দেশের সংবিধান ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সেনাবাহিনী তথা সশস্ত্র বাহিনীর প্রতিটি সদস্যকে ঐক্যবদ্ধ থেকে অভ্যন্তরীণ কিংবা বাহ্যিক হুমকি মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, সেনাবাহিনী দেশের সম্পদ।
মানুষের ভরসা ও বিশ্বাসের প্রতীক। তাই পেশাগতভাবে সেনাবাহিনীর প্রতিটি সদস্যকে দক্ষ, সামাজিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধে উদ্বুদ্ধ হয়ে সৎ ও মঙ্গলময় জীবনের অধিকারী হতে হবে। গতকাল দুপুরে সিলেটের জালালাবাদ সেনানিবাসে ১৭ পদাতিক ডিভিশন সদর দফতরে ১১ পদাতিক ব্রিগেডসহ নয়টি ইউনিটের পতাকা উত্তোলন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। সেনাবাহিনীর সদস্যদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস স্থাপন করে কর্তব্যপরায়ণ এবং শৃঙ্খলা বজায় রেখে ঐক্যবদ্ধ থাকারও নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। গতকাল বেলা ১১টায় বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থায় হযরত শাহজালাল (রহ.)-এর মাজারের উদ্দেশে রওনা দেন। তিনি ওই মাজারে ফাতিহা পাঠ ও নামাজ আদায় করেন। এরপর হযরত শাহপরান (রহ.)-এর মাজারে যান প্রধানমন্ত্রী। মাজার জিয়ারত করে পৌনে ১টার দিকে জালালাবাদ সেনানিবাসে ১৭ পদাতিক ডিভিশনের অনুষ্ঠানে যোগ দেন। এ অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হক, ১৭ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি ও সিলেটের এরিয়া কমান্ডার মেজর জেনারেল আনোয়ারুল মোমেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, সেনাবাহিনীর জন্য প্রয়োজনীয় জনবল, আধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন যুদ্ধ সরঞ্জাম দেওয়া হচ্ছে। বরিশাল ও পটুয়াখালী জেলার মধ্যবর্তী পায়রা নদীসংলগ্ন লেবুখালী সেনানিবাসে একটি পদাতিক ডিভিশন গঠনের নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। কক্সবাজারের রামুতে আরেকটি পদাতিক ডিভিশন গড়ে তোলা হয়েছে। সারা বাংলাদেশে এভাবে পদাতিক ডিভিশন গড়ে তুলে স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষার পাশাপাশি সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে আমাদের সশস্ত্র বাহিনী, বিশেষ করে সেনাবাহিনীকে শক্তিশালী করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ১৭ পদাতিক ডিভিশনের ১১ পদাতিক ব্রিগেডসহ নয়টি ইউনিটের পতাকা উত্তোলন করা হলো। আজ সেনাবাহিনীর জন্য আনন্দের দিন, পরিপূর্ণতা অর্জনের দিন। আমি বিশ্বাস করি, সেনাবাহিনীর প্রতিটি সদস্য দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে সব বাধাবিপত্তি অতিক্রম করে এ ডিভিশনকে আরও শক্তিশালী করে গড়ে তুলবেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, শুধু দেশের অভ্যন্তরে নয়, বাংলাদেশের বাইরেও শান্তিরক্ষা মিশনে আমাদের সেনাবাহিনী অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। সেখানে কর্মরত সৈনিকদের জন্য সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধে সেনাবাহিনীর অবদানের কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, মুক্তিপাগল আপামর জনসাধারণের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে অকুতোভয়, তেজোদ্দীপ্ত ও দেশপ্রেমী সেনাবাহিনী চরম আত্মত্যাগের মাধ্যমে প্রাণপ্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশকে স্বাধীন করেছিল। প্রধানমন্ত্রী ফোর্সেস গোল-২০৩০-এর আওতায় তিন বাহিনীর পুনর্গঠন ও আধুনিকায়নের কার্যক্রমগুলো পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে বলে জানান। তিনি বলেন, ফোর্সেস গোলের আওতায় ইতিমধ্যেই সেনাবাহিনীর সাঁঁজোয়া কোরের অত্যাধুনিক ট্যাংক, গোলন্দাজ বাহিনীর কামান, আকাশ প্রতিরক্ষার অংশ হিসেবে মিসাইল সিস্টেম, পদাতিক বাহিনীর ট্যাংকবিধ্বংসী মিসাইল এবং আর্মি এভিয়েশনের জন্য যুদ্ধবিমান ও হেলিকপ্টার সেনাবাহিনীতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। সৈনিকদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনাদের সৎ, কষ্টসাধ্য, ঝুঁকিপূর্ণ জীবনের ব্যাপারে আমরা অবগত রয়েছি। এজন্য আপনাদের কল্যাণের বিষয়গুলো আমাদের বিবেচনায় রয়েছে। সেনাবাহিনীর সব সদস্যের বেতন ও রেশন বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিভিন্ন সুবিধা বাড়ানো হয়েছে। এর বাইরে সারা দেশে প্রাক-প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক পর্যন্ত সেনাবাহিনীর সদস্যের সন্তানদের পড়াশোনার দায়িত্ব নিয়েছে সরকার। উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত বৃত্তি পাওয়ার ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে, যাতে আপনাদের সন্তান-সন্ততি উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সম্পদের সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও সীমিত সম্পদ কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশকে উন্নত-সমৃদ্ধিশালী দেশ হিসেবে গড়ে তোলার পদক্ষেপ নিয়েছি। আজ বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে সম্মান পাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর সিলেট সফর কেন্দ্র করে কয়েক দিন ধরে রংবেরঙের ব্যানার, ফেস্টুন, বিলবোর্ড দিয়ে নগরী সাজানো হয়েছিল। সিলেট আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে একটি সমাবেশে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য দেওয়ার কথা ছিল। স্থানীয় আওয়ামী লীগ এজন্য প্রস্তুতিও নিয়েছিল। কিন্তু নির্বাচন কমিশন জেলা পরিষদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করায় সে কর্মসূচি বাতিল করা হয়।