ঢাকায় সমাবেশ আয়োজনে দলের ব্যর্থতার পর এবার সংবাদ সম্মেলন করবেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সংবাদ সম্মেলন ডেকে পরবর্তী নতুন জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও তার আগে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন গঠনের দাবি জানাবেন তিনি। আগামী ২০ নভেম্বরের মধ্যে গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন করার কথা সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর। দলের একাধিক নীতি-নির্ধারক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। সংশ্লিষ্ট এক নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, ২০ নভেম্বরের মধ্যে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে দলের পক্ষ থেকে এ সংক্রান্ত একটি ‘নির্বাচনী রূপরেখা’ ঘোষণা করবেন খালেদা জিয়া। চেয়ারপারসনের গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠেয় এই সংবাদ সম্মেলনে তিনি একটি নিরপেক্ষ ব্যবস্থার অধীনে অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে একাদশ জাতীয় নির্বাচনের প্রক্রিয়াসহ সেই লক্ষ্যে গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন কমিশন গঠনের প্রস্তাব দেবেন। এতে পরবর্তী জাতীয় নির্বাচন, নির্বাচন কমিশন গঠন এবং এ বিষয়ক আইন ও বিধিমালা (আরপিও) সংক্রান্ত একটি রূপরেখা ঘোষণা করবেন। বলবেন জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার কথা। জানা গেছে, জাতীয় নির্বাচনের প্রক্রিয়া, গ্রহণযোগ্য নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন এবং এ সংক্রান্ত বিধিমালা সংবলিত একটি রূপরেখা তৈরির কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান, নজরুল ইসলাম খান ও আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীসহ দলের বেশ কয়েকজন নীতি-নির্ধারক জড়িত রয়েছেন। গত বৃহস্পতিবার রাতেও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া এ নিয়ে তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন তার গুলশানের কার্যালয়ে। সংশ্লিষ্ট একজন নীতি-নির্ধারক এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, তারা আশা করেছিলেন, ‘জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ উপলক্ষে ঢাকায় আহূত দলীয় সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় বেগম খালেদা জিয়া নির্বাচন সংক্রান্ত এসব প্রস্তাব দেবেন। কিন্তু সরকার ঢাকায় সমাবেশ করতে না দেওয়ায়, বিশেষ করে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে বিএনপিকে ডিএমপি ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন কর্তৃক অনুমতি না দেওয়ায় দলীয় নেতারা এই সমাবেশের আশা প্রায় ছেড়েই দিয়েছেন। ৭, ৮ ও ৯ নভেম্বর সমাবেশ করতে না পেরে আজ ১৩ নভেম্বরও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করার অনুমতি চেয়েছিল বিএনপি।
এ লক্ষে গত বৃহস্পতিবার বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারের কার্যালয়ে গিয়ে কমিশনারের দেখা পায়নি। এমনকি ডিএমপি কমিশনারের অধীনস্ত অন্য কোনো কর্মকর্তাও তাদের সঙ্গে কথা বলতে অপরাগতা প্রকাশ করেন। এ সম্পর্কে দলের সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রিজভী আহমেদ গতকাল বিএনপিকে সমাবেশের অনুমতি দানে পুলিশ গড়িমসি করছে বলে অভিযোগ করেন। তিনি পুলিশের উদ্দেশে বলেন, আপনারা আওয়ামী লীগের নন। জনগণের সেবক হিসেবে আইনানুগ আচরণ করুন। গতকাল পর্যন্ত বিএনপিকে পুলিশ সমাবেশের কোনো অনুমতি দেয়নি বলে জানান রিজভী। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান জানান, নিরপেক্ষ ব্যবস্থায় অবাধ ও সুষ্ঠু একটি জাতীয় নির্বাচনের লক্ষ্যে শিগগিরই বিএনপি সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা দেবে। এতে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন গঠন ও তার প্রক্রিয়া সম্পর্কেও দলের পক্ষ থেকে একটি ‘রূপরেখা’ থাকবে। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া সপ্তাহ খানেকের মধ্যেই তা সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এই প্রস্তাব দেবেন বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি। বিএনপির এই ‘নির্বাচনী রূপরেখা’ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, শুনেছি এরকম একটি রূপরেখা তৈরি হচ্ছে এবং ‘ম্যাডাম’ তা প্রস্তাব আকারে ঘোষণা করবেন। তবে কখন কীভাবে কী করবেন সে সম্পর্কে আমি কিছুই জানি না। তবে দলের স্থায়ী কমিটির অপর দুই সদস্য নজরুল ইসলাম খান ও আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী এর সত্যতা নিশ্চিত করে বলেছেন, শিগগিরই বিএনপি গ্রহণযোগ্য একটি ইসি গঠনের সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দেবে সরকারকে। কী প্রক্রিয়ায় এই ইসি গঠন সম্ভব, সে ব্যাপারে এবং নির্বাচনবিষয়ক আইন ও বিধিমালা সংশোধনী সংক্রান্ত একটি প্রস্তাবনা বা রূপরেখাও দেওয়া হবে দলের পক্ষ থেকে।