কাউন্সিলের মাধ্যমে দল গঠনের পর এবার আওয়ামী লীগে আলোচনা মন্ত্রিসভা রদবদল নিয়ে। প্রধানমন্ত্রী চলতি মাসে সরকারে কিছু পরিবর্তন আনতে পারেন। আগামী ২০১৮ সালের নির্বাচনকে সামনে রেখে এমনটাই শোনা যাচ্ছে সরকারের ভেতরে। তবে এখন পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট কোনো তারিখের কথা না জানা গেলেও পরিবর্তনের বিষয়টি গুরুত্ব পাচ্ছে। মন্ত্রীদের গত তিন বছরের আমলনামা এখন প্রধানমন্ত্রীর টেবিলে। দক্ষতা যোগ্যতা ও সংগঠনকে শক্তিশালী রাখার ক্ষেত্রে ভূমিকা মূল্যায়ন হবে রদবদলে। অনেকে বাদ পড়ার পাশাপাশি নতুন করে যুক্ত হতে পারেন কেউ কেউ। বাদ পড়ার তালিকাও রয়েছে আলাদা করে। তিন বছরে যারা কোনো সাফল্য দেখাতে পারেননি তাদেরকে মন্ত্রিসভা থেকে সরিয়ে দেওয়া হতে পারে। পাশপাশি মন্ত্রিসভার বর্তমান সদস্যদের মধ্যে যারা বয়সের ভারে ন্যুব্জ, তাদেরও অবসরে পাঠানো হতে পারে। মন্ত্রিসভায় নতুন কারা আসছেন তা নিয়ে ব্যাপক কৌতূহল ও আগ্রহ লক্ষ্য করা যাচ্ছে ক্ষমতাসীন দলের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে। গত ২৮ অক্টোবর গণভবনে আওয়ামী লীগের নতুন কমিটির সভাপতিমণ্ডলীর প্রথম বৈঠক শেষে দলীয় সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেছিলেন, মন্ত্রিসভা পুনর্গঠন হতে পারে। এটি প্রধানমন্ত্রীর এখতিয়ার। তবে কী রকম পরিবর্তন হতে পারে সে বিষয়টি তিনি স্পষ্ট করেননি। দলীয় সূত্র জানায়, সরকারের কার্যক্রমে গতিশীলতা আনতে মন্ত্রিসভায় নতুন কেউ কেউ যুক্ত হতে পারেন। আবার গত তিন বছরের কার্যক্রমের দক্ষতা ও যোগ্যতা বিবেচনায় নিয়ে দু-একজন প্রতিমন্ত্রী পদোন্নতি পেয়ে পূর্ণমন্ত্রীর মর্যাদা পেতে পারেন। এ ছাড়া দু-একটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দফতর পুনর্বিন্যাস হতে পারে বলেও অসমর্থিত সূত্রে জানা গেছে। সরকারের দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, মন্ত্রিসভার আসন্ন রদবদলে সম্মেলনের মাধ্যমে দলে গুরুত্বপূর্ণ পদ পেয়েছেন, এমন সাবেক দু-একজন মন্ত্রীর ভাগ্য খুলতে পারে। আবার নতুন মুখ হিসেবে তৃণমূলের দু-একজন নেতা যুক্ত হতে পারেন। টেকনোক্র্যাট কোটায় মন্ত্রী কিংবা প্রতিমন্ত্রী হিসেবে কাউকে দেখা যেতে পারে বলেও আভাস পাওয়া গেছে। সরকারের নির্ভরযোগ্য সূত্রের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সম্ভাব্য মন্ত্রী হিসেবে যাদের বিবেচনা করা হচ্ছে, তাদের ব্যাপারে সরকারের একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা খোঁজখবর নিচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মন্ত্রিসভা সম্প্রসারণে পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির নেতাদের প্রাধান্য দিচ্ছেন। চরম অদক্ষতা, স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত মন্ত্রীরা থাকছেন বাদের তালিকায়। ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের বিষয়টি মাথায় রেখেই দক্ষ, যোগ্য ও অভিজ্ঞ নেতাদের সমন্বয়ে মন্ত্রিসভা সাজাতে চান তিনি। ২০১৪ সালে ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের পর সরকার গঠনের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নবীন ও প্রবীণের মধ্যে সমন্বয়ের চেষ্টা করেন। তখন জেলা পর্যায়ের অনেক প্রবীণ নেতাকে তিনি মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত করেন। এসব নেতার অনেকেই বঙ্গবন্ধুর সময় থেকেই সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে আসছিলেন। ২০১৪ সালের ১২ জানুয়ারি নতুন মন্ত্রিসভা গঠনের পর এ পর্যন্ত দুই দফায় সামান্য সম্প্রসারণ করা হয়। একই বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি এ এইচ মাহমুদ আলী পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং নজরুল ইসলাম পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। এরপর ওই বছরের ৭ জুলাই নূরুল ইসলাম বিএসসি মন্ত্রী এবং তারানা হালিম এবং নূরুজ্জামান আহমেদ প্রতিমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন মন্ত্রিসভায় বর্তমানে ৩২ জন মন্ত্রী, ১৭ জন প্রতিমন্ত্রী এবং দুজন উপমন্ত্রী রয়েছেন। এ ছাড়া মন্ত্রীর পদমর্যাদায় প্রধানমন্ত্রীর পাঁচজন উপদেষ্টা কাজ করছেন।