৮ নভেম্বরের নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক দলের হিলারি ক্লিনটনকে হারিয়ে রিপাবলিকান দলের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প বিজয়ী হওয়ার পর আস্তে-ধীরে গোটা আমেরিকায় গণবিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। স্থানীয়দের অনেকেই বলছেন, খোদ আমেরিকার মতো দেশে আগে কখনো এত বিক্ষোভ দেখা যায়নি, যা এখন হচ্ছে। দিনকে দিন এ বিক্ষোভের তীব্রতা বেড়েই চলেছে। স্থানীয় সময় শুক্রবার মধ্যরাতের পর ওরেগন অঙ্গরাজ্যে ট্রাম্পবিরোধী বিক্ষোভের সময় গুলিতে এক বিক্ষোভকারী আহত হন। নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশিত হওয়ার পর থেকেই রাস্তায় নামা শুরু করেন ট্রাম্পের প্রতি ক্ষুব্ধ জনসাধারণ। মূলত স্থানীয় সময় অনুযায়ী বুধবার থেকে বিক্ষোভ জঙ্গি রূপ নিতে থাকে। বিক্ষোভকারীরা ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ থেকে শুরু করে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। বহু বিক্ষোভকারী গ্রেফতারও হন। এর পরও বিক্ষোভ থামেনি, বরং বেড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয়ী ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে টানা শুক্রবার তৃতীয় দিনের মতো বিক্ষোভ চলে। এসব ঘটনায় ওরেগন অঙ্গরাজ্যে এক বিক্ষোভকারী গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। শনিবার এক বিবৃতিতে পুলিশ জানায়, শুক্রবার স্থানীয় সময় মধ্যরাতের পর ওরেগনের সবচেয়ে বড় শহর পোর্টল্যান্ডে একদল বিক্ষোভকারী মরিসন ব্রিজ অতিক্রম করার সময় অজ্ঞাতনামা এক ব্যক্তির গুলিতে এক বিক্ষোভকারী আহত হন। বিবৃতিতে বলা হয়, ‘বিক্ষোভকারীরা সেতুটি অতিক্রম করার সময় সেখানে আটকে পড়া গাড়িগুলোর কোনো একটি থেকে এক ব্যক্তি নেমে গুলি চালায়।’ আহত বিক্ষোভকারীকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। তার অবস্থা গুরুতর নয় বলে জানিয়েছে পুলিশ। সন্দেহভাজন বন্দুকধারীর খোঁজ চলছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়, শুক্রবার সন্ধ্যা থেকেই ট্রাম্পবিরোধী বিক্ষোভকারীরা সড়ক অবরোধ করতে শুরু করে। বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষের পর আগের রাতেই পোর্টল্যান্ডে দাঙ্গা পরিস্থিতি ঘোষণা করেছিল পুলিশ। এদিন রাতেও বিক্ষোভকারীরা দাঙ্গাপুলিশকে লক্ষ্য করে বিভিন্ন বস্তু ছুড়ে মারে। জবাবে পেপার স্প্রে ও সাউন্ড গ্রেনেড ব্যবহার করে পুলিশ। পরে পুলিশ বিক্ষোভকারীদের পিছু হটতে বাধ্য করে। এদিন এক বিক্ষোভকারীকে আটক করা হয়েছে। শুক্রবার রাতে লস অ্যাঞ্জেলেসেও শত শত বিক্ষোভকারী সড়ক অবরোধ করে। তারা ‘আমরা নির্বাচিত প্রেসিডেন্টকে প্রত্যাখ্যান করছি’ এবং ‘কাদের সড়ক? আমাদের সড়ক’ বলে স্লোগান দেয়। মিয়ামিতে কয়েক হাজার বিক্ষোভকারী শহরজুড়ে মিছিল করে। পরে তাদের মধ্য থেকে কয়েকশ’ বিক্ষোভকারী মহাসড়কে গিয়ে উভয় দিকের যান চলাচল বন্ধ করে দেয়। বিবিসি, সিএনএন, দ্য গার্ডিয়ান, নিউইয়র্ক টাইমসের খবর, স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার রাতেও নজিরবিহীন বিক্ষোভ হয় বিভিন্ন শহরে। ক্যালিফোর্নিয়ায় আগের দিনের মতো এদিনও হাজার হাজার বিক্ষোভকারী পুলিশি বেষ্টনীর মধ্যে সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন। বার্তা সংস্থা এএফপি জানায়, বাল্টিমোরে প্রায় ৩০০ মানুষ বিক্ষোভ করেছেন। তারা ‘আপনি আমাদের প্রেসিডেন্ট না!’ বলে স্লোগান দেন। তাদের হাতে ছিল বিভিন্ন প্লাকার্ড। একটিতে লেখা ছিল, ‘আমরা ঘৃণ্য ব্যক্তিকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করিনি।’ শিকাগো, ডেনভার, ডালাসসহ অন্যান্য স্থানেও বিক্ষোভ হয়েছে। বৃহস্পতিবার দিনের বেলায়ও সান ফ্রানসিসকো, লস অ্যাঞ্জেলেস ও অন্যান্য নগরীতে বিক্ষোভ হয়। বিক্ষোভকারীদের বেশির ভাগ ছিলেন শিক্ষার্থী। তারা স্কুল-কলেজ বাদ দিয়ে বিক্ষোভে অংশ নেন। সান ফ্রানসিসকোতে প্রায় এক হাজার শিক্ষার্থী মিছিল নিয়ে সিটি হলের দিকে যান। তাদের বেশির ভাগই হাইস্কুলের শিক্ষার্থী। তারা ‘আপনি আমাদের প্রেসিডেন্ট না!’ বলে স্লোগান দিচ্ছিলেন। তাদের হাতে প্লাকার্ডও ছিল। কয়েকটিতে লেখা ছিল, ‘ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ট্রান্স’ এবং ‘সবার জন্য নিরাপদ আমেরিকা গড়ে তোলো’। এ সময় তারা রাস্তাও অবরোধ করেন। বিবিসির খবরে বলা হয়, বৃহস্পতিবার রাতে কয়েক হাজার বিক্ষোভকারী নগরীর কেন্দ্রস্থলে জড়ো হয়। তারা দোকান ও গাড়ি ভাঙচুর করে, পটকা ছুড়ে মারে এবং আবর্জনার স্তূপে আগুন ধরিয়ে দেয়।
পুলিশ ওই পরিস্থিতিকে দাঙ্গা ঘোষণা করে এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পেপার স্প্রে এবং কয়েক রাউন্ড রাবার বুলেট ব্যবহার করে। গ্রেফতার করা হয় অন্তত ২৯ জনকে। বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারীদের হাতে ব্যাট ও পাথর ছিল। তারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে লক্ষ্য করে সেগুলো ছুড়ছিল বলে পুলিশ জানিয়েছে। বাল্টিমোর পুলিশ জানায়, প্রায় ৬০০ জনের একটি দল নগরীতে মিছিল ও সড়ক অবরোধ করে। সান ফ্রানসিককোতে উচ্চমাধ্যমিকের শিক্ষার্থীরা রংধনু রঙের ব্যানার নিয়ে মিছিল করে। তাদের অনেকের হাতে মেক্সিকোর পতাকাও ছিল। সংবাদ সূত্রগুলো বলছে, যদিও সমর্থকদের একতা আর ফলাফল মেনে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন ডেমোক্রেটিক দলের পরাজিত প্রার্থী হিলারি ক্লিনটন ও প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, এর পরও অনেক শহরের বাসিন্দাই তাদের ক্ষুব্ধ মনোভাব প্রদর্শন করে চলেছেন। কয়েক হাজার মানুষ নিউইয়র্কে ট্রাম্প টাওয়ারের সামনে রাতেও অবস্থান নিয়ে অভিবাসন, সমকামী অধিকার বিষয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পের নীতির বিরুদ্ধে স্লোগান দেন। এ ছাড়া পোর্টল্যান্ড, ওরেগনের মতো কয়েকটি শহরে বিক্ষোভকারীরা আমেরিকার পতাকা পোড়ান। তারা একটি আন্তরাজ্য মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন। পশ্চিম উপকূলের আরও কয়েকটি শহর এবং শিকাগোতে বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে। বিক্ষোভে অংশ নেওয়াদের বেশির ভাগই শিক্ষার্থী আর তরুণ। নিউইয়র্ক, শিকাগো, বোস্টন, ফিলাডেলফিয়া, সান ফ্রানসিসকো, লস অ্যাঞ্জেলেস, ওকল্যান্ড, সিয়াটল, পোর্টল্যান্ড, ওয়াশিংটন ডিসি, সেন্ট পল, মিনেসোটা, রিচমন্ড, ভার্জিনিয়া, কানসাস সিটি, ওমাহা, নেব্রাসাকা, টেক্সাস, অস্টিন, বার্কলি, পিটার্সবার্গ, ওরেগন, আটলান্টা ও ডেনভারেও বিক্ষোভ-সমাবেশ অব্যাহত থাকার খবর পাওয়া গেছে। হোয়াইট হাউসের কাছে দেখা গেছে বিক্ষোভকারীদের জড়ো হতে। বিক্ষোভকারীরা বলেন, ‘ট্রাম্পের মতো লোকের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার ঘটনায় আমরা বিস্মিত, ব্যথিত, ভীত। এটি আমরা মানতে পারছি না।’ এ সময় অনেক প্রতিবাদী বলতে থাকেন, ‘দেহ আমার, পছন্দ আমার। আমরা ট্রাম্পকে মানি না।’ আগের দিন প্রতিবাদ সমাবেশে কোথাও কোথাও সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। সিয়াটলে বিক্ষোভে বন্দুকধারীর গুলিতে অন্তত পাঁচজন আহত হয়েছেন। আবার বেশ কয়েকটি শহরে পুলিশ অনেক বিক্ষোভকারীকে আটক করেছে। নিউইয়র্ক সিটির ট্রাম্প টাওয়ারের সামনে থেকে অন্তত চারজন বিক্ষোভকারীকে আটক করে পুলিশ।