ফেলেছেন, বলছিলেন নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফারুক হোসেন। পরে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বাড়ির মালিক নূরুদ্দীন দেওয়ান, একাধিক ভাড়াটিয়াসহ ১০ জনকে আটক করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেন তিনি। বোম ডিসপোজাল ইউনিটের প্রধান সানোয়ার হোসেন জানান, পাইকপাড়ার ‘বড় কবরস্থান’-এর পাশের ওই বাড়ির তৃতীয় তলায় ভাড়া থাকতেন জঙ্গিরা। গতকাল সকালে অভিযানের শুরুতে সিটি ইউনিটের একটি দল তৃতীয় তলা অবরুদ্ধ করে রাখে। আরেকটি দল বাড়ির মালিকের সঙ্গে কথা বলে নিশ্চিত হয়, তিন তলায় কারা কারা অবস্থান করছেন। প্রসঙ্গত, পাইকপাড়া বড় কবরস্থান এলাকায় গতকাল সকাল সাড়ে ৮টার দিকে সন্দেহভাজন জঙ্গি আস্তানায় অভিযান চালান সিটিটিসি ইউনিটের সদস্যরা। অভিযানে গুলশান হামলার মাস্টারমাইন্ড তামিম চৌধুরীসহ তিন জঙ্গি নিহত হন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর