এক নারীর স্বামীর দাবিদার দুজন। শুধু তাই নয়, ওই নারীর গর্ভের এক সন্তানের পিতৃত্বের দাবি নিয়েও বর্তমানে আইনি লড়াই চলছে। বিষয়টি গড়িয়েছে আদালত পর্যন্ত। পিতৃত্বের দাবিদার একজন সন্তানের স্বীকৃতি চেয়ে আদালতে মামলা ঠুকেছেন (সিআর মামলা নম্বর-২৩৯)। ইতিমধ্যে এ বিষয়টি নরসিংদীর আদালতপাড়াসহ শিবপুর থানা এলাকায় রীতিমতো চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ১৬ অক্টোবর ওই নারীর বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট ইস্যু হয়েছে। ওই নারীর নাম হাসনারা আক্তার হাসি। তাকে খুঁজছে রাজধানীর কদমতলী থানা পুলিশ। স্বামীর দাবিদার দুজন হলেন ফখরুদ্দিন ওরফে আকন্দ মামুন ও খোকন মিয়া। এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) মো. অহিদ মিয়া বর্তমানে ঢাকার আশুলিয়া থানায় কর্মরত। তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘এ ঘটনায় কোর্ট পিটিশন মামলার তদন্তভার পড়েছিল আমার ওপর। স্পর্শকাতর হওয়ায় বিষয়টি নিয়ে বিয়ের কাজীসহ শিবপুর এলাকার অনেকের জবানবন্দিও নিয়েছিলাম। ওই নারীর সঙ্গেও আমি এক দফা কথা বলেছি। তিনি তার আগের স্বামী ও সন্তানের বিষয়টি গোপন রেখেই খোকন মিয়াকে বিয়ে করেন। এখন আদালতই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানাবে।’ মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে, কুমিল্লা উত্তর জেলার তিতাস উপজেলার প্রথম দশানীপাড়ার মেলাইল্যাবাড়ির আবুল হোসেনের মেয়ে হাসনারা আক্তার হাসি বর্তমানে ঢাকার কদমতলী থানার মেরাজনগরে বসবাস করেন। ১০-১২ বছর আগে মনোহরদী উপজেলার চক তাতারদী গ্রামের মৃত জালাল উদ্দিনের ছেলে ফখরুদ্দিন ওরফে আকন্দ মামুনের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। মামুন মালয়েশিয়ায় থাকার সময় হাসি বহু যুবককে প্রেমের ফাঁদে ফেলে টাকা-পয়সা, স্বর্ণালঙ্কারসহ সর্বস্ব লুটে নিয়েছেন। হাসির সর্বশেষ শিকার শিবপুর উপজেলার মজলিশপুর গ্রামের মৃত সালাম সরকারের ছেলে খোকন সরকার। অনুসন্ধানে জানা গেছে, বর্তমানে কদমতলীর মেরাজনগরে হাসি তার মা-বাবা, ভাই ও দুই ছেলেমেয়ে নিয়ে বসবাস করেন। স্বামী মামুন দীর্ঘদিন মালয়েশিয়ায় থাকার পর এক বছর ধরে দেশেই আছেন। তবে হাসির এক বছর তিন মাসের ছেলে মাসুম মূছার পিতৃত্বের দাবি নিয়ে আদালতে মামলা করেন নরসিংদীর খোকন। ওই অভিযোগের তদন্ত প্রতিবেদন গত ৬ সেপ্টেম্বর নরসিংদীর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট চন্দনকান্তি নাথের আদালতে দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। ১৬ অক্টোবর আদালত হাসির বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট ইস্যু করে। তাকে গ্রেফতারে সহায়তা চেয়ে শিবপুর থানা থেকে তারবার্তায় কদমতলী থানায় ওয়ারেন্টের একটি কপি পাঠানো হয়েছিল। অভিযোগকারী খোকন মিয়া বাংলাদেশ প্রতিদিনের কাছে দাবি করেন, ‘ডেসটিনিতে কাজ করতে গিয়েই হাসির সঙ্গে আমার পরিচয়। সে নিজেকে অবিবাহিতা দাবি করেছিল। একপর্যায়ে আমরা প্রেমের সম্পর্কে জড়াই। ২০১৪ সালের ১৪ এপ্রিল পরিবারের অমতেই আমরা বিয়ে করি। তবে গর্ভে সাত মাসের সন্তান নিয়েই নিখোঁজ হয়ে যায় হাসি। অনেক খোঁজাখুঁজির পর তার সন্ধান পাই। জানতে পারি তার আগের সংসার ও একটি কন্যাসন্তান রয়েছে এবং সে আগের স্বামীর সঙ্গেই আছে। আমার সঙ্গে সব সম্পর্ক অস্বীকার করছে সে।’ একপর্যায়ে আবেগপ্রবণ হয়ে খোকন বলেন, ‘আমি কিছুই চাই না। কেবল আমার সন্তানের স্বীকৃতি চাই। ডিএনএ পরীক্ষা করলেই তো সব প্রমাণ হয়ে যাবে। এদিকে ওয়ারেন্ট জারি হলেও পুলিশ হাসিকে গ্রেফতার করছে না। উল্টো হাসি আমার বিরুদ্ধে ৭ ধারায় মামলা করেছে আদালতে।’
গতকাল এ বিষয়ে কথা হয় হাসির সঙ্গে। তিনি এই প্রতিবেদকের কাছে দাবি করেন, ‘খোকনের সঙ্গে আমার পরিচয় হয় ডেসনিটিতে কাজ করার সময়। সে একটা প্রতারক। আমার টাকা মেরে দেওয়ার জন্যই সে এখন নানা ধরনের নাটক করছে।’ ফখরুদ্দিন ওরফে আকন্দ মামুন বলেন, ‘আমি সাত-আট বছর মালয়েশিয়ায় ছিলাম। মাঝে ২০১২ ও ২০১৪ সালে দেশে এসেছিলাম। ধর্মমতে হাসি আমার স্ত্রী। আমাদের বিয়ের কাবিননানাও রয়েছে। তার অন্যত্র বিয়ে হওয়ার কোনো প্রশ্নই ওঠে না। মাসুমও আমার সন্তান।’ কদমতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী ওয়াজেদ আলী জানান, হাসিকে গ্রেফতারে কয়েক দফা অভিযান চালানো হয়েছিল। তবে তাকে পাওয়া যায়নি।